Advertisement
E-Paper

মাঝরাতে আগুনে পুড়ে ছাই লন্ডনের বহুতল, মৃত অন্তত ১২, নিখোঁজ বহু

সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছে না লন্ডনের, সামগ্রিক ভাবে ব্রিটেনেরই। পর পর জঙ্গি হামলা, ভোটের পরে চরম জটিলতা তো ছিলই। এ বার বড়সড় ধাক্কা দিল গ্রেনফেল টাওয়ারের বিধ্বংসী আগুন।

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ০৩:৩৭
বিধ্বংসী: রাত পেরিয়ে ভোর। তখনও জ্বলছে ২৪ তলা গ্রেনফেল টাওয়ার। বুধবার সকালে পশ্চিম লন্ডনে।  ছবি: এএফপি

বিধ্বংসী: রাত পেরিয়ে ভোর। তখনও জ্বলছে ২৪ তলা গ্রেনফেল টাওয়ার। বুধবার সকালে পশ্চিম লন্ডনে। ছবি: এএফপি

মহানগরের মধ্যিখানে দাউদাউ করে জ্বলছে, জ্বলতে জ্বলতে খাক হয়ে যাচ্ছে একটা আস্ত চব্বিশ তলা বাড়ি। ঠিক যেন কোনও হলিউডি হরর ছবির দৃশ্য!

সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছে না লন্ডনের, সামগ্রিক ভাবে ব্রিটেনেরই। পর পর জঙ্গি হামলা, ভোটের পরে চরম জটিলতা তো ছিলই। এ বার বড়সড় ধাক্কা দিল গ্রেনফেল টাওয়ারের বিধ্বংসী আগুন। নটিং হিলের কাছে ল্যাটিমার রোড এলাকার ২৪ তলা ওই আবাসনে মঙ্গলবার মাঝরাতের অগ্নিকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত বারো জনের মৃত্যুর খবর জানা গিয়েছে। সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা প্রশাসনের। আহতদের মধ্যে কুড়ি জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ৭০ জনের। আবাসনটিকে প্রায় গিলে খেয়েছে লেলিহান শিখা। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল বাহিনীর ৪০টি ইঞ্জিন এবং দু’শো কর্মীর ঘাম ছুটে গিয়েছে। ভোরের আলো ফোটার পরেও দেখা গিয়েছে, দাউদাউ জ্বলছে গ্রেনফেল টাওয়ার। বুধবার সকালে দমকলকর্মীরা জানিয়েছেন, আবাসনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারা যায়নি। কত মানুষ ভিতরেই দম আটকে প্রাণ হারিয়েছেন, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত একটা নাগাদ তিন তলায় প্রথম আগুন লাগে বলে জানিয়েছেন দমকল কর্মীরা। কারও কারও দাবি, একটি ফ্ল্যাটে রেফ্রিজারেটর ফেটে শর্ট সার্কিটের জেরেই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি পুলিশ। মাঝরাতের ওই সময়টা অধিকাংশ বাসিন্দাই শুয়ে পড়েছিলেন। ফলে বুঝতেই খানিক সময় পেরিয়ে যায়। উপরন্তু ১২০টি ফ্ল্যাটের ওই আবাসনে আগুন লাগার পরে কোনও বিপদসঙ্কেত শুনতে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন বাসিন্দাদের কেউ কেউ। দমকলের কাছে খবর যাওয়ার ছ’মিনিটের মধ্যে তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আগুন যে এত মারাত্মক চেহারা নেবে, ভাবতে পারেননি দমকলের লোকজনও। তাঁরা বলছেন, গোড়ার দিকে আগুনের আঁচ এতটাই বেশি ছিল যে সাহায্য করা তো দূরে থাক, আটকে থাকা লোকজনের দিকে এগোনোই মুশকিল হয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছেন। কেউ কেউ ছুড়ে দিয়েছেন কোলের শিশুকেও। অনেক ফ্ল্যাট থেকে বাসিন্দারা বিছানার চাদর জুড়ে জুড়ে দড়ি তৈরি করে নেমে এসেছেন নীচে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আগুন থেকে গা বাঁচিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন খুব কম লোকজন।

আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকল। ছবি: এএফপি

পশ্চিম লন্ডনে এই টাওয়ার ব্লকটির আশপাশে প্রচুর আবাসন, অফিস, শপিং মল রয়েছে। গোটা বহুতলটি আগুনে যে ভাবে ছারখার হয়ে গিয়েছে, তাতে প্রশাসনের আশঙ্কা, গোটা কাঠামোটাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে না পড়ে! এমনিতেই দেখা গিয়েছে, আগুনের গ্রাসে বহুতলের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গিয়ে হলকার মতো ছিটকে এসেছে নীচের দিকে। তাই গোটা আবাসনটাই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন।

১৯৭৪ সালে নির্মিত এই বহুতলটি অবশ্য কোটি টাকা খরচ করে সংস্কার করা হয়েছিল মাত্র দু’বছর আগে। কিন্তু এখানকার অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই বাসিন্দারা অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন। সাম্প্রতিক সংস্কারেও সে দিকটিতে নজর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের একটি অংশের মতে, আবাসন সুন্দর করে সাজাতে গিয়ে এমন কিছু নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছিল যা অতিমাত্রায় দাহ্য। তাই কি আগুন এত ভয়াবহ আকার নিল? পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে স্পষ্ট হবে।

London Grenfell Tower Fire Deaths লন্ডন গ্রেনফেল টাওয়ার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy