Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দঃ চিন সাগরকে যুদ্ধের মঞ্চ বানানোর চেষ্টা যেন না হয়: হুঙ্কার দিচ্ছে ক্রুদ্ধ বেজিং

হুঙ্কার ছাড়তে শুরু করল ক্রুদ্ধ চিন। দক্ষিণ চিন সাগরের ৯০ শতাংশের উপরেই চিনের অধিকার ঐতিহাসিক— বেজিং-এর এই দাবি মঙ্গলবারই নস্যাৎ করে দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল। তার পরেও আগ্রাসন অক্ষুণ্ণ রাখতে সব প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পথ বেছে নিলেন শি জিনপিং।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ১৭:৫৮
Share: Save:

হুঙ্কার ছাড়তে শুরু করল ক্রুদ্ধ চিন। দক্ষিণ চিন সাগরের ৯০ শতাংশের উপরেই চিনের অধিকার ঐতিহাসিক— বেজিং-এর এই দাবি মঙ্গলবারই নস্যাৎ করে দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল। তার পরেও আগ্রাসন অক্ষুণ্ণ রাখতে সব প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পথ বেছে নিলেন শি জিনপিং। বেজিং-এর সতর্কবার্তা, ‘‘দক্ষিণ চিন সাগরকে যুদ্ধের মঞ্চে পরিণত করবেন না।’’

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল কঠোর রায় দিয়েছে চিনের বিরুদ্ধে। এই রায় ফিলিপিন্সের স্বার্থকে রক্ষা করেছে তো বটেই। অন্য যে সব দেশের সঙ্গে জলসীমা নিয়ে চিনের বিরোধ চলছে দশকের পর দশক ধরে, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে তারাও স্বস্তিতে। চিন বুধবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। চিনের উপ-বিদেশ মন্ত্রী লিউ ঝেনমিন মঙ্গলবার বেজিং-এ বলেছেন, ‘‘দক্ষিণ চিন সাগরকে যুদ্ধের মঞ্চে পরিণত করার চেষ্টা করবেন না। চিনের লক্ষ্য হল, দক্ষিণ চিন সাগরকে শান্তি, মৈত্রী এবং সহযোগিতার মঞ্চে পরিণত করা।’’ চিন এ দিন আবার বলেছে, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়কে তারা মানছে না। যদি ট্রাইব্যুনালের রায়ের ভরসায় কোনও দেশ দক্ষিণ চিন সাগরে নিজেদের আধিপত্য বাড়াতে চায়, তা হলে গোটা এলাকার উপর এয়ার ডিফেন্স জোন চিহ্নিত করতে বাধ্য হবে চিন। অর্থাৎ দক্ষিণ চিন সাগরের আকাশে অন্য কোনও দেশের বিমান ঢুকলেই ধরে নেওয়া হবে ওই বিমান চিনের আকাশসীমায় ঢুকেছে। চিন বোঝাতে চেয়েছে, জলসীমা নিয়ে চিনকে চাপে ফেলতে চাইলে, জলপথ তো বটেই, উড়ানের রাস্তাও আটকে দেওয়া হবে। দক্ষিণ চিন সাগরের আকাশে অন্য কোনও দেশের বিমান ঢুকলেই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার থাকবে চিনের।

বেজিং-এর এই হুঙ্কারে অবশ্য পিছু হঠতে নারাজ আন্তর্জাতিক মহল। আমেরিকা, ভারত, জাপান যেমন দক্ষিণ চিন সাগরে টহলদারি জাহাজ পাঠাচ্ছিল, তেমন ভাবেই টহলদারি চালিয়ে যাবে বলে সূত্রের খবর। তাইওয়ানও দক্ষিণ চিন সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে দিয়েছে। চিনা নৌসেনার একাধিক রণতরী সপ্তাহখানেক আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছে। অতএব দক্ষিণ চিন সাগর যে আরও উত্তপ্ত হতে চলেছে, তা নিয়ে সংশয় নেই ওয়াকিবহাল মহলের।

প্যারাসেল আইল্যান্ডস, স্প্র্যাটলি আর্কিপ্যালেগো এবং স্কারবোরো শোয়ালের দখল নিয়েছে চিন। ড্রেজিং শিপ পাঠিয়ে বালি ফেলে উঁচু করা হয়েছে দ্বীপ এবং পাথুরে প্রাচীরগুলিকে। তার পর সেখানে বানানো হয়েছে সামরিক পরিকাঠামো, রানওয়ে। দক্ষিণ চিন সাগরের যতটা এলাকাকে চিন নিজেদের বলে দাবি করে, তাতে গোর আপত্তি রয়েছে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, ব্রুনেই এবং তাইওয়ানের। স্কারবোরো শোয়াল এবং স্প্র্যাটলি আর্কিপ্যালেগো ফিলিপন্স উপকূলের খুব কাছে। ওই সব অঞ্চলকে ফিলিপিন্সের নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবেই ধরা হয়। স্কারবোরো শোয়ালে মাছ ধরতে যেতেন ফিলিপিনো মৎস্যজীবীরা। দেশটির অর্থনীতির জন্য ওই অঞ্চল খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে চিন স্কারবোরো শোয়াল এবং স্প্র্যাটলি আর্কিপ্যালেগোর দখল নেয়। তার পর পরই ফিলিপিন্স আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল।

আরও পড়ুন: চিন সাগর নিয়ে প্যাঁচে বেজিং, সতর্ক দিল্লি

একই ভাবে ভিয়েতনামের দখলে থাকা প্যারাসেল আইল্যান্ডস ১৯৮৮ সালে দখল করে নিয়েছিল চিনা নৌসেনা।

সব মিলিয়ে যতটা এলাকাকে চিন নিজেদের জলসীমা বলে দাবি করছে, তাতে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, ব্রুনেই এবং তাইওয়ানের বৈধ জলসীমাও সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাকেও চিন নিজেদের সীমানা বলে প্রমাণ করতে চাইছে। হেগ-এর ট্রাইব্যুনাল চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার পর মরিয়া হয়ে হুমকি দিতে শুরু করেছে চিন। শুধু দক্ষিণ চিন সাগরের আশেপাশে থাকা দেশগুলির জন্য কিন্তু এই হুঁশিয়ারি নয়। আমেরিকা, জাপান, ভারত সহ যে সব দেশ ফিলিপিন্সের সমর্থনে কথা বলেছে, এই হুঁশিয়ারি তাদের উদ্দেশেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE