মেনস্ট্রুয়াল কাপ। ছবি: সংগৃহীত।
মুম্বই, দিল্লি, পুণে, বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদের মতো জায়গায় পরিবর্তনটা এসেছিল বছর তিনেক আগেই। দেরিতে হলেও এত দিনে আধুনিক বিকল্পের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন এ রাজ্যের মহিলাদের একাংশ। ঋতুকালীন প্রয়োজন মেটাতে অনলাইনে ‘মেনস্ট্রুয়াল কাপ’ কিনে ব্যবহার করছেন এঁরা।
শুধু কলকাতার বাসিন্দাই নন, শিলিগুড়ি, বর্ধমান, বহরমপুর, দুর্গাপুরের মতো বিভিন্ন জেলা শহরের মহিলারাও এই তালিকায় রয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠই শিক্ষিতা তরুণী। পড়ুয়া বা কর্মরতা।
মেনস্ট্রুয়াল কাপ কী? জিনিসটি রবার বা সিলিকনের তৈরি, অনেকটা ছোট ফানেল-এর মতো দেখতে। এটি ভাঁজ করে যোনিপথ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। তার পরে সেটা ছাতার মতো খুলে গিয়ে জরায়ুমুখে আটকে যায়। ঋতুস্রাবের সময় এর মধ্যেই জমে ঋতুকালীন রক্ত। ৮-৯ ঘণ্টা পরপর সেই ফানেল বা কাপ বের করে পরিষ্কার করে আবার জরায়ুমুখে ঢোকানো যায়। নির্মাতা সংস্থাগুলির দাবি, ঠিকঠাক ব্যবহার করলে এক-একটি কাপ ৮-১০ বছর চলতে পারে। দাম মোটামুটি ৪০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো। বিদেশি সংস্থার তৈরি কাপ ২ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা মতো দাম পড়ে।
আপাতত ভারতের ৪-৫টি সংস্থা এই কাপ তৈরি করছে। সংস্থাগুলির তরফে রেশমী রাজেশ, সাহতাজের মতো অনেকে জানিয়েছেন, গত এক-দেড় বছর হল পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের বিক্রি বাড়ছে। মাসে ২৫০টি কাপ বিক্রি হলে অন্তত তার ১২-১৩টি কিনছেন পশ্চিমবঙ্গের মহিলারা। তাঁদের দাবি, কাপ ব্যবহার করলে বারবার ন্যাপকিন কেনা-বদলানো-ফেলার ঝামেলা বা কাপড়ে-বিছানায় দাগ লাগার ভয় নেই। অনেকের মতে, বর্জ্য তৈরি না হওয়ায় পরিবেশের পক্ষেও এটা ভাল। ভারতের মতো দেশে যেখানে মেয়েদের ‘ভার্জিনিটি’ বা সতীত্ব নিয়ে বাড়াবাড়ির অন্ত নেই, সেখানে অবিবাহিতা তরুণীরা ‘হাইমেন’ বা সতীচ্ছদ রক্ষার পরোয়া না করে ‘মেনস্ট্রুয়াল কাপ’ ব্যবহার করলে সেটা যথেষ্ট সাহসী পদক্ষেপ বলেও মনে করছেন সমাজবিদ এবং নারী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অনেকে। যদিও তাঁরা একই সঙ্গে মনে করাচ্ছেন, এ দেশে এখনও সিংহভাগ মেয়ের কাছে স্যানিটারি ন্যাপকিনই পৌঁছে দেওয়া যায়নি। সেখানে মেনস্ট্রুয়াল কাপ-এর ব্যবহার একটি বিশেষ শ্রেণির বাইরে হওয়া মুশকিল।
আরও পড়ুন: দিনমজুরের জীবনে আলো ডাক্তার প্রদীপ
আবার স্ত্রীরোগ-বিশেষজ্ঞেরাও মুক্ত কণ্ঠে খুশি হতে পারছেন না। তাঁদের চিন্তা, ‘হাইজিন’ বা পরিচ্ছন্নতা নিয়ে। ভারতে গরম, আর্দ্রতা ও ধুলোয় এমনিতেই সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। সেখানে বারবার আঙুলের সাহায্যে মেনস্ট্রুয়াল কাপ যোনিপথে ঢোকানো এবং বের করা কতটা নিরাপদ, সে প্রশ্ন থাকছে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জিত চক্রবর্তীর মতে, ‘‘যদি মহিলারা হাত ও জরায়ু যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন না রাখেন তবে সংক্রমণ নিশ্চিত।’’ ঠিক এই কারণেই ভারতে ‘ট্যাম্পুন’ জনপ্রিয় হয়নি বলে মত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুসুপ্তা চৌধুরীও মনে করছেন, ‘‘মেনস্ট্রুয়াল কাপ সাবান দিয়ে ধোওয়া যাবে না, কারণ জরায়ুতে সাবান থেকে সংক্রমণ হয়। প্রতিবার ব্যবহারের পর গরম জলে ফোটাতে হবে। সেটা সবাই মেনে চলতে পারবেন তো? সামান্য রক্ত থেকে গেলেই কিন্তু ব্যাকটেরিয়া-ফাঙ্গাসের বাড়বাড়ন্তের আশঙ্কা থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy