নির্দিষ্ট সময়ের ১০ দিন পরে বুধবার দক্ষিণবঙ্গে চলতি মরসুমের প্রথম ইনিংস শুরু করল বর্ষা। ৫৩ শতাংশ ঘাটতি ঘাড়ে নিয়ে! এত ঘাটতি মিটিয়ে শেষ পর্যন্ত বর্ষা রাজ্যে খাদ্যশস্যের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নও এ দিন থেকেই উঠতে শুরু করেছে।
এ বছর শীতের মরসুম থেকেই দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের থেকে অনেক কম। এপ্রিল, মে, জুন মাসে একের পর এক তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করেছে। বৃষ্টির ঘাটতি বাড়তে বাড়তে জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহের গোড়াতেই ৫৩ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। এ দিন যে মৌসুমি অক্ষরেখা দক্ষিণবঙ্গে ঢুকেছে, তা-ও খুব একটা শক্তিশালী নয়। তাই বৃষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। গোটা বর্ষার মরসুমে এই ঘাটতি মিটবে বলেও খুব একটা আশাবাদী নন আবহবিদেরা।
মৌসম ভবনের এক আবহবিদ জানান, এ বার এপ্রিল ও জুনে জারি করা বর্ষার পূর্বাভাসে আশার কথা খুব একটা নেই। সারা দেশে এ বার বর্ষা তার স্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছবে না। এই বার্তা ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রককে জানিয়ে দিয়েছে মৌসম ভবন। ২০০৯ সালের পরে ফের দেশে ঘাটতি বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এ বার। সেই প্রেক্ষিতে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রককে।
দক্ষিণবঙ্গে যে চেহারা নিয়ে বর্ষা ঢুকেছে তাতে সব এলাকায় সমান বৃষ্টিপাত হবে না বলেই জানিয়েছেন আবহবিদেরা। আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, বঙ্গোপসাগরের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার ফলে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তুলনায় পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে বৃষ্টি কম হবে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাত বাড়বে। বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্ত কিংবা নিম্নচাপ বর্ষাকে সক্রিয় করতে সাহায্য করবে।
এ বার বর্ষা পরিস্থিতির নিরিখে কৃষি-আবহবিদদের একাংশ বলছেন, বৃষ্টির ঘাটতি বাড়লে কৃষি উৎপাদনের উপরে তার প্রভাব পড়বে। পরিস্থিতি যে ঘোরালো হতে পারে, তা বুঝেছে কেন্দ্রও। পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষি, গণবণ্টন ও সার মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন। সেই
বৈঠকে দেশের সর্বত্র আগাম শস্যভাণ্ডার মজুত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। দেশে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা অনেকের।
জুন মাসের বৃষ্টির এই ঘাটতি নিয়ে আবার এখনই চিন্তিত নন আবহবিদদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, গত বছর সারা দেশেই ভাল বৃষ্টি হয়েছে। তার ফলে জলাধার ও ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার পর্যাপ্ত রয়েছে। এ বার পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলেও সেই জলাধার ও ভূগর্ভস্থ জল থেকে সেচের কাজ চালানো সম্ভব। আবহাওয়া দফতরের একটি সূত্রের দাবি, ২০০৯ সালে দেশে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু ২০০৮ সালে ভাল বৃষ্টি হওয়ার জন্য শস্য উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়েনি।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টিতে গড়ে ঘাটতি থাকলেও জুন মাসের গোড়া থেকে হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো কোনও কোনও জেলায় স্থানীয় ভাবে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। আমন ধানের বীজতলা তৈরিতেও আপাতত সমস্যা নেই। এই প্রসঙ্গে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলছেন, আমন ধানের চারা রোপণের সময় কেমন বৃষ্টি হয়, তার উপরেই উৎপাদনের বড় একটা অংশ নির্ভর করছে। “জুলাইয়ে চারা রোপণ শুরু হয়। ওই সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না মিললে সমস্যা হবে,” মন্তব্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকের।
জুলাই-অগস্টে কেমন বৃষ্টি হবে, তা নিশ্চিত বলতে পারছেন না আবহাওয়া দফতরের কর্তারা। তবে তাঁদের ব্যাখ্যা, দেশের নিরিখে এ বছর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (এ রাজ্যকেও যে এলাকার মধ্যে ধরে মৌসম ভবন) ভাল বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। যদিও অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে, একটি অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলেও ওই অঞ্চলেরই কোনও রাজ্যে ঘাটতি বৃষ্টি রয়েছে। “আসলে সব ক’টি রাজ্যের মোট বৃষ্টিকে গড় হিসেবে ধরা হয়। তাই ভাল-খারাপ মিলে অনেক সময়ই বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হয়ে যায়,” মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy