Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Gaza City

গাজ়ায় হামলা, চিনের তোপের মুখে আমেরিকা

তারা যদিও তাদের মতো করে এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে দাবি করেছে আমেরিকা

ধ্বংসের ছবি: গাজ়ায় ইজ়রায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হানায় বিধ্বস্ত অঞ্চলে একাকী প্যালেস্তাইনি। সোমবার। রয়টার্স

ধ্বংসের ছবি: গাজ়ায় ইজ়রায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হানায় বিধ্বস্ত অঞ্চলে একাকী প্যালেস্তাইনি। সোমবার। রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
গাজ়া শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৬:০২
Share: Save:

ভোরের আলো ফোটার আগেই সোমবার ফের গাজ়ার আকাশে হানা দিল ইজ়রায়েলি সেনা। প্রায় এক ডজন যুদ্ধবিমান দাপিয়ে বেড়াল প্যালেস্তাইনের উপকূলবর্তী হামাস জঙ্গি গোষ্ঠী অধ্যুষিত ওই অঞ্চলে। যার জেরে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পাশাপাশি শতাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। এই হানায় হতাহতের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়। উল্লেখ্য, গত সাত দিনে ইজ়রায়েল-প্যালেস্তাইনের এই সংঘর্ষের জেরে ইতিমধ্যেই নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে শুধু রবিবারই ইজ়রায়েলি হানায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ৪২ জন। গত এক সপ্তাহ ধরে চলা সংঘর্ষের ঘটনায় এক দিনের নিরিখে যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এ দিকে শান্তি ফেরাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে গড়িমসির অভিযোগে আমেরিকার বিরুদ্ধে তোপ দাগল চিন।

রবিবারের পর নড়েচড়ে বসেছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে গত কালই তড়িঘড়ি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকা হয়। যদিও কার্যকরী কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অনেকেই এর জন্য আর্ন্তজাতিক মহলে ইজ়রায়েলের সহযোগী হিসেবে পরিচিত আমেরিকাকে কাঠগড়ায় তুলছেন। একই অবস্থান চিনেরও। প্রয়োজনে শান্তি আলোচনার জন্য ইজ়রায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে তারা প্রস্তুত বলেও জানায় চিন।

তারা যদিও তাদের মতো করে এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে দাবি করেছে আমেরিকা। পশ্চিম এশিয়ায় কূটনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী দেশগুলির সঙ্গে রবিবারই এই নিয়ে তাঁর কথা হয়েছে বলে জানান আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এই তালিকায় রয়েছে কাতার, সৌদি আরব, মিশর এবং ফ্রান্স। উল্লেখ্য, ইরানের পর হামাস জঙ্গি গোষ্ঠীর উপর কাতারের সবচেয়ে বেশি প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। ব্লিঙ্কেনের এই পদক্ষেপের এক দিন আগেই দু’পক্ষের তরফে শান্তি প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানিয়ে প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

নেতানিয়াহু যদিও রবিবারই জানিয়েছেন, ‘জঙ্গি বিরোধী এই সামরিক অভিযান শেষ হতে এখনও সময় লাগবে।’ এ দিকে ইজ়রায়েলি বাহিনীর দাবি, গত সোমবার থেকে প্রায় তিন হাজার ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এসেছে তাদের দিকে। যার মধ্যে প্রায় হাজার খানেক প্রযুক্তির সাহায্যে আটকে দেওয়া হয়। আর ৪৫০টি আছড়ে পড়ে গাজ়ার উপরেই। দু’দেশের সংঘর্ষের জেরে গাজ়ায় বিপুল সংখ্যক মৃত্যুর পাশাপাশি আহতের সংখ্যাও ১২০০ ছাড়িয়েছে। ৪০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। রবিবার ‘হামাস সম্পর্কিত’ কমপক্ষে ৯০টি লক্ষ্যে তারা ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করেছে বলে জানায় ইজ়রায়েল।

দু’তরফের কর্তৃপক্ষেরই দাবি, হতদের মধ্যে ১৯৭ জন গাজ়াবাসী। ১০ জন ইজ়রায়েলের। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের সতর্কবার্তা, ‘‘দ্রুত এই ভয়াবহ হিংসা বন্ধ না-করলে নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে সময় লাগবে না।’’ শান্তির আবেদন জানানোর পাশাপাশি ভাটিক্যান থেকে পোপ ফ্রান্সিসের তোপ, ‘‘এ কাজ যারা করছেন, তাঁরা উন্মাদ।’’

ইজ়রায়েল বরাবর দাবি করে এসেছে, সাধারণেরা নয়, গাজ়ায় তাদের নিশানায় হামাস জঙ্গিরাই। তবে সোমবারও গাজ়ায় একাধিক ধ্বংসস্তূপের নীচে থেকে বিভিন্ন বয়সের নাগরিকদের দেহ তুলে আনতে দেখা যায় উদ্ধারকারীদের। ভেসে আসে স্বজনহারাদের হাহাকার। তেমনই এক জন লামিয়া আল-কুলাক। সোমবারের হানায় ভাই এবং তাঁর ছেলেমেয়েদের হারানো এই গাজ়াবাসীর কথায়, ‘‘রাতে ঘুমোচ্ছিলাম। রকেট বর্ষণের আওয়াজে ঘুম ভাঙে। প্রায় আধঘণ্টা তা চলে। বাচ্চাদের চিৎকার কানে আসছিল। বাইরে বেরিয়ে দেখি পাশের বাড়িটি ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

United States of America China Gaza City
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE