Advertisement
১৯ মে ২০২৪

২৫ বছর আগে বার্লিন-প্রাচীর মুক্ত করেন হারাল্ড

তকমাটার সঙ্গে মোটেও একমত নন তিনি। কিন্তু বার্লিনের দেওয়াল ভাঙার সঙ্গে তাঁর নামটি বিশেষ ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। হারাল্ড জেগার। তদানীন্তন পূর্ব জার্মানির সীমান্ত রক্ষী। যিনি পূর্ব এবং পশ্চিম বার্লিনের মাঝে বর্নহলমার স্ট্রাসে সীমান্তের উপপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। খুব বিনয়ের সঙ্গে যিনি বলেন, “আমি প্রাচীর উন্মুক্ত করেছি, এমন নয়। সেই সন্ধ্যায় একজোট হয়েছিলেন পূর্ব জার্মানির মানুষ।” বছর পঁচিশ আগের সেই ইতিহাসে কিন্তু জুড়ে গিয়েছে জেগারের নামটিই। যিনি নিজেও ক্রমভঙ্গুর কমিউনিস্ট জমানার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন।

পূর্বের আলিঙ্গন পশ্চিমকে। দেওয়াল ভাঙার পরের দিন। —ফাইল চিত্র।

পূর্বের আলিঙ্গন পশ্চিমকে। দেওয়াল ভাঙার পরের দিন। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
বার্লিন শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

তকমাটার সঙ্গে মোটেও একমত নন তিনি। কিন্তু বার্লিনের দেওয়াল ভাঙার সঙ্গে তাঁর নামটি বিশেষ ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে।

হারাল্ড জেগার। তদানীন্তন পূর্ব জার্মানির সীমান্ত রক্ষী। যিনি পূর্ব এবং পশ্চিম বার্লিনের মাঝে বর্নহলমার স্ট্রাসে সীমান্তের উপপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। খুব বিনয়ের সঙ্গে যিনি বলেন, “আমি প্রাচীর উন্মুক্ত করেছি, এমন নয়। সেই সন্ধ্যায় একজোট হয়েছিলেন পূর্ব জার্মানির মানুষ।” বছর পঁচিশ আগের সেই ইতিহাসে কিন্তু জুড়ে গিয়েছে জেগারের নামটিই। যিনি নিজেও ক্রমভঙ্গুর কমিউনিস্ট জমানার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন।

১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বরের রাত। সাংঘাতিক গোলমালের মধ্যে পূর্ব জার্মানির উত্তরে বর্নহলমার স্ট্রাসে সীমান্তে প্রাচীর উন্মুক্ত করে দেওয়ার চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জেগার একাই। কনকনে ঠান্ডা রাতে পূর্ব জার্মানি থেকে কাতারে কাতারে মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে এগোচ্ছিলেন পশ্চিমের দিকে। ২৫ বছর পরে ৭১-এ পা দেওয়া জেগার কান পাতলে এখনও শুনতে পান সেই রাতের শব্দ। টেলিভিশনে আচমকাই এক কমিউনিস্ট অফিসার ঘোষণা করেন, “এই মুহূর্ত থেকে পূর্ব জার্মানির মানুষ পশ্চিমে যেতে পারেন। আর বাধা নেই!”

সংবাদসংস্থাকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জেগার ফিরে দেখেন সেই রাত: “খেতে খেতে ব্রেড রোলটা প্রায় গলায় আটকে যাচ্ছিল। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কী বলল টিভিতে?” বলছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেগার। ২৮ বছর ধরে সামলেছেন পূর্ব জার্মানির সীমান্ত পুলিশের দায়িত্ব। কয়েক সপ্তাহ ধরে পূর্ব জার্মানির প্রতিবাদ আন্দোলনে সব সীমান্তে জারি হয়েছিল সতর্কতা। কিন্তু জেগারের অভিজ্ঞতা বলে, ৯ নভেম্বর রাত যে ঐতিহাসিক হয়ে যাবে, এমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি গোটা দিনটায়।

রোজকার মতো সে দিনও কাজে পৌঁছে যান জেগার। স্থানীয় সময় সন্ধে ছ’টা থেকে পাহারা শুরু। বস তাঁকে দায়িত্ব দিয়ে বাড়ি গিয়েছেন। কিছু মুহূর্ত পার। ক্যান্টিনে বসে টিভি দেখতে দেখতে ডিনার সারছেন জেগার। তখনই জোর চমক। পশ্চিমে যাওয়ার সবুজ সঙ্কেত! শুনেই ক্যান্টিন ছেড়ে সহকর্মীদের কাছে ছুটলেন জেগার। সব শুনে তাঁরাও যথেষ্ট সন্দিহান। কী শুনতে কী শুনেছেন জেগার!

সন্দেহ কাটাতে বসকেই ফোন করেন জেগার। “এই ফালতু খবর দিতে ফোন করেছো তুমি?” ফেটে পড়েন বস। তাঁর সাফ নির্দেশ, যাঁদের কাছে বৈধ কাগজ নেই, তাঁদের যেন কোনও ভাবেই সীমান্ত পেরোতে না দেওয়া হয়। কিন্তু জেগার তখন জানলার বাইরে দেখছেন অন্য ছবি।

ভিড়টা মিনিটে মিনিটে বাড়ছে। কানে আসছে মানুষের চিৎকার, “আমাদের বেরোতে দাও।” এ বার কিছুটা আতঙ্কগ্রস্ত জেগার ফের ডায়াল করেন বসকে। শুনলেন, “উপর তলার কোনও নির্দেশ নেই।” রাত ন’টা ছুঁতে ছুঁতেই ভিড়টার বিশাল চেহারা। সীমান্তের কাছের রাস্তাটা পুরোপুরি আটকে গিয়েছে মানুষের জমায়েতে। জেগার আবার ফোন তুলে শরণাপন্ন হন বসের। চেঁচিয়ে বলেন, “কিছু একটা করতে হবে।” ভিড়ের মধ্যে যাঁরা খুব উত্তেজিত, শুধু তাঁদের পশ্চিমে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক নির্দেশ পেলেন জেগার। তাতে নাকি ভিড় শান্ত হবে! জেগার জানালেন, “ওতে ফল হল ঠিক উল্টো। জমায়েতে মানুষ আরও খেপে উঠলেন। ভয় হচ্ছিল তখন কেউ পদপিষ্ট না হয়ে যায়।” আর সময় নষ্ট করেননি জেগার। নিজেকে বলেন, “কিছু একটা করতেই হবে, যা ঘটুক, ওদের পশ্চিমে ঢুকতে দিতে হবে।” রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ অধস্তনদের নির্দেশ দেন জেগার: “বাধা সরিয়ে দাও!” অবাক হয়ে প্রথমে জেগারের কথায় নড়েননি কেউ। ফের চেঁচিয়ে এক কথা বলেন জেগার। ২৫ বছর পার করে নিজের ছোট অ্যার্পাটমেন্টে বসে জেগারের দাবি, সে রাতের উদ্দীপনা ভোলার নয়। হেসে বলেন, “ওই রকম আর দেখিনি। ওর পরেও আর নয়।” এক ফোঁটাও রক্ত না ঝরিয়ে যে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ, তার কৃতিত্ব সেই মানুষকেই দেন জেগার।

৯ নভেম্বরের রাতের ডিউটি সেরে জেগার ভোরে ফোন করেছিলেন বোনকে, “কাল সীমান্ত উন্মুক্ত করতে বলেছিলাম আমিই।” বোনের উত্তর, “খুব ভাল করেছো।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE