Advertisement
E-Paper

বাড়ছে অতিথি, সাজো সাজো রব জার্মানিতে

প্রবল যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মেয়েটা। গত কাল সকালেই দিলারা (নাম পরিবর্তিত) হাঙ্গেরি সীমান্ত থেকে এসে পৌঁছেছেন বন শহরে। পথে বিস্তর সমস্যাতেও পড়তে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তার থেকেও এখন বেশি সমস্যা দিলারার।

সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৫৫
পাশে আছি। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে মিছিল ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে। শনিবার। ছবি: এএফপি।

পাশে আছি। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে মিছিল ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে। শনিবার। ছবি: এএফপি।

প্রবল যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মেয়েটা। গত কাল সকালেই দিলারা (নাম পরিবর্তিত) হাঙ্গেরি সীমান্ত থেকে এসে পৌঁছেছেন বন শহরে। পথে বিস্তর সমস্যাতেও পড়তে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তার থেকেও এখন বেশি সমস্যা দিলারার। প্রসববেদনা উঠেছে তাঁর। শরণার্থী শিবিরেই কোনও মতে একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দিলারাকে সামাল দিতেই ছোটাছুটি করতে হচ্ছিল বছর তিরিশের সেরাকে। ওর এখন দম ফেলার সময়টুকুও নেই। শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য ওরা চার বন্ধু মিলে একটি ছোটখাটো সংগঠন গড়েছে। শরণার্থীদের প্রাথমিক স্বাগত জানিয়ে তাঁদের বিভিন্ন সরকারি দফতরে পৌঁছে দেওয়াই ওঁদের কাজ।

বন শহরের পৌরসভা ভবনের ঠিক উল্টো দিকেই ওঁদের অফিসটা। একটা স্কুল বাড়িকেই কোনও মতে সাজিয়ে গুছিয়ে শরণার্থী শিবির বানিয়ে তুলেছেন ওঁরা। পরিষ্কার বাথরুম, অতিরিক্ত খাট বিছানা, খাওয়াদাওয়ার সুব্যবস্থা নিয়ে শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সেরা এবং তাঁর বন্ধুরা। তবে, স্কুল বাড়িটায় ঢুকতেই দেখতে পেলাম অনেকেই বেশ অসুস্থ। সেরাজানাল, আতঙ্কের আবহাওয়া থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছেন না শরণার্থীরা। বিশেষত মধ্যবয়স্ক এবং শিশুরা। নিজেদের ভাষা, নিজেদের শেষ জমিটুকু খুইয়ে সেই সর্বহারার দল এখন নিঃস্ব। সেরার মতে, নতুন পরিবেশে নিজেদের এখনও মানিয়ে নিতে পারছেন না এই ‘নতুন অতিথিরা’।

তাই সাংবাদিকেরা যাতে তাঁদের ‘বিরক্ত’ না করেন, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। রেড ক্রসের মুখপাত্র ক্লাইন জানিয়েছেন, সাংবাদিকেরা বা দর্শনার্থীরা এঁদের কাছাকাছি আসতে পারবেন না। চাইলে, কোলন থেকে বিশেষ ছাড়পত্র নিয়ে আসতে হবে।

শরণার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অশোক আলেকজান্ডার শ্রীধরনও। আগামী রবিবার বনে মেয়র নির্বাচন। শাসকদলের হয়ে মেয়র পদপ্রার্থী ভারতীয় বংশোদ্ভূত অশোক। তিনিই যে মেয়র হচ্ছেন, তা এক প্রকার নিশ্চিত অশোক। বলেছেন, ‘‘গত বিশ বছর ধরে বন পুরসভার জন্য কাজ করেছি। মানুষ আমাকে চেনে। জিতব এমন ভরসা আছে।’’

অশোকের বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন এসপিডি দলের পিটার হ্রুহেনস্ট্রোট বাওয়ার। স্বভাবে-ব্যবহারে তিনি বেশ উন্নাসিক। অনেকের মতেই, ‘‘এই নাক-উঁচু স্বভাবই পতনের কারণ হবে বাওয়ারের।’’ আর অশোক যদি সত্যিই জিতে যান, তা হলে তিনিই হবেন জার্মানিতে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। ইতিহাস তৈরি হবে।

আর সেই ইতিহাস তৈরিতে যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, তার জন্য আটঘাট বেঁধে নেমে পড়েছেন অশোক। জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই শাসক দল এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে শরণার্থী বিষয়ে সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছে। তাঁরা এই প্রসঙ্গে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছেন অশোক। যদিও অনেকেই মনে করছেন শাসক বা বিরোধী, উভয়েই ভোটের মরসুমে, ‘মানুষের পাশে আছি’ এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চাইছেন। অশোকের মতে, বন শহরের মানুষ ‘নতুন অতিথি’দের আপ্যায়ন করতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সমস্যা নেই কোথাও।

‘‘সমস্যা সত্যিই নেই।’’, বললেন বাইশ বছরের আইয়া নামের এক সিরীয় তরুণী। গত তিন মাস ধরে বার্লিনই তাঁর ঘর-বাড়ি। ওঁর মা সিরিয়ার কঠিন পরিস্থিতিতে এক এক করে চার মেয়েকে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছেন। আইয়া অবশ্য জার্মানিতে এসেছিলেন তাঁর জার্মান প্রেমিকের আমন্ত্রণে। তিন মাস পরে নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে নিজের ভাষায় কথা বলতে পেরে উচ্ছ্বসিত আইয়া।

কিন্তু আগামী রবিবারকে কেন্দ্র করে চারিদিকে একটা চাপা উত্তেজনা। এক দিকে মেয়র নির্বাচন। অন্য দিকে, ওই দিনই বন শহরে আর এক দল শরণার্থীর এসে পৌঁছনোর কথা। এক উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার অবশ্য জানিয়েছেন, চিন্তার কোনও কারণ নেই। তাঁরা তৈরি।

সেরা, আইয়া সকলেই তৈরি নতুন অতিথিদের জন্য। সেরার অফিসের বাইরে তখন জ্বলজ্বল করছে একটা লেখা, ‘রিফিউজিস ওয়েলকাম’!

Europe migrant crisis Germany ISIS
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy