অসম সাহসী গুপ্তচর নূর। ছবি সংগৃহীত।
নূর এনায়েত খান। স্পাই প্রিন্সেস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই মহিলা অন্যতম গুপ্তচর হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন। সেই নূরই কি এবার ব্রিটেনের সর্বোচ্চ অঙ্কের নোটে স্থান পেতে চলেছেন? ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ৫০ পাউন্ডের নোটে থাকতে পারে নূরের ছবি। এ নিয়েই লন্ডন-সহ ব্রিটেনজুড়ে শুরু হয়েছে প্রচার।
২০২০ সাল থেকে প্লাস্টিকের এই নোট চালু হওয়ার কথা ব্রিটেনে, যেখানে থাকবে নূরের ছবি, বলা হচ্ছে এমনটাই। নূরের ছবি যাতে নোটে স্থান পায়, তা নিয়ে জোরদার প্রচার শুরুও হয়ে গিয়েছে। যদি সত্যিই এই অসম সাহসী নারী স্থান পান ব্রিটেনের নোটে, তাহলে প্রথম বার ব্রিটিশ নোটে স্থান পাবে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর কোনও ব্যক্তিত্বের ছবি।
সমাজকর্মী জ়েহরা জাইদি ও ইতিহাসবিদ-সাংবাদিক ড্যান স্নো, ব্রিটেনের সংসদের পার্লামেন্টের বিদেশ বিভাগের চেয়ারম্যান টম তুগেনধাত প্রচার শুরু করেন, এই নোটে নূরের ছবি রাখার দাবি জানিয়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন অনেকের মনেই।
সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে পিটিশন স্বাক্ষর করা শুরু হয়েছে নূরের ছবি ব্রিটেনের নোটে স্থান পাওয়ার দাবি জানিয়ে। টুইটারে একটি পোস্ট করেছেন কংগ্রেস নেতা শশী তারুর। সেখানেও লেখা রয়েছে, ভারতীয় এক যোদ্ধা নারীর ছবি ব্রিটেনের নোটে দেখার দাবির কথা।
বর্তমানে ৫০ পাউন্ডের নোটে রয়েছে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবি।
কিন্তু কে ছিলেন নূর ওরফে ম্যাডেলেইন?
১৯১৪ সালে রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন নূর। নূরের বাবা হজরত এনায়েত খান ছিলেন সুফিবাদের শিক্ষক, মা পিরানি আমিনা বেগম ছিলেন মার্কিন শিক্ষাবিদ পিয়ার বার্নার্ডের বোন। নূর বেড়ে ওঠেন ফ্রান্সে। সোরবর্নে শিশু মনোবিজ্ঞান এবং প্যারিস কনজারভেটরিতে সঙ্গীত শেখেন। পরবর্তীতে সুফিবাদ নিয়ে গবেষণাও করেছেন অসম সাহসী এই নারী।
Want to see an Indian woman, a war hero, on the new British £50 note? Sign this petition! https://t.co/L0JVlXQjH6.
— Shashi Tharoor (@ShashiTharoor) October 21, 2018
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সময় তিনি ফ্রান্সের রেডক্রসে সেবিকা হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নূর এবং তার ভাই বেলায়েত মিত্রশক্তিকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন। ফ্রান্স ছিল মিত্রশক্তির অন্তর্ভুক্ত। দেশ থেকে নাৎসিদের বিতাড়িত করায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারলে ব্রিটি়শ এবং ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হবে- এমনটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তাই তিনি যোগ দেন উইমেন’স অক্সিলিয়ারি এয়ার ফোর্সে। সেখানে ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল হয় নূরকে। খুব দ্রুত কাজে দক্ষতা দেখিয়ে তিনি স্পেশাল অপারেশন এক্সিকিউটিভের ফ্রান্স শাখায় গুপ্তচর হিসেবে যোগ দেন। তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি নাৎসি অধ্যুষ্যিত ফ্রান্সে রেডিও অপারেটরের কাজ করতেন। প্যারিস ও লন্ডনের মধ্যে সেই সময় শেষ রেডিও অপারেটরও ছিলেন নূর।
আরও পড়ুন: ব্রিটিশ রাজ পরিবারের পোষা কাককে রক্তমাখানো বিস্কুট খাওয়ান ওয়ার্ডেন!
ব্রিটেনের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান জর্জ ক্রস পেয়েছিলেন যে ভারতীয় নারী, তিনি কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামেও সাহায্য করেছিলেন। কাজেই তাঁর ছবি নোটে স্থান পাওয়াটা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত।
নূর কীভাবে কাজ করেছিলেন সেই সময়?
নাৎসি অধ্যুষিত প্যারিসে যখন সব ওয়্যারলেস অপারেটররা একের পর এক গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখন নূরই ছিলেন একমাত্র যিনি জার্মানদের সাথে মিশে গিয়ে প্রতি মুহূর্তে লন্ডনের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন। গুপ্তবার্তা প্রেরণ করেছেন।
আরও পড়ুন: আন্ডারওয়াটার লাক্সারি রুম, পানশালা, রেস্তরাঁ, কী নেই এই গোয়া-মুম্বই ক্রুজে!
গেস্টাপো তাকে গ্রেফতারের জন্য বিশাল জাল ফেলে এবং একজন ফরাসি ডাবল এজেন্টকে ব্যবহার করে ১৯৪৩ সালের অক্টোবরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকেও দু’বার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন নূর। ১৯৪৪ সালে মাত্র তিরিশ বছর বয়সে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।
সারা বিশ্বের সেরা সব খবর বাংলায় পড়তে চোখ রাখতে পড়ুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy