তিন বছরের মধ্যে দু’বার মনোনীত বোর্ড ভেঙে দিয়েছে রাজ্য সরকার। সংস্থার পরিচালনার জন্য দফায় দফায় বসানো হয়েছে ‘দক্ষ’ প্রশাসকদের। কিন্তু তার পরেও হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতিতে পরিচালন বোর্ড গঠনের জন্য নির্বাচন করা হয়নি। এমনকী, এ বারেও সরকারি প্রশাসককে তড়িঘড়ি সরিয়ে দিয়ে ফের ওই সমবায় সমিতিতে দলীয় বিধায়ক, মেয়র পারিষদ ও কাউন্সিলরদের নিয়ে মনোনীত বোর্ড গঠন করেছে রাজ্য সরকার।
হুগলি নদী জলপথ সমবায় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ ডিসেম্বর রাজ্য সমবায় দফতর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক রাজ্য সমবায় সমিতির যুগ্ম সচিব অজয় গিরিকে নোটিস পাঠিয়ে জানানো হয়, ওই সমবায় পরিচালনার জন্য ১২ জন সদস্যকে মনোনীত করা হয়েছে। তাঁদের নিয়েই গঠিত পরিচালন বোর্ড আগামী ছ’মাস কার্যকর থাকবে। নোটিসে প্রশাসক হিসেবে অজয়বাবুর কার্যকালের মেয়াদও ওই দিনেই শেষ হয়ে গিয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়।
হুগলি নদী জলপথ সূত্রে খবর, যে ১২ জনকে পরিচালন বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন তৃণমূলের উত্তর হাওড়া কেন্দ্রের বিধায়ক অশোক ঘোষ, সাঁকরাইলের বিধায়ক শীতল সর্দার, হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ অরুণ রায়চোধুরী এবং গৌতম চৌধুরী, ৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান গৌতম দত্ত, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনুপ চক্রবর্তী এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পূর্ণেন্দু বসু। এ ছাড়া সমবায় সমিতির নিয়ম মেনে পরিচালন বোর্ডে আরও যে ৪ জনের নাম রাখা হয়েছে, তাঁরা সকলেই সমবায়ের কর্মী।
হুগলি নদী জলপথ সমবায় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সমবায় দফতরের নোটিস হাতে আসার পরেই সমবায় সমিতির অফিসে জরুরি বৈঠকে বসেন ১২ জন মনোনীত সদস্য। সর্বসম্মতিক্রমে অশোকবাবুকে চেয়ারম্যান ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনুপ চক্রবর্তীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়।
গত ২০১১-র মে মাসে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে জুন নাগাদ বাম আমলে তৈরি পরিচালন বোর্ড ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ করে রাজ্য। এক বছর পরে ২০১২ সালে প্রশাসককে সরিয়ে মনোনীত বোর্ড গঠন করে রাজ্য সরকার। ২০১৩ সালে ফের নিজেদের তৈরি মনোনীত বোর্ড ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রশাসককে সরিয়ে ফের মনোনীত বোর্ড গঠন করে রাজ্য।
এ ভাবে বছরের পর বছর নির্বাচন না করে বারবার প্রশাসককে সরিয়ে দিয়ে মনোনীত কার্যকরী বোর্ড গঠন করার ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। ওই সমবায়ের প্রাক্তন সম্পাদক তথা সিপিএম নেতা তারকেশ্বর ওঝা বলেন, “আগের বোর্ড বেআইনি ভাবে তৃণমূলের নেতাদের সদস্য পদ দিয়েছে। যা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছে। এর পরে তাঁদের নিয়েই পরিচালন সমিতি গঠন করা হল। এই বোর্ড অবৈধ।”
বিজেপির যুব মোর্চার হাওড়া জেলা সভাপতি উমেশ রাই-এর বক্তব্য, “হুগলি নদী জলপথ সোনার ডিম পাড়া হাঁস। আগে সিপিএম খেয়েছে। এখন তৃণমূল খাচ্ছে। তাই বছরের পর বছর নির্বাচন না করে মনোনীত বোর্ড তৈরি করছে। আমরা চাই প্রশাসক বসিয়ে অবিলম্বে নির্বাচন হোক। না হলে বাঁচানো যাবে না ওই সমবায়কে।”
যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী জ্যোর্তিময় কর। তিনি বলেন, “বিরোধীরা যা বলছে, তা ঠিক নয়। সমবায়ের গোড়াতেই গলদ। সদস্য সংখ্যা খুবই কম। অত বড় সমবায়ে মাত্র ১২০ জন সদস্য নিয়ে নির্বাচন করা ঠিক নয়। এ জন্য ৬ মাস সময় নিয়েছি, সদস্য সংখ্যা আরও বাড়বে।”
কিন্তু আগামী ছ’মাসে সদস্য না বাড়লে? মন্ত্রী বলেন, “তখন ১২০ জন সদস্য নিয়েই নির্বাচন করা হবে।”
জলপথের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উত্তর হাওড়ার বিধায়ক অশোকবাবু বলেন, “আমাদের লক্ষ্য, যেমন করে হোক ছ’মাসের মধ্যে নির্বাচন করা। তা হলেই বিরোধীদের জবাব দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy