Advertisement
০৭ মে ২০২৪

কী ভাবে পগার পার সিড, প্রশ্ন ব্রিটেনে

পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে জামিন পেয়েছিলেন শেষ বার। হাতে সময় ছিল ২৪ ঘণ্টা। তার মধ্যেই বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে, চার সন্তান ও সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে সিরিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ ধর।

সিদ্ধার্থ ধর

সিদ্ধার্থ ধর

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:৫১
Share: Save:

পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে জামিন পেয়েছিলেন শেষ বার। হাতে সময় ছিল ২৪ ঘণ্টা। তার মধ্যেই বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে, চার সন্তান ও সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে সিরিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ ধর।

ব্রিটিশ পুলিশ ঠাহরও করতে পারেনি সন্ত্রাস, দেশদ্রোহের মতো অপরাধে জড়িত কেউ দেশ ছাড়ছে অবলীলায়। সিদ্ধার্থ লন্ডন ছাড়ার সপ্তাহ ছয়েক পর টনক নড়ে পুলিশের। জামিনের শর্ত পূরণ না করার জন্য পূর্ব লন্ডনে ওয়ালদামস্টোরের বাড়িতে সিদ্ধার্থর উদ্দেশে পাঠানো হয় নিয়মমাফিক চিঠি।

জবাব মেলেনি। তারও মাস খানেক পর সিদ্ধার্থের বাড়ি চড়াও হয় পুলিশ। বারবার দরজা ধাক্কিয়ে সাড়া মেলেনি। ফাঁকা বাড়ি থেকে খালি হাতেই ফিরেছিল তারা। সিদ্ধার্থের উদ্দেশে লেটার বক্সে ফেলে এসেছিল আরও একটি চিঠি। লেখা ছিল, ‘‘এমন কিছু কি ঘটেছে যা পুলিশের জানা প্রয়োজন?’’ চিঠিতে উল্লিখিত ফোন নম্বরে অবিলম্বে যোগাযোগ করতে বলা হয় সিদ্ধার্থকে। সেই শেষ।

পুলিশের কাছে সিদ্ধার্থ ধর যে অপরিচিত ছিলেন, এমন নয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে মৌলবাদের পক্ষে নিয়মিত মুখ খুলতে দেখা যেত তাঁকে। অংশ নিতেন মিছিল, প্রতিবাদ সভাতেও। এক-দু’বার নয়। মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছ’-ছ’বার গ্রেফতার হয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। এত কিছুর পরেও তাঁর নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার খবরে বিন্দুমাত্র হেলদোল ছিল না পুলিশ মহলে।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

ঝরঝরে বাংলায় বললেন সিদ্ধার্থর মা

‘সিড’-এর রুমায়েশ হওয়া মানতে পারছেন না বোন

কে এই সিদ্ধার্থ ধর?

মঙ্গলবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সিদ্ধার্থ ওরফে ‘জেহাদি সিড’-এর আইএস-যোগ সামনে আসায় ফের নড়েচড়ে বসেছে তারা। চাপে পড়ে ব্রিটিশ পুলিশ দাবি করছে, সিদ্ধার্থের নাড়ি-নক্ষত্রের খবর ছিল তাদের কাছে। তা-ও লক্ষ্য পূরণে এতটুকু বেগ পেতে হয়নি সিদ্ধার্থকে!

সালটা ২০১৪। সন্ত্রাসে মদত দেওয়া এবং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল মুহাজিরউনকে সমর্থনের অভিযোগে ১৫ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। জামিন পান পরের দিনই। ৩ অক্টোবরের মধ্যে তাঁকে পাসপোর্ট হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশ।

সময় নষ্ট করেননি সিদ্ধার্থ। জামিন পেয়েই দেশ ছাড়ার বিষয়ে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া বাস স্টেশন থেকে প্যারিস যাওয়ার বাস ধরেছিলেন। প্যারিস থেকে সোজা তুরস্ক। তার পর সীমান্ত পেরিয়ে এক্কেবারে সিরিয়া।

জামিনে মুক্ত অভিযুক্ত কী ভাবে এত সহজে ফাঁকি দিল পুলিশকে? সে প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশ মহলে। সিরিয়া পৌঁছে টুইটে ব্রিটেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নিজেই ব্যঙ্গ করেছিলেন সিদ্ধার্থ।

গাফিলতির অভিযোগ করছেন বিরোধী নেতা অ্যান্ডি বার্নহামও। বলেছেন, ‘‘বড়সড় কোনও ভুল হয়েছে।’’। ‘হাউস অফ কমন‌্স’-এ আজ চিঠি পেশ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। সমালোচনার মুখে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসা মে। উত্তর লন্ডনের পার্মাস গ্রিনের বাড়িতে আজ দফায় দফায় হানা দিয়েছে পুলিশ। ছোট মেয়ে কণিকাকে নিয়ে এখানেই থাকেন সিদ্ধার্থের মা সবিতা। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সিদ্ধার্থের ছোটবেলার এক বন্ধুকেও। উত্তর লন্ডনের এনফিল্ডের একটি স্কুলে একসঙ্গে পড়তেন ওঁরা দু’জন। এখন নিজস্ব ব্যবসা চালান।

সিদ্ধার্থের বদল মানতে পারছিলেন না বছর তিরিশের ওই যুবক। বলছিলেন, ‘‘মারলেও পাল্টা আঘাত করত না ও। হাসিখুশি ছিল। কোথা থেকে কী হয়ে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sidharth dhar isis impreachment security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE