Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চরকায় স্বপ্ন বোনেন অপর্ণা, মাম্পিরা

সরকারি নথি বলে, এ জেলায় তাঁতির সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। তার সঙ্গে রং, নলি, ববিন পাকানোর কাজ ধরলে সে সংখ্যা পৌঁছে যাবে  লাখখানেকে। তার মধ্যে তাঁত বোনার কাজ মূলত পুরুষেরা করলেও তার জোগাড় দিতে হয় বাড়ির মেয়েদেরই।

সুতো কাটায় ব্যস্ত। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

সুতো কাটায় ব্যস্ত। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

কাকভোরে উঠে সংসারের কাজ। তারপরে চরকায় সুতো কাটা, রং করা, রোদে শুকোতে শুকোতে দুপুর পার। এক ফাঁকে ভাত-তরকারি রেঁধে আবার শুরু তাঁত বোনা। রাত অবদি তাঁতের খটাখট শব্দে শাড়ি, গামছার সঙ্গে ভাল থাকার স্বপ্নও বুনে চলেন ওঁরা।

সরকারি নথি বলে, এ জেলায় তাঁতির সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। তার সঙ্গে রং, নলি, ববিন পাকানোর কাজ ধরলে সে সংখ্যা পৌঁছে যাবে লাখখানেকে। তার মধ্যে তাঁত বোনার কাজ মূলত পুরুষেরা করলেও তার জোগাড় দিতে হয় বাড়ির মেয়েদেরই। পূর্বস্থলী, সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রাম এলাকার মোটামুটি যে কোনও বাড়িতে ঢুকলেই দেখা যায়, সুতো কাটা, রং করা ছাড়াও শাড়ি বোনার পরে অতিরিক্ত সুতো কাটা, মাড় দেওয়া, শুকোনো, ভাঁজ করায় ব্যস্ত স্কুলপড়ুয়া কিশোরী থেকে বয়স্করা। বৃদ্ধারা বেশির ভাগ বসে বসে নলি পাকানো, ববিনে সুতো ভরার কাজ করেন। আবার সংসার সামলে তাঁতের ক্লাস্টারগুলিতেও কাজ করেন মহিলারা। রংবাহারি, নানা নকশার শাড়ি বোনা, কোন সুতোর শাড়িতে আরাম বেশি তা-ও গড়গড়িয়ে বলেন তাঁরা।

তবে রোজকার কাজের মধ্যে নিজেদের জন্যও যে একটা বিশেষ দিন হতে পারে, তা জানেন না তাঁদের অনেকেই। নারী দিবসের কথা শুনে মধ্য শ্রীরামপুরের অপর্ণা দেবনাথ বলে ওঠেন, ‘‘নারী দিবস আবার কী!’’ তাঁর কথায়, ‘‘আলাদা করে নিজেকে নিয়ে ভাবিনি কখনও। স্বামী, ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসারে নিজের জন্য আলাদা কিছু হয় না কি! ওরা ভাল থাকলেই আমি খুশি।’’ অপর্ণা জানান, পাওয়ারলুমের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে গিয়ে হাতে বোনা তাঁতের বাজার পড়েছে। নকশাতেও নতুনত্ব না আনলে মন ভরে না মহাজনদের। তাই মাথা খাটিয়ে স্বামী, স্ত্রী মিলে ভাবেন শাড়ি কী ভাবে আরও সুন্দর করা যায়।

আর এক জন মাম্পি চক্রবর্তীর আবার দাবি, ‘‘একটা শাড়ি বুনতে দু’দিন লাগে। তারপরে হাতে পাই তিনশো টাকা। মাসে ক’টা শাড়ির আর বরাত পাই! সংসার আর চলছে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের খেটে খাওয়া সংসারে নারী দিবস হয় না।’’

তবে তার মধ্যেও অনেক সংস্থা তাঁদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে। ক্লাস্টারে নানা অনুষ্ঠান হয়। পাশে থাকার আশ্বাস দেয় প্রশাসন। অপর্ণা, মাম্পিরাও সুতো কাটতে কাটতে অনুষ্ঠানের আওয়াজ শোনেন, কখনও বা যান। সেটাই তাঁদের নারী দিবস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE