২০০৩ সালে সংবাদপত্রের একটি প্রতিবেদনে বিদ্যাধর জানতে পারেন, পাকিস্তানের লাহোর জেলে ঠাঁই হয়েছে তাঁর বাবার। প্রতীকী ছবি।
বাবা এখনও আছেন, এই আশা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় ওড়িশার ভদ্রক জেলার বিদ্যাধর পত্রীকে। যাতে ভর করে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে পাকিস্তানের জেল থেকে বাবার মুক্তির আবেদন করেন তিনি। যদিও, একই সঙ্গে খোঁচা মারে আশঙ্কা, হয়তো বাবা আর বেঁচে নেই। অথবা সাকিন-পরিচয় ভুলে সৈয়দ মুজতবা আলি রচিত ‘৪৫ নম্বর কয়েদি’-র মতো কারাগারকেই ঘর বানিয়ে নিয়েছেন।
সালটা ১৯৬৫, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ তখন তুঙ্গে। বিদ্যাধরের বাবা আনন্দ পত্রী বেঙ্গল ডিফেন্স রেজিমেন্টের সৈনিক। যুদ্ধের মাঝেই নিখোঁজ হলেন তিনি। তার পর কেটে গেল তিরিশ বছরেরও বেশি সময়। ২০০৩ সালে সংবাদপত্রের একটি প্রতিবেদনে বিদ্যাধর জানতে পারেন, পাকিস্তানের লাহোর জেলে ঠাঁই হয়েছে তাঁর বাবার। সেই শুরু, তার পর থেকে প্রশাসনের কোনও দরজায় করাঘাত করতে বাকি রাখেননি আকুল ছেলে। লাভ হয়নি, তবে আশাও ছাড়েননি। সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরেও।
বিদ্যাধরের বয়স এখন ৬৫ বছর। বাবার মুখ তাঁর মনে পড়ে না সে ভাবে। তবে এটা জানেন, আনন্দ যদি বেঁচে থাকেন তবে তাঁর বয়স এখন হবে ৮৮ বছর। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে সেনায় যোগ দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। ’৬৫ সালের যুদ্ধের পরে আর ফেরেননি। ২০০৩ সালের আগে তাঁরা জানতেনও না কোথায় আছেন আনন্দ। বিদ্যাধরের দাবি, “২০০৩ সালেও যদি বাবা ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরতেন। তবে আমাদের সঙ্গে বেশ অনেকটা সময় কাটাতে পারতেন। এখন জানিনা তিনি বেঁচে আছেন কি না। আমার আবেদন, যদি বেঁচে না-ও থাকেন, অন্তত মৃত্যুর শংসাপত্রটি যেন আমরা পাই।” পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান, ২০০৭ সালে পাকিস্তানের প্রশাসন আনন্দকে সাধারণ ভারতীয় নাগরিক হিসেবে মুক্তি দিতে চেয়েছিল। ভারত চেয়েছিল সেনা হিসেবে তাঁর মুক্তির সম্মান। তাতে পাকিস্তান রাজি না থাকায় ফের আনন্দের ঠাঁই হয় জেলের অন্ধকারে। এখন বিদ্যাধর চান, তাঁর বাবা যেন স্বাধীনতা সংগ্রামীর মর্যাদা পান।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী উত্তম রায় এ বিষয়ে জানান, ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধেও সেনা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আনন্দ। প্রায় ৫৮ বছর ধরে পাকিস্তানের জেলে আটক তিনি। বিদ্যাধরকে সঙ্গে নিয়ে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও দরবার করেছিলেন তাঁরা। সেই মর্মে আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে পত্রীপরিবারের তরফে।
এখন শুধু অপেক্ষা। যুদ্ধ ও বৈরীতার ফলে যে মানুষটা পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন, তাঁর ঘরে ফেরার আশায় এখনও আকুল তাঁর ছেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy