রাস্তায়, বাজারে-শপিং মলে, স্টেশনে এমন মাইন বিস্ফোরণ ঘটায়, জানা ছিল। কিন্তু এ এমন এক আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস), যা জলেও অবাধে ফাটবে। সাগরে ওই আইইডি-র বিস্ফোরণে গোটা জাহাজ উড়ে যেতে পারে। আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আরব সাগরে ঘাঁটি গেড়ে যুদ্ধরত মার্কিন নৌসেনার এখন বড় ভয়ের কারণ ওই ধরনের বোমা। মার্কিন নৌবাহিনী যার নাম দিয়েছে সি-আইইডি।
ভারতে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ও মাওবাদীরা আইইডি দিয়ে অসংখ্য বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। সে সব ফেটেছে রাস্তায়, ট্রেনে, শপিং মলের মতো জায়গায়--- অর্থাৎ মাটিতে। জলে নয়। উত্তর-পূর্ব ভারতের নানা জঙ্গি সংগঠন কিংবা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-ও নাশকতা ঘটাতে যে আইইডি ব্যবহার করে, তা-ও জলে কার্যকরী নয় বলে বিস্ফোরক-বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
বাহরাইনে মার্কিন নৌঘাঁটিতে গিয়ে জানা গেল সি-আইইডি-র কথা।
আমেরিকার পঞ্চম নৌবহর তথা মার্কিন নৌবাহিনীর সেন্ট্রাল কম্যান্ডের সদর দফতর পারস্য উপসাগরের পশ্চিম উপকূলের এই দ্বীপরাষ্ট্রে। পঞ্চম নৌবহরের অন্তর্গত চারটি জাহাজের কাজ শুধু এই ধরনের সি-আইইডি খুঁজে বার করে সেগুলি নিরাপদে সরানো বা ধ্বংস করা। তাদের বলা হয় ‘মাইন স্যুইপার’। জাহাজ চারটির নাম: ডিভাস্টেটর, ডেক্সট্রনস, সেন্ট্রি ও গ্ল্যাডিয়েটর। সামরিক পরিভাষায় নৌসেনার এই কাজের নাম, ‘মাইন কাউন্টার মেজার’। উদ্দেশ্য, সমুদ্রে মার্কিন সেনার ঝুঁকি যথাসম্ভব কমানো।
আজ ‘সেন্ট্রি’-র ডেকে দাঁড়িয়ে টাস্ক ফোর্স ফিফটি টু-র কম্যান্ডার, কমোডর রিচার্ড হেজ বললেন, “সমস্যা সামরিক মাইন নিয়ে নয়, ইম্প্রোভাইজড মাইন নিয়ে। জঙ্গিরাই এই মাইন তৈরি করতে পারে। খুব কম খরচে বানানো সম্ভব।” মার্কিন বিদেশ দফতরের আমন্ত্রণে বাহরাইনে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটিগুলো সফরে আসা আনন্দবাজার-সহ চারটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কমোডর রিচার্ড বলেন, “আপনাদের দেশের পুলিশ-গোয়েন্দাদের জ্বালিয়ে মারছে এই আইইডি-র আতঙ্ক। সাগরে এক আতঙ্ক আমাদেরও।”
মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে খবর, আইএস এবং তাদের সহযোগীরা যে কোনও সময়ে এই সি-আইইডি দিয়ে মার্কিন নৌসেনার উপরে আঘাত হানতে পারে। কয়েকটি দেশ নাকি এ ব্যাপারে জঙ্গিদের সাহায্য করছে। তাই ঝুঁকি নিতে নারাজ হোয়াইট হাউস।
এখনও সি-আইইডি হামলা না হলেও টহলদারির পাশাপাশি নিয়মিত ‘মক ড্রিল’ করছে ‘সেন্ট্রি’-রা। তাদের না জানিয়ে নৌসেনা মাইনগুলো জলে রাখে আর সেগুলো খুঁজে বার করতে হয় নির্দিষ্ট সময়ে। এই কাজে লাগানো হচ্ছে ‘সিফক্স’ নামে আধুনিক প্রযুক্তির বিশেষ যন্ত্রকে।
সম্প্রতি মহড়ায় ‘সেন্ট্রি’ চার-পাঁচ ঘণ্টায় ৭টি মাইন খুঁজে পেয়েছে। ‘সেন্ট্রি’-তে ১০০ নৌসেনার কম্যান্ডিং অফিসার ৩৬ বছরের এক তরুণী। লেফটেন্যান্ট কম্যান্ডার জেনিস পোলার্ড। নৌবাহিনীতে আছেন সাড়ে তেরো বছর। টেক্সাসের এই তরুণী এত সুন্দরী যে মনে হয়, তিনি সত্যি সেনা নন, স্রেফ অভিনয় করছেন। হলিউড গেলে নাম করতেন! হাইস্কুলে পড়াকালীন একটি কোর্স করার সময়ে জেনিসের ইচ্ছে হয়, নৌবাহিনীতেই চাকরি করবেন। সাত ও দশ বছরের দুই কন্যার জননী বললেন, “কাজটা অসম্ভব উপভোগ করি।”
জেনিসের স্বামী কুইন্টিন পোলার্ড কিন্তু সেনা অফিসার নন, সাধারণ সরকারি অফিসার। জেনিসের কথায়, “ঘরের কাজ, মেয়েদের সামলানো ও করে হাসিমুখে।” সকলে থাকেন বাহরাইনে। এই চাকরিতে স্বামীর আপত্তি নেই? জেনিস বলেন, “দূর, আমরা সেই হাইস্কুল থেকে প্রেমিক-প্রেমিকা। আঠারো বছরে বিয়ে। কুইন্টিন সব রকম সহযোগিতা করে।”
এক চিলতে হাসি নিয়ে অতলে সি-আইইডি খোঁজার কাজ আনন্দে চালিয়ে যান জেনিস পোলার্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy