Advertisement
০৮ মে ২০২৪

সমাবর্তনের চিঁড়ে ভেজাতে আর্জির পথে পার্থ

বিতর্কিত মন্তব্য করে বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি ঘোরালো করে দিয়েছিলেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। এতটাই যে, ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক সংগঠন জুটা-কে তা ফের আন্দোলনমুখী করে তুলেছিল। এই অবস্থায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন পর্ব যাতে ভালয় ভালয় মিটে যায়, তার জন্য শেষ বেলায় আসরে নামলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

বিতর্কিত মন্তব্য করে বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি ঘোরালো করে দিয়েছিলেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। এতটাই যে, ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক সংগঠন জুটা-কে তা ফের আন্দোলনমুখী করে তুলেছিল। এই অবস্থায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন পর্ব যাতে ভালয় ভালয় মিটে যায়, তার জন্য শেষ বেলায় আসরে নামলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

শিক্ষামন্ত্রী শুক্রবার ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে জানান, সমাবর্তন ছাত্রজীবনে এক বারই আসে। তাই তাতে যাওয়া বা না-যাওয়ার ব্যাপারে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তবে এর পরেও যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা ২৪ ডিসেম্বরের সমাবর্তনে যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

আচার্য-রাজ্যপালের প্রস্তাব, যে-সব পড়ুয়া সমাবর্তন অনুষ্ঠান বয়কট করবেন, তাঁদের ডিগ্রি-শংসাপত্র ডাক মারফত পাঠানো হবে। আর সেগুলির উপরে স্ট্যাম্প-সহ লেখা থাকবে, ওই পড়ুয়া সমাবর্তন বয়কট করেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের এই প্রস্তাবের পরে যাদবপুরের পরিস্থিতি ফের ঘোরালো হয়ে ওঠে। রাজ্যপাল আদৌ এই ধরনের সুপারিশ করতে পারেন কি না বা ওই সুপারিশের কোনও আইনগত ভিত্তি আছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। আচার্যের এই মন্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন আখ্যাও দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যদের কেউ কেউ।

শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য রাজ্যপালের ওই মন্তব্যের ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ দিন তিনি বলেন, “বিক্ষোভ তো সারা বছরই দেখানো যেতে পারে। কিন্তু সমাবর্তন ছাত্রজীবনে এক বারই আসবে। সেখানে শংসাপত্র নেওয়া মর্যাদার ব্যাপার। তাই ছাত্রছাত্রীদের বলব, সমাবর্তনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। আর তা হলেই আমি খুশি হব।”

শিক্ষামন্ত্রীর আবেদনে নতুন করে কোনও বিতর্ক তৈরি হয়নি ঠিকই। তবে ছাত্রছাত্রীরা ওই আবেদনে কান দিচ্ছেন, এমনও প্রমাণ মিলছে না। অম্লান হাজরা নামে আন্দোলনকারী এক ছাত্রের কথায়, “পুলিশের কাছে মার খাওয়াটা আমাদের পক্ষে মর্যাদার ছিল না। উপাচার্যই সেই ঘটনার জন্য দায়ী। তাই তাঁর উপস্থিতিতে সমাবর্তনে যাওয়াটা আমাদের কাছে মর্যাদার নয়।” সোমবার সাধারণ সভার বৈঠকে সমাবর্তনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ছাত্রছাত্রীরা। তবে তার আগে সমাবর্তন বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে তাঁরা সরছেন না।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তথা এমেরিটাস অধ্যাপক অশোকনাথ বসুর মতে, মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমে না-বলে ছাত্রছাত্রীদের ডেকে কথা বললে একটা সমাধানসূত্র বেরোতে পারে। আর এক এমেরিটাস অধ্যাপক, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, “আগেই ছাত্রছাত্রীদের আলোচনায় ডেকে কথা বললে সমস্যা মিটতে পারত। এখন বারবার আবেদন করে কী লাভ! ক্রমাগত ছাত্রছাত্রীদের উত্তেজিত করে তুলে এখন তাদের বুঝিয়ে কী হবে!”

শিক্ষামন্ত্রী কয়েক দিন আগেও সংবাদমাধ্যম মারফত আলোচনায় বসার জন্য ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরাসরি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ না-করে সংবাদমাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী যে-বার্তা দিয়েছিলেন, ছাত্রছাত্রীরা সেটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। শুক্রবারেও তাঁর আবেদনে শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কতটা হবে, সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

কাজ হোক না-হোক, মন্ত্রীর ভূমিকা ছাত্রছাত্রীদেরই একাংশের নজর কেড়েছে। তাঁদের কথায়, “শিক্ষামন্ত্রী তো অন্তত আবেদন জানিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ তো সেটুকুও করছেন না!”

যাঁকে নিয়ে যাদবপুরে গোলমাল, সেই উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করেন। শুক্রবার এ ব্যাপারে বিধাননগর কমিশনারেটে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে একটি গাড়ি তাঁর গাড়ির পিছনে ধাওয়া করে, ভিতর থেকে চার যুবক চেঁচিয়ে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করেন বলে উপাচার্যের অভিযোগ। শিক্ষামন্ত্রীর এ দিনের আবেদনের ব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে টেলিফোন করা হলে অভিজিৎবাবু তা কেটে দেন। জবাব মেলেনি এসএমএসেরও।

এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা বলেন, “এমনিতেই সমাবর্তনের তোড়জোড় শুরু করতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। আর বেশি সময় নেই। তাই আপাতত সুষ্ঠু ভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনেই মন দিয়েছেন উপাচার্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE