Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঠিক আছি, বেরোব কবে

দলটিকে সাহস দেওয়ার জন্য রক ব্যান্ডের এক গায়ককেও গুহার ভিতরে পাঠানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে বিশেষ কম্বল। গুহার ভিতরে টেলিফোন লাইন পৌঁছনোর চেষ্টাও করা হয়েছিল। যাতে পরিজনদের সঙ্গে বাচ্চাদের কথা বলানো যায়।

মরিয়া: বুক-জল ঠেলে এ ভাবেই ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে ডুবুরি দল।

মরিয়া: বুক-জল ঠেলে এ ভাবেই ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে ডুবুরি দল।

সংবাদ সংস্থা
ব্যাঙ্কক শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫২
Share: Save:

ফ্রিজে এখনও জন্মদিনের কেক। এত দিন সে সবের কথা ভুলে গিয়েছিলেন বাবা-মা। ২৩ জুন ষোলোয় পড়েছে তাঁদের আদরের নাইট। কথা ছিল ফুটবল ম্যাচ জিতে এলেই জন্মদিন পালন হবে। ছেলের বায়না মিটিয়ে খাবারের তালিকায় রাখা হয়েছিল তার পছন্দের গ্রিল়ড পর্ক আর প্রিয় মিষ্টি।

তার পরে কেটে গিয়েছে দশ দিন। ছেলে ফেরেনি। থাম লুয়াং ন্যাং নন গুহায় ঢুকে আর বেরোতে পারেনি কিশোর ফুটবল দল ‘ওয়াইল্ড বোর’-এর ১২ জন খুদে ও তাদের ২৫ বছর বয়সি কোচ। মঙ্গলবার সকালে খোঁজ মেলে, গোটা দলটাই অক্ষত আছে। অন্ধকার গুহার দেওয়াল থেকে চুঁইয়ে পড়া জলের ভরসাতেই ১৩টা প্রাণ লড়ে গিয়েছে দশ দিন।

কিন্তু খোঁজ পাওয়ার পরও যে ৩৬ ঘণ্টা কেটে গেল। তাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর সাত ডুবুরিকে গুহার ভিতরে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এক জন চিকিৎসক ও নার্স। কিশোর দলের ছোটখাটো আঘাত-ক্ষতগুলির চিকিৎসা শুরু করেছেন তারা। পাশাপাশি তাদের অল্প অল্প করে খাবার খাওয়ানোও শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে শক্তিবর্ধক জেল প্যাক ও হালকা খাবার ও পরে ভাত, গ্রিলড পর্ক ও দুধ দেওয়া হয়েছে।

দলটিকে সাহস দেওয়ার জন্য রক ব্যান্ডের এক গায়ককেও গুহার ভিতরে পাঠানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে বিশেষ কম্বল। গুহার ভিতরে টেলিফোন লাইন পৌঁছনোর চেষ্টাও করা হয়েছিল। যাতে পরিজনদের সঙ্গে বাচ্চাদের কথা বলানো যায়। সে চেষ্টা সফল হয়নি। তবে তাঁদের নতুন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। খুদেরা সেখানে জানিয়েছে, ‘ঠিক আছি।’

গুহাবন্দি কিশোর ফুটবলাররা। বুধবার তাইল্যান্ড নৌবাহিনী প্রকাশ করেছে এই ছবি।

কখন বেরোবে ওরা গুহা থেকে? এই প্রশ্নের সামনেই বারবার হোঁচট খাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। একে তো গুহার ভিতরের গোলকধাঁধা পথ। তার উপরে হড়পা বানের জেরে আপাতত ফুটবল দলের সামনে এক সমুদ্র জল। যা পেরোতে হলে স্কুবা ডাইভ ছাড়া উপায় নেই। কিশোরদের যা শারীরিক অবস্থা তাতে সাধারণ সাঁতার কাটাই কঠিন। যারা সাঁতার জানে না, তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে সাঁতার শেখানো এবং তার পরে বিশেষ অক্সিজেনের মুখোশ পরে জলে শ্বাস নেওয়া ও সাঁতার কাটা— পুরোটা শেখানো। এই গোটা প্রক্রিয়াটা বেশ সময়সাপেক্ষ বলে মনে করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই স্কুবা ডাইভ শেখানোর এক বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষককে ভিতরে পাঠানো হয়েছে। জানানো হয়েছে, একসঙ্গে সকলকে বার করা সম্ভব নয়। শক্তি, সামর্থ্য এবং শেখার ক্ষমতা অনুসারে এক এক করে তাদের বাইরে আনা হবে।

গত কালই ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। তার উপরে পাম্প করে জল বের করে দেওয়ার জন্য এলাকার প্রায় ২০০টি পরিবারের ধানজমি প্লাবিত হয়েছে। তবু সে সবের পরোয়া করেই গুহার বাইরে প্রার্থনায় বসেছেন অসংখ্য তাইল্যান্ডবাসী। টুইটার উপচে পড়েছে প্রার্থনায়— ‘শক্ত থাকো: ১৩টি আশা’।

এখনও ফ্রিজে যত্ন করে কেক গুছিয়ে রাখছেন নাইটের মা। ছেলে আর তার বন্ধুরা ফিরলে জন্মদিন পালন করতে হবে যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE