Advertisement
E-Paper

Camp Hope: জলবায়ু-উদ্বাস্তু বাড়ছে, ভরসা ‘ক্যাম্প হোপ’

সাধারণ মানুষকে, এমনকি সরকারকেও সামলে ওঠার সুযোগ দিচ্ছে না প্রকৃতি। পুনর্বাসন হচ্ছে ধীরে ধীরে। ফলে লাফিয়ে বাড়ছে জলবায়ু-শরণার্থীর সংখ্যা।

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:৪১
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ক্যাম্প হোপ। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ক্যাম্প হোপ। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

গত বছর নভেম্বরের কথা। কানাডার পশ্চিম প্রান্তের প্রদেশ ব্রিটিশ কলম্বিয়ার, জঙ্গল আর ক্যাসকেড মাউন্টেনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া হাইওয়ে রুট ৭, এক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে নেমে আসা ধসে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। আটকে পড়েন অনেক যাত্রী। তাঁদেরই এক জন সামান্থা ব্রাউনলি। সারা রাত প্রচণ্ড ঠান্ডা আর সম্পূর্ণ যোগাযোগহীন অবস্থায়, দুই আর সাত বছরের সন্তানদের নিয়ে গাড়িতে বন্দি ছিলেন তিনি। সকালবেলা পান আশ্রয়ের আশ্বাস। ‘ক্যাম্প হোপ’ থেকে। আর সেখানে পৌঁছে তিনি বুঝতে পারেন, আরও কত মানুষ আটকে পড়েছেন এই দুর্যোগে। সে দিন প্রায় তিনশো জন আশ্রয় পেয়েছিলেন ‘ক্যাম্প হোপে’।

সিডার, মেপল, হেমলকে ঘেরা ক্যাসকেড মাউন্টেনের ছায়ায় এই লজ— ‘ক্যাম্প হোপ’। এত দিন সেখানে সারা বছর ধরে সাধারণ মানুষ আসতেন— পারিবারিক পুনর্মিলনে বা সামার ক্যাম্পে। বহু কাল ধরে এমনই চলে আসছে। কিন্তু গত বছর থেকে ‘ক্যাম্প হোপ’-এর ভূমিকা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। আরও অনেকের সঙ্গে সামান্থাও সেখানে পেয়েছিলেন খাবার, বাচ্চার ডায়াপার, শোয়ার জন্য ম্যাট্রেসের ব্যবস্থা। পুরো লজ সে দিন গমগম করছিল দুর্যোগে আটকে পড়া মানুষদের গল্পগুজবে। আর তাঁদের জন্য রান্না, খাবার পরিবেশন, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগাড় করার দায়িত্ব, ক্যাম্পের কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আর এক দল মানুষ, যাঁরা ওই ক্যাম্প হোপেই আশ্রয় নিয়েছেন গত জুন মাস থেকে, এখনও যাঁদের কাছে ‘ক্যাম্প হোপ’-ই স্থায়ী ঠিকানা।

কেন এই মানুষেরা ‘ক্যাম্প হোপ’কেই বাসস্থান করে নিয়েছেন?

২০২১ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার প্রায় ৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার জমি দাবানলে পুড়ে গিয়েছিল, সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু ছোট শহর আর গ্রাম। জুন মাসে এই দাবানল যখন ক্যাম্প হোপের কাছাকাছি লিটন গ্রামে এসে পৌঁছয়, তার আগে তিন দিন ধরে এই ছোট্ট জায়গাটি তাদের সর্বকালের রেকর্ড উষ্ণতায় পৌঁছয়— ৪৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ডেভ আর ডোরিন ক্রোজিয়ার বেশ কয়েক বছর ধরে অবসর জীবনযাপন করছিলেন লিটনে। নিজেদের পাসপোর্ট, ওয়ালেট আর পোষ্য ছাড়া সব হারিয়েছেন ওই আগুনে। এখন তাঁরাও ‘ক্যাম্প হোপ’-এর বাসিন্দা। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন গ্রামের অন্য জায়গা থেকে আসা আরও মানুষ। ১৯৮০ থেকে ২০১০-র গ্রীষ্মে জঙ্গলে ঘেরা ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উষ্ণতা ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ছাড়ায়নি কখনও। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গত দশকের গোড়া থেকেই ছবিটা বদলে যেতে শুরু করে।

২০২১ সালে কানাডার এই অঞ্চলটি জেরবার হয়ে গিয়েছে দাবানল, চরম উষ্ণতা এবং বন্যার প্রকোপে। সাধারণ মানুষকে, এমনকি সরকারকেও সামলে ওঠার সুযোগ দিচ্ছে না প্রকৃতি। পুনর্বাসন হচ্ছে ধীরে ধীরে। ফলে লাফিয়ে বাড়ছে জলবায়ু-শরণার্থীর সংখ্যা। আর এই পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ‘ক্যাম্প হোপ’ হয়ে উঠেছে সৌহার্দ্য, ভরসা আর মানবিকতার প্রতীক— আক্ষরিক অর্থেই এই সব মানুষের পায়ের তলার মাটি।

refugee weather
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy