ফের সুর নরম!
প্রচার পর্বে যা ছিল হাতিয়ার, প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়া মাত্রই সেই আগ্রাসন থেকে যেন গুটিগুটি পিছু হটছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ই-মেল দুর্নীতির জের টেনে হিলারি ক্লিন্টনকে জেলে ভরার হুমকি দিয়েছিলেন ভোটের আগে। কিন্তু এখন বলছেন, ‘‘ও-সব নিয়ে ভাবার সময় নেই। আপাতত দেশের স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নিয়েই ভাবছি।’’
ঠিক কী ভাবছেন স্বাস্থ্য নিয়ে? হোয়াইট হাউসের দৌ়ড় শুরু করেই ‘ওবামা-কেয়ার’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন মার্কিন ধনকুবের। ২০১০-এর সেই স্বাস্থ্য বিমা আইন মোতাবেক চললে দেশ লাটে উঠবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বিলটাকেই বাতিল করার হুমকি দিয়েছিলেন। অথচ বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠকের পর সেই ট্রাম্পই বলছেন, ওবামার স্বাস্থ্য বিমা আইনটি মোটের উপর বদলাতে চান না তিনি। শুক্রবার এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও জানান, তিনি ওই আইনের কিছু অংশের সংশোধনী আনতে পারেন বড় জোর, কিন্তু প্রত্যাহার বা বাতিল করতে চান না। আগে থেকে কোনও রোগ থাকলে বিমা করার ক্ষেত্রে কোনও রকম বৈষম্য থাকবে না— ওবামা-কেয়ারের এই বিশেষ ধারা নিয়েও আপত্তি ছিল ট্রাম্পের। আর আজ তিনি বলছেন, ‘‘এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না।’’ এমনকী ওবামার পথে হেঁটে তিনিও চাইছেন, ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানদের বাবা-মায়ের বিমার আওতাতেই রাখা হোক।
রাজনীতির ময়দানে তখনও আনকোরা ট্রাম্প। কালো ঘো়ড়া হিসেবেই শুরু করেছিলেন হোয়াইট হাউসের দৌড়। শরণার্থী ঠেকাতে আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তোলার প্রস্তাব পেড়ে বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। দেশ থেকে মুসলিম তাড়ানোর কথা বলেও উস্কে দিয়েছিলেন বিতর্ক। কিন্তু ভোটের ফল ঘোষণা হতেই দেখা গিয়েছে, ট্রাম্পের ওয়েবসাইট থেকে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার বিতর্কিত ঘোষণা উধাও। পরে ওয়েবসাইটে তা ফেরানো হলেও ধোঁয়াশা কাটছে না।
মার্কিন কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, বিতর্ক ট্রাম্পকে যতটা না কোণঠাসা করেছে, তার চেয়ে ঢের বেশি এগিয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউস দখলের লড়াইয়ে। তবে কি সেই সমর্থন জুটিয়ে মসনদে আসার পরে ভোল বদলাতে শুরু করলেন ট্রাম্প? ‘প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট’ ও তাঁর পরামর্শদাতাদের কথায় কিন্তু সেই ইঙ্গিতই মিলছে।
যে হিলারি ক্লিন্টনকে প্রচার পর্বে উঠতে-বসতে বিষোদ্গার করছিলেন, তা-ও যেন এখন অনেক ঠাণ্ডা। সপ্তাহখানেক আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে হিলারির ই-মেল কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগ করবেন তিনি। এখন যদিও সে নিয়ে বিশেষ মুখ খুলছেন না। বিশেযজ্ঞরা বলছেন, প্রচারে গরম-গরম বক্তৃতায় বাজিমাত করা আর দেশ চালানো যে এক কথা না, তা শেয পর্যন্ত বুঝেছেন ট্রাম্প। তা ছাড়া, এ ভাবে দেশে ডেমোক্র্যাট সমর্থকদেরও ভরসা জেতারও চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
ট্রাম্প শিবিরের দাবি, তাঁদের নেতা আপাতত মন দিচ্ছেন দেশের কাজেই। প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর প্রথম একশো দিনে কী কী করবেন ট্রাম্প? তাঁর ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা এবং নিউ ইয়র্কের প্রাক্তন মেয়র রুডল্ফ গিউনিয়ানি জানান, মেক্সিকো সীমান্তে পাঁচিল হয়তো তোলা হবে। কিন্তু হবে, এখনও স্পষ্ট নয়। বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম একশো দিনে ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান কাজই হবে কর-ব্যবস্থা ঢেলে সাজা।’’ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে না এলেও তার বাস্তবায়নে বেশ কিছুটা সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
প্রচারের শুরু থেকেই ভারত-চিনের মতো দেশ থেকে আউটসোর্সিং কমিয়ে দেশেরই কর্মসংস্থান বাড়ানোর পক্ষে জোর সওয়াল করেছিলেন ট্রাম্প। অথচ ভোটে জেতা ইস্তক তা নিয়ে একটি কথাও বলেননি প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট। এ দিকে দেশ জুড়ে ট্রাম্পের বিরোধিতায় বিক্ষোভের আগুন জ্বলেছে আজও। কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, দেশ জোড়া বিক্ষোভের মুখেই হয়ত আগের অবস্থান বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন ট্রাম্প।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy