Advertisement
০৬ মে ২০২৪

দেশে দেশে খুলবে কি গণভোটের দরজা

উঠল বাই তো গণভোট চাই! সৌজন্যে ব্রেক্সিট।শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে রায় দিয়েছে ব্রিটেনের জনতা। ৫২ শতাংশ ভোট পড়েছে ইইউ ছাড়ার পক্ষে। আর ৪৮ শতাংশ ইইউ-তে থাকার পক্ষে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ১০:০৩
Share: Save:

উঠল বাই তো গণভোট চাই!

সৌজন্যে ব্রেক্সিট।

শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে রায় দিয়েছে ব্রিটেনের জনতা। ৫২ শতাংশ ভোট পড়েছে ইইউ ছাড়ার পক্ষে। আর ৪৮ শতাংশ ইইউ-তে থাকার পক্ষে।

আর ব্রিটেনের গণভোটের এই রায় উৎসাহ জুগিয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালকে। দিল্লির জন্য পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা চেয়ে অনেক দিনই সরব তিনি। এ বার এই নিয়ে সরাসরি গণভোট চাইবেন বলে ঠিক করেছেন। শুক্রবার কেজরী টুইট করেন, ‘‘ব্রিটেনে গণভোটের পরে খুব শীঘ্রই পূর্ণ রাজ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার ব্যাপারে দিল্লিতে গণভোট হবে।’’ গত মাসেই কেজরীবাল সরকার এই ব্যাপারে একটি খসড়া বিল পেশ করে জনতার মতামত জানতে চেয়েছে। মতামত নেওয়া হবে ৩০ জুন পর্যন্ত।

গণভোটের কথা ভাবছে স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ার্ল্যান্ডও। তাদের দাবি, স্বাধীনতা। দু’বছর আগে গণভোট করেই ব্রিটেনের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্কটল্যান্ড। কিন্তু ব্রেক্সিট-এর পরে তারা মত বদলাতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে উড়িয়ে দেওয়া যায় না ফের গণভোটের সম্ভাবনাও।

কেন? ব্রিটেনের গণভোটের রায়ের বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ার্ল্যান্ডের বাসিন্দাদের বেশির ভাগ ইইউ-তে থেকে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। স্কটল্যান্ডের ৩২টি এলাকায় থেকে যাওয়ার পক্ষে ভোট পড়েছে ৬২ শতাংশ। শুক্রবার স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার তথা ক্ষমতাসীন এসএনপি-র নেত্রী নিকোলা স্টার্জিওন বলেন, ‘‘গণভোটের ফলে স্কটল্যান্ডকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইইউ থেকে বেরোতে হচ্ছে। যা গণতান্ত্রিক ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তাই স্বাধীনতার প্রশ্নে নতুন করে গণভোট দরকার।’’

এর আগেই স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বিতীয় গণভোটের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন স্টার্জিওন। নির্বাচনী প্রচারে তিনি জানিয়েছিলেন, স্কটল্যান্ডের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ব্রিটেন ইইউ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলে স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট ঠেকানো অসম্ভব হয়ে উঠবে। আর এ দিন তিনি বলেন, ‘‘দ্বিতীয় গণভোটের বিষয়টি আলোচনায় আনতে হবে। এই বিষয়ে আইনি প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পরবর্তী পার্লামেন্টের সভাতেই আহ্বান জানানো হবে।’’ ইইউ-এর জনতার উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্কটল্যান্ডকে আপনারা নিজেদের ঘর বলেই ভাববেন। আর এটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, স্কটল্যান্ডের সাধারণ মানুষ ইইউ-এর ভিতরে নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছে।’’

২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম স্বাধীনতার জন্য গণভোটের মুখোমুখি হয়েছিল স্কটল্যান্ড। সে বার স্বাধীনতার পক্ষে ভোট পড়েছিল ৪৫ শতাংশ এবং বিপক্ষে ৫৫ শতাংশ। কিন্তু ব্রেক্সিটের পরে আশাবাদী স্টার্জিওন। তাঁর কথায়, ‘‘দু’বছর আগে যে পরিস্থিতিতে গণভোট হয়েছিল, সেই পরিস্থিতি বর্তমানে পাল্টে গিয়েছে।’’ উত্তর আয়ার্ল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী

দল শিন ফেইনও জানিয়েছে, স্বাধীনতার প্রশ্নে সে দেশে গণভোটের প্রয়োজন রয়েছে।

গণভোটের দাবি উঠেছে ইইউ-এর অন্যান্য সদস্য দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, সুইডেন, ডেনমার্কের কোনও কোনও মহল থেকেও। ইইউ-তে থাকা না থাকা নিয়ে গণভোটের দাবিতে সরব এই সব দেশের দক্ষিণপন্থী দলগুলো। ফ্রান্সের দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা মারিন লে পাঁ-র অভিযোগ, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসবাদী, চোরাকারবারি ও শরণার্থী সমস্যা রুখতে ব্যর্থ হয়েছে ইইউ। ‘‘তাই এখন ফ্রান্স এবং ইইউ-এর অন্য দেশগুলিতেও গণভোট নেওয়ার সময় এসেছে,’’ বলছেন মারিন লে পাঁ। একই পথে হাঁটার পক্ষপাতী নেদারল্যান্ডসের ফ্রিডম পার্টি।

পার্টির নেতা গ্রিস ওয়াইল্ডারসের কথায়, ‘‘হুররে ব্রিটিশ! এ বার আমাদের পালা। এ বার সময় ডাচ গণভোটের।’’ আর সুইডেনের অভিবাসন-বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের টুইট-বার্তা, ‘‘এখন আমরা সুয়েক্সিটের অপেক্ষায়।’’

সেই অপেক্ষা মেটে কি না, উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

referendum brexit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE