Advertisement
০৯ মে ২০২৪

বাংলাদেশে পুরোহিতকে কুপিয়ে খুন, সতর্ক এ রাজ্য

বাংলাদেশের ঝিনাইদহে এক পুরোহিতকে খুনের এক মাসের মধ্যে শুক্রবার একই ভাবে কুপিয়ে খুন করা হল আর একটি মন্দিরের সেবায়েতকে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এ ধরনের হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলেই মনে করছে— যার উদ্দেশ্য নয়াদিল্লির সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সৌহার্দ্য নষ্ট করা। একই সঙ্গে এই ভাবমূর্তি তুলে ধরা যে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে হাসিনা সরকার ব্যর্থ।

এই সেই পুরোহিত।

এই সেই পুরোহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৫
Share: Save:

বাংলাদেশের ঝিনাইদহে এক পুরোহিতকে খুনের এক মাসের মধ্যে শুক্রবার একই ভাবে কুপিয়ে খুন করা হল আর একটি মন্দিরের সেবায়েতকে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এ ধরনের হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলেই মনে করছে— যার উদ্দেশ্য নয়াদিল্লির সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সৌহার্দ্য নষ্ট করা। একই সঙ্গে এই ভাবমূর্তি তুলে ধরা যে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে হাসিনা সরকার ব্যর্থ। বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনার ফলে পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে বিঘ্নিত না-হয়, প্রশাসন ও পুলিশকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গরিব মানুষের ওপর এ ধরনের আক্রমণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সে দেশের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য ও বিশিষ্ট জনেরাও।

শুক্রবার নিহত শ্যামানন্দ দাস (৫০) মধুপুরের কাস্টসাপরা রাধামদন গোপাল মঠের দেখাশোনা করতেন। মোটরসাইকেলে চড়ে আসা তিন দুষ্কৃতী ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারে কাকভোরে ফুল তুলতে বেরোনো হতদরিদ্র সেবাইতের ঘাড়ে ও মাথায়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘এ ধরনের হামলা ও হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক চক্রান্তেরই অঙ্গ। জঙ্গিদের টার্গেট বেছে দিচ্ছেন বিশেষ দু’একটি রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী।’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, খুব শীঘ্রই তাঁদের ধরে ফেলা হবে। দু-এক মাস পরে আর বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটবে না বলে তিনি নিশ্চিত।

এর আগে জুনের ৭ তারিখে ঝিনাইদহেরই করাতিপাড়া গ্রামে এক বৃদ্ধ পুরোহিতকে খুন করা হয়েছিল। এর তিন দিন পরেই পাবনায় সৎসঙ্গ আশ্রমের এক সেবাইতকেও খুন করা হয়। ১৫ জুন মাদারিপুরে সরকারি কলেজের এক শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে বাড়িতে ঢুকে চাপাতি দিয়ে কোপায় তিন আততায়ী। রিপন প্রাণে বেঁচে যান। শুক্রবার সেই আক্রমণের প্রধান পরিকল্পককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ঢাকার পুলিশ। উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, ধৃত খালিদ সাইফুল্লা জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন)-এর প্রথম সারির নেতা।

বাংলাদেশে একের পর এক এমন ঘটনা সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় এলাকায় অস্থিরতা তৈরি করতে পারে বলে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে এ দিন সল্টলেকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই জেলায় সব ধর্মের মানুষ বাস করে। নানা রকম উস্কানির চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ তো বটেই, পুরসভা ও পঞ্চায়েতের পদাধিকারিদেরও কড়া নজর রাখতে হবে। কোনও ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হতে দেওয়া চলবে না। গরু চোরাচালান বন্ধ করার নির্দেশও এ দিন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রকাশিত বাংলাদেশের ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’-এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে— গত ছ’মাসে পাঁচ জন হিন্দু খুন হয়েছেন। খুন হয়েছেন কয়েক জন খ্রিস্টান যাজক ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীও। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘‘জঙ্গি শক্তিকে ব্যবহার করে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিএনপি-জামাত জোট এ ভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার পাশাপাশি তাদের উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা।’’ তথ্যমন্ত্রী বলেন, তবে সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ। এত হামলার পরেও বাংলাদেশে কোনও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়নি। বরং সব ধর্মের মানুষ হাতে হাত মিলিয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন। ইনু বলেন, ‘‘এর আগে জ্বালাও পোড়াও অভিযান সরকার ও মানুষ মিলে বন্ধ করেছেন। এ বারও তাই হবে। এই চোরাগোপ্তা হামলা যে ধর্মের ওপর হামলা নয়, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন।’’

নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারাও বাংলাদেশে এইসব খুনের পিছনে পরিকল্পিত চক্রান্তই দেখছেন। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটি পরিষ্কার। নজর করার বিষয়— নিশানা করা হচ্ছে ধর্মাচরণের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের। এর উদ্দেশ্য ভারতের আরএসএস-বিজেপিকে উস্কে তোলা। বিষয়টি নিয়ে তারা সরব হলে চাপে পড়বেন হাসিনা। দু’দেশের সম্পর্কও নষ্ট হবে।’’ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের কথায়, এ ধরনের খুনজখমে দিল্লিকে এই বার্তাও দেওয়া হচ্ছে— সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে শেখ হাসিনা ব্যর্থ। তাই বিকল্প হিসেবে তারা যেন বিএনপি-জামাত জোটকে সমর্থনের কথা ভাবে।

বিদেশ মন্ত্রকের ওই কর্তার মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও সরকারের অন্য নেতারাও চক্রান্তের বিষয়ে ওয়াকিবহাল। আলফা ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলির ঘাঁটি ধ্বংস ও নেতাদের গ্রেফতারে শেখ হাসিনা সরকার যে ভাবে সহযোগিতা করেছেন, দিল্লি তার জন্য কৃতজ্ঞ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

alert bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE