অন্য অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিকে বাদ দিয়ে সিবিআই শুধু সারদা নিয়ে ‘অতিসক্রিয়’ বলে সোমবারই সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওড়িশার শাসক দল বিজেডি-র এক সাংসদ ও এক প্রাক্তন বিধায়ককে অন্য একটি অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় গ্রেফতার করল সিবিআই। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই রাজ্যের এক প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ককেও। এই তিন জনেই ‘নবদিগন্ত ক্যাপিটাল সার্ভিসেস’ নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
গ্রেফতার হওয়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ধৃত দুই দলীয় নেতা ময়ূরভঞ্জের সাংসদ রামচন্দ্র হাঁসদা এবং কেওনঝড়ের প্রাক্তন বিধায়ক সুবর্ণ নায়েককে সাসপেন্ড করেছেন বিজেডি সভাপতি তথা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। তবে বিজেপি দাবি, খরিয়ারের ধৃত প্রাক্তন বিধায়ক হিতেশকুমার বাগার্টি এখন আর তাদের সদস্য নন। দলের মুখপাত্র সজ্জন শর্মা সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে বলেছেন, “বাগার্টির সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করা হয়নি। সেটা গ্রেফতার হওয়ার অনেক আগের ঘটনা।” কংগ্রেস ও বিজেপি অবশ্য একযোগে নবীনের বিরুদ্ধে দোষীদের আড়াল করার অভিযোগ তুলেছেন। সেই অভিযোগ উড়িয়ে নবীন বলেছেন, “সরকার এ সবের মধ্যে নেই। জঞ্জাল সাফ করতে আমরা যথাসাধ্য করছি।”
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে নবদিগন্ত-র শুরু থেকেই তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রামচন্দ্র হাঁসদা। তখন অবশ্য তিনি ছিলেন এনসিপি-তে। ২০১২ সালে বিজেডি-তে যোগ দেন। গত লোকসভা ভোটে ময়ূরভঞ্জ কেন্দ্র থেকে জেতেন রামচন্দ্র। সূত্রের খবর, গত ৩১ অক্টোবর রাইরংপুরে রামচন্দ্রের বাড়িতে হানা দিয়ে নগদ ২৮ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছিল সিবিআই। মঙ্গলবার সকালে তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখনকার মতো রামচন্দ্র সিবিআই অফিস ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও দুপুরেই ফের কাগজপত্র নিয়ে ফিরে আসেন। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা, ষড়যন্ত্র এবং টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ এনেছে সিবিআই। একই অভিযোগ আনা হয়েছে ধৃত দুই প্রাক্তন বিধায়কের বিরুদ্ধেও।
এ দিন গ্রেফতার হওয়া তিন নেতাই নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করে বলেছেন, তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। এ-ও দাবি করেছেন, এক সময়ে এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ২০১২-য় তাঁরা পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু, সিবিআই জানিয়েছেন, ধৃত নেতাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছিল ২০১৩-য়। গত ২৬ অক্টোবর নবদিগন্তের আরও দুই ডিরেক্টর প্রদীপ পট্টনায়েক এবং কার্তিক পারিদাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ধরা পড়েছিলেন সংস্থাটির সিএমডি অঞ্জন বালিয়ার সিংহ। সূত্রের খবর, ধৃত সিএমডি বলেছেন, সিবিআইয়ের হাতে তিনি যে সব কাগজপত্র তুলে দিয়েছেন, তাতেই প্রমাণ মিলবে বিজেডি ও বিজেপির এই নেতারা তাঁর সংস্থার সঙ্গে ঠিক কতটা জড়িত ছিলেন।
গত শুক্রবারই ‘অর্থ তত্ত্ব’ নামে অন্য একটি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে ওড়িশার বাঁকি-র বিজেডি বিধায়ক প্রভাত ত্রিপাঠিকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তাঁকেও সাসপেন্ড করে দল। সোমবার কল্যাণবাবু যখন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে সারদা নিয়ে ‘অতিসক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলেছিলেন, তখন সিবিআই সূত্রে অন্যান্য অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সারদা কাণ্ডে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের কয়েক জন সাংসদ-নেতাকে জেরা করেছে সিবিআই। বস্তুত, তৃণমূলের এক সাংসদ ও এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত করা হচ্ছে’ বলে সোমবারই আচমকা অভিযোগ করে বসেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অবস্থায় সারদা ছাড়া একটি অন্য সংস্থার সঙ্গে ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে ওড়িশার শাসক-দলের সাংসদ সহ তিন জনের গ্রেফতারির ঘটনা কল্যাণবাবুদের অস্বস্তি আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিল বলে অনেকের মত।
সিবিআই সূত্রের খবর, কলকাতায় সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে এত দিন পর্যন্ত যত নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তার একটি ‘হার্ড ডিস্ক’ বানানো হয়েছে। সেই সব নথি এ বার বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy