Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
International

রাজনীতির চেনা ছকের পরোয়া না করেও ট্রাম্পের বাজিমাত

‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’-এই ভরসা রাখল মার্কিন নাগরিক। ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁরই হাত ধরে আট বছর পরে ক্ষমতায় ফিরল রিপাবলিকান পার্টি। হয়তো হাসি ফুটল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখেও! তিনি তো ট্রাম্পকে, হিলারের চেয়ে ‘যোগ্যতর প্রেসিডেন্ট’ বলে মনে করার কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন। শুরু হল আমেরিকার এক অনিশ্চিত পথ চলা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ১১:৩৩
Share: Save:

‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’-এই ভরসা রাখল মার্কিন নাগরিক। ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁরই হাত ধরে আট বছর পরে ক্ষমতায় ফিরল রিপাবলিকান পার্টি। হয়তো হাসি ফুটল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখেও! তিনি তো ট্রাম্পকে, হিলারের চেয়ে ‘যোগ্যতর প্রেসিডেন্ট’ বলে মনে করার কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন। শুরু হল আমেরিকার এক অনিশ্চিত পথ চলা।

বরাবরই বেপরোয়া ট্রাম্প। নির্মাণ শিল্পে গগনচুম্বী সাফল্য নিয়ে রাজনীতির প্রাঙ্গণে এসেছেন। সেখানেও মুখ বন্ধ রাখা, সৌজন্য বজায় রাখার ধার ধারেননি। রিপাবলিকান পার্টির হয়ে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে, প্রাইমারি থেকেই ট্রাম্পের মুখ খোলার নানা নমুনা পেয়েছে আমেরিকা। পোড়খাওয়া রিপাবলিকান নেতাদের মার্জিত যুক্তিকে মুখের তোড়ে উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই অরাজনৈতিক আচরণই জনতার মন জিতেছে। প্রাইমারি লড়াইয়ে প্রথম থেকেই বাকি প্রার্থীদের পিছনে ফেলতে শুরু করেন ট্রাম্প। আজ পিছনে ফেলে দিলেন আর এক পোড়খাওয়া রাজনীতিক হিলারিকেও।

নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন ট্রাম্প বার বার বলেছিলেন, তিনি রাজনৈতিক নেতা নন। তাঁর মতো ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার সুযোগ বার বার আসবে না। দিলে আসবে পরিবর্তন। সেই সুযোগটাই নিলেন মার্কিন জনতা। বুঝিয়ে দিল, প্রথাগত রাজনীতির চেয়ে ছক-ভাঙা ট্রাম্পই তাঁদের বেশি পচ্ছন্দের।

বেপরোয়াগিরির ঝামেলায় বার বার পড়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু বিচলিত হননি। কখনও অভিবাসীদের ধর্ষক বলেছেন। কখনও মুসলিমদের আমেরিকায় ঢোকা বন্ধ করার কথা বলেছেন। কখনও প্রতিবন্ধী সাংবাদিককে ব্যঙ্গ করতে ‘কুৎসিত’ অঙ্গভঙ্গী করেছেন। কখনও মহিলাদের চেহারা নিয়ে বিদ্রুপ করেছেন। কখনও ওবামার থেকে পুতিনকে ‘আদর্শ প্রেসিডেন্ট’ বলেছেন। কখনও আক্রমণ করে বসেছেন নিজের দলের নেতাদেরই। ট্রাম্পের একটি ভাষণ বিতর্কের ঝড় তুলেছে। মার্কিন সমাজকে প্রায় আড়াআড়ি ভেঙে দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এত কিছুর পরেও মার্কিন জনতার একাংশ যে বেপরোয়া ভাবকেই পচ্ছন্দ করেন, তার প্রমাণ মিলল ভোটে। ম্যাজিক ফিগার ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট পেয়ে গেলেন ট্রাম্প।

সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম ট্রাম্পের। পড়াশোনা শেষ করে ১৯৭১-এ বারা ফেড ট্রাম্পের সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নেন। সারা বিশ্বের নানা নির্মাণের সঙ্গে ট্রাম্প সংস্থা জড়িত। কিন্তু শুধু নির্মাণে থেমে থাকেননি। বিনোদন শিল্পেও যুক্ত হয়েছেন তিনি। ১৯৯৬-২০১৫ পর্যন্ত ‘মিস আমেরিকা’ প্রতিযোগিতা পরিচালনা করেছে ট্রাম্পের সংস্থা। একটি জনপ্রিয় মার্কিন রিয়্যালিটি শো’তে নিয়মিত দেখা যেত ট্রাম্পকে। ট্রাম্পের এই পরিচিত মুখই তাঁকে সহজে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। প্রথাগত রাজনীতিতে ক্লান্ত জনতার সামনে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। ট্রাম্প তাঁদের শঙ্কার জায়গাটি ধরতে পেরেছিলেন। অভিবাসনে আতঙ্কিত জনতা, মুক্ত বাণিজ্যের দৌলতে উত্তরোত্তর কাজ হারাচ্ছেন উৎপাদন শিল্পের শ্রমিক। ক্রমেই বেড়ে চলা ইসলামিক মৌলবাদে ভীত জনতা ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যে নীরবে সমর্থন জুগিয়েছেন। নির্বাচনের শেষ পর্বে একের পর এক মহিলা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন। ট্রাম্পও মহিলাদের নিয়ে নানা বিদ্রুপ করেছেন। কখনও তা শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংবাদমাধ্যম যতই হিলারির পক্ষে দাঁড়িয়েছে, যতই ছি ছি হয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পেই আস্থা রেখেছেন মার্কিন জনতা।

ট্রাম্প বরাবরই ওয়াশিংটনের ক্ষমতাতন্ত্রটিকে ভাঙতে চান। আর তা করতে গিয়ে নিজের দলের নেতাদের নিশানা করেছেন। প্রতিবাদে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশন-এ অনেক নামী রিপাবলিকান নেতা যোগ দেননি। বেশ কয়েক জন রিপাবলিকান নেতা এক সঙ্গে হিলারিকে ভোট দেওয়ার কথা ঘোষণাও করেছেন। কিন্তু ট্রাম্পকে তার পরেও দমানো যায়নি।

নির্বাচনের শেষ পর্বে হিলারি ক্লিন্টনের ই-মেল বিতর্ক ট্রাম্পকে কিছুটা হলেও অক্সিজেন জোগায়। ক্ষমতার কেন্দ্রের নানা দুর্নীতির প্রমাণ হিলারির ই-মেল। এর পরে এক বারে হিলারির ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেন ট্রাম্প। আজ হিলারিকে পিছনে ফেলে দিলেন। হিলারি-সহ পুরো ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ট্রাম্পকে নেতৃত্ব দেওয়ার ‘অযোগ্য’ বলেছেন। ট্রাম্পের হাতে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার তুলে দেওয়া বিপজ্জনক বলে প্রচার চালিয়েছেন তাঁরা। বলেছেন, ট্রাম্প মহিলা ও মুসলমান-বিদ্বেষী। কিন্তু মার্কিন জনতা তাঁকেই ‘কমান্ডার-ইন-চিফ’ বলে বেছে নিল। মেনে নিল!

ট্রাম্পের আচরণে মার্কিন মুলুকের বাইরে কিন্তু শঙ্কার মেঘ। ট্রাম্প ঠিক কী করতে চান, তা এখনও পরিষ্কার নয়। এই অনিশ্চয়তা বিশ্ব অর্থনীতিকে দুর্বল করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামনের দিনগুলির দিকে তাই সবাই তাকিয়ে আছেন।

ছবি: রয়টার্স, এএফপি।

আরও পড়ুন- যে ভাবে নির্বাচিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE