পড়শি-নিগমের কৃতিত্বের গল্প শুনে ঝাঁঝিয়ে ওঠেন কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (সিএসটিসি)-র এক কর্তা। তাঁর সাফ কথা, “এসবিএসটিসি করতে পারে, কারণ ৩০০ বাস দিয়ে ওদের হাজার দুয়েক কর্মীর সংসার চালাতে হয়। সিএসটিসি-র ক্ষেত্রে ৩৫০টি বাসে ৫০০০ কর্মী-পরিবারের পেট চলে।” তাঁর যুক্তির সঙ্গে পুরোপুরি একমত অন্য দুই নিগম এনবিএসটিসি এবং সিটিসি-র কর্তারাও!
বাস-পিছু অত্যধিক কর্মী সংখ্যা, চুরি এবং কাজের অনীহার কারণে রাজ্যের কোনও পরিবহণ নিগমই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না গত কয়েক দশকে এটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই অবস্থায় এসবিএসটিসি বিকল্প পথে হেঁটে বাড়তি আয়ের সন্ধান দিতেই এখন পরিবহণ ভবন থেকে অন্যান্য নিগমের অফিস, সর্বত্র যুক্তি, পাল্টা-যুক্তি এবং দোষারোপের পালা শুরু হয়েছে।
নিজেদের ব্যর্থতার কারণ হিসাবে কী যুক্তি দেখাচ্ছে অন্য নিগমগুলি?
পরিবহণ-কর্তাদের মতে, l বিরাট কর্মীবাহিনীকে ঠিক মতো কাজে না লাগানো। l নিগমের অভ্যন্তরে চুরি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ না করা। l বিভিন্ন রুটে বাস চালানোর ক্ষেত্রে উদ্যোগী না হওয়া। এবং l অনেক বেশি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এর ব্যাখ্যা দিয়ে এক পরিবহণ কর্তা জানান, এসবিএসটিসি-তে বাস-পিছু কর্মীর সংখ্যা ৫-৬ জন। অন্য নিগমগুলিতে ১৫-১৬ জন। তা ছাড়া এই নিগমগুলিতে প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি এবং অদক্ষ লোকেদের চাকরিতে ঢুকিয়েছে আগের এবং বর্তমান শাসক দল। তাই সব নিগমেই রোগ মোটামুটি এক হলেও মূলত ওই চারটি কারণে আয় বাড়ানোর পথে এগোতে পারছে না সিএসটিসি-সিটিসি-এনবিএসটিসি।
চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষকেই এসবিএসটিসি-র সাফল্যের মূল কারিগর মানেন পরিবহণ কর্তারা। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের এই বিধায়ক নিগমের দৈনন্দিন কাজকর্মের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সচেতন ভাবে এড়িয়ে চলেন। তাই আউটসোসির্ং করে নিগমের আয় বাড়ানোর পথে তাঁকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু অন্য নিগমগুলির শীর্ষকর্তারা সেই ‘সাহস’ দেখাতে পারছেন না।
প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে শাসক দলের শতকরা একশো ভাগ রাজনৈতিক আধিপত্য রয়েছে, সেখানে বাকি বাধাগুলি কাটাতে অসুবিধা কোথায়? রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী রঞ্জিত কুণ্ডুর কথায়, “সরকারি নিগমগুলিতে কর্মীদের কাজ দেওয়ার যে প্রথা রয়েছে, তা পরিবর্তন করা জরুরি। সেই কাজ করবে কে?”
রাজ্যের বর্তমান পরিবহণ মন্ত্রী এবং সিটিসি ও সিএসটিসি-র চেয়ারম্যান মদন মিত্রের কাছে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর নেই! তাঁর কথায়, “শীঘ্রই সব নিগমগুলিকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হচ্ছে। সেখানে এর উত্তর খোঁজা হবে।” পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, প্রয়োজনে এসবিএসটিসি-র মডেল সব নিগমগুলির ক্ষেত্রে বহাল করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
তবে কি আগামী দিনে অন্যান্য নিগমগুলি কন্ডাক্টর আউটসোর্সিং করে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে বাস চালিয়ে বাড়তি আয়ের পথেই হাঁটবে?
নবান্নের এক কর্তা জানান, এসবিএসটিসি বাদে অন্য তিন নিগম নিয়ে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সিএসটিসি-তে এসবিএসটিসি-র ধাঁচের সংস্কার নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। আয় বাড়াতে এই মুহূর্তে আর কোনও বিকল্পের খোঁজ পাচ্ছে না চূড়ান্ত দুর্দশায় পড়া নিগমগুলি।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy