Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘চাহিদার আকালে দায়ী সরকারই’

অর্থনীতির গবেষণায় র‌্যান্ডমাইজ়ড কন্ট্রোল ট্রায়াল (আরসিটি) পদ্ধতির প্রয়োগ করে এ বছর নোবেল পেয়েছেন অভিজিতেরা।

নোবেলের শহরে দুই বিজেতা, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলো। শনিবার স্টকহলমে। নিজস্ব চিত্র

নোবেলের শহরে দুই বিজেতা, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলো। শনিবার স্টকহলমে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
স্টকহলম শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:১২
Share: Save:

গত কয়েক বছরে সরকারের করা একের পর এক পদক্ষেপের জেরেই ভারতে চাহিদা তলানিতে এসে ঠেকেছে, এমনটাই অভিমত নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ দম্পতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস্থার দুফলোর। নোবেল পুরস্কার নিতে সুইডেনে এসে শনিবার আনন্দবাজারকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ বললেন, ‘‘গত কয়েক বছরে সরকার এমন কিছু পদক্ষেপ করেছে, যার ফলে সাধারণ ভাবে চাহিদার মন্দা দেখা দিয়েছে। কেইনস (অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনস) যে চাহিদার আকালের কথা বলেছিলেন, তার চিহ্নগুলো এখন ভারতীয় অর্থনীতিতে মোটের উপর স্পষ্ট।’’

অর্থনীতির গবেষণায় র‌্যান্ডমাইজ়ড কন্ট্রোল ট্রায়াল (আরসিটি) পদ্ধতির প্রয়োগ করে এ বছর নোবেল পেয়েছেন অভিজিতেরা। এ দিন অভিজিৎ বলেন, ‘‘আরসিটি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বেতনবৃদ্ধিতে ভাটার টান এসেছে। ফলে চাহিদা কমেছে, কর্মসংস্থান কমেছে। তৈরি হয়েছে বড় মাপের কেইনসীয় প্রভাব। আমার মনে হয়, কেইনস যে অর্থনৈতিক পতনের কথা বলেছিলেন, ভারত এখন তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারের উচিত কী ভাবে চাহিদা বাড়ানো যায়, তার পথ খুঁজে বার করা।’’

চাহিদা বাড়ানোর জন্য কেইনসের দাওয়াই হল খরচ বাড়ানো। অভিজিতের মতে, শিল্পপতিরা যখন সেই কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন, তখন সরকারকেই তা করতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সামনে বড় সমস্যা হল, রাজকোষ ঘাটতি বাজেটে ঘোষিত সীমার মধ্যে ধরে রাখা। জিএসটি এবং অন্যান্য খাতে আয় কমার ফলে অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার চার মাস আগেই সেই সীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিজিৎ অবশ্য মনে করেন, ঘাটতির থেকে চাহিদা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে আমি ততটা চিন্তিত নই। অর্থনীতির চাকায় গতি আনাটাই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।’’

ভারতের অর্থনীতিকে এই গতিহীনতা থেকে উদ্ধার করার জন্য তাঁদের দাওয়াই কী? এস্থার সকৌতুকে বলছেন, ‘‘আমরা জাদু ব্যবসায়ী নই!’’ আর অভিজিতের জবাব, ‘‘ব্যাপারটা ম্যাক্রো ইকনমিক্সের হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভাল।’’

কিন্তু অর্থনীতিবিদরা কি সত্যিই জলের মিস্ত্রির মতো অর্থনীতির ফুটোফাটা মেরামত করে দিতে পারেন? প্রশ্ন শুনেই হাসিতে ফেটে পড়েন অভিজিৎ। ‘‘জলের মিস্ত্রিকে কাজ করতে দেখেছেন কখনও! তারা গোটা বাড়িটা খুঁড়ে ফেলে। ভিতটাই পাল্টে দিতে চায়। অর্থনীতিতে আমি তেমনটা করার কথা বলি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhijit Banerjee Nobel Laureates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE