—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বাঙালির ঘরে দুর্গা আসার আগে আসেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ, মহালয়ার শারদপ্রাতে যাঁর ভদ্র কণ্ঠে বেজে ওঠে আলোকমঞ্জির।
অবিভক্ত ভারতের খুলনা জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে ছিল গ্রাম উথালী। বর্তমানে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নে কর্দমাক্ত মেঠো পথে ঘেরা সেই সুফলা সুজলা গ্রামটিতে আদি বাড়ি ছিল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র প্রাণপুরুষ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের। ভদ্রবাটীর পারিবারিক বংশপঞ্জিকা খুঁজতে গিয়ে কিছু প্রাচীন কাগজ পত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। প্রাচীন কালে এক উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী আজকের উথালীতে, তখন যার নাম ছিল বুড়ন দ্বীপ। এই গ্রামে ১০৮টি কোঠাবাড়ির সমন্বয়ে একটি বসতি গড়ে ওঠে। সাড়ে তিনশো বছর আগে সেইখানে শুরু হয়েছিল দুর্গাপূজা। একটা তালপাতায় ১১৭৬ বঙ্গাব্দের বাৎসরিক দুর্গাপুজোর হিসাব আবিস্কৃত হয়। চার দিনের পুজোয় মোট আট আনা খরচের কথা সেখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে উথালীর দুর্গাপূজার শুরু হয়েছিল তারও বহু আগে। প্রাচীন ভারতে ইতিহাসে মহাসামন্ত শশাঙ্ক বা তার আগেও ভদ্রবংশীয় মহাসামন্তদের অস্তমিত প্রদীপ উথালী শারদ সম্মিলনীর এই দুর্গা পুজো এ বারেও হচ্ছে।
ইংরেজি ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশদের কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার নেতৃত্বে বাংলার শাসকদের পরাজয়, ১৭৭০-এর ভয়ানক জলোচ্ছ্বাস, ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ, ১৯৪৭-এ ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ, এমনকি ১৯৭১-এ রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পত্তন— কখনও একটি বারের জন্য দুর্গাপুজো বাধাগ্রস্থ হয়নি উথালীর ভদ্রপল্লীতে।
উথালীর প্রতিমা ও পুজোর কিছু বৈশিষ্ঠ রয়েছে। মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে দেবী শৈলপুত্রী, দেবী মহাগৌরী, দেবী কাত্যায়নী, দেবী স্কন্ধমাতা, দেবী চন্দ্রঘণ্টা, দেবী ব্রহ্মচারিণী, দেবী কালরাত্রি, দেবী সিদ্ধিদাত্রী ও দেবী কুষ্মাণ্ডা— এই নয় রূপে নবদুর্গা কয়েকশো বছর ধরে পরম নিষ্ঠায় পুজিত হয়ে আসছেন এখানে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গিয়েছে বড় বড় দালানকোঠা, হাজার হাজার বিঘার সম্পত্তি। এখনও কালের সাক্ষী হয়ে মাত্র ১১ জন সদস্যদের হাত ধরে টিকে আছে উথালীর ভদ্রবংশের দুর্গাপূজা। একটি ছোট ঠাকুরদালান, সেখানে মঞ্চের উপরে সম্বৎসর রাখা থাকে ভদ্রকূলের সব চেয়ে জনপ্রিয় পুত্র বীরেন্দ্রকৃষ্ণের একটি মুখচ্ছবি। শরতে এই মঞ্চেই প্রতিমা এনে পুজো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy