প্রতীকী ছবি।
একশোরও বেশি অনাবাসী ভারতীয় মঙ্গলবার উড়ে এলেন ওয়াশিংটনে। দলটি এইচ-ওয়ান-বি ভিসা নিয়ে এ দেশে বসবাসকারী তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদারদের। মার্কিন কংগ্রেসের আইনপ্রণেতাদের সরাসরি নিজেদের দুর্বিপাকের কথাটা জানাতে তাঁদের আমেরিকার রাজধানীতে আসা। তাঁদের আর্জি, আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের জন্য প্রতিটি দেশের নাগরিকদের জন্য যে আলাদা আলাদা সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, সেই সীমারেখা তুলে দেওয়া হোক। নইলে তাঁদের পক্ষে গ্রিন কার্ড পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। ঝামেলায় পড়বেন তাঁদের সঙ্গে আসা পরিবারের অন্য লোকজন, বিশেষ করে তাঁদের ছেলেমেয়েরা।
প্রতি বছর, আমেরিকার নাগরিকত্ব ও অভিবাসন দফতর দক্ষ অনাবাসী ভারতীয়দের থেকে গ্রিন কার্ড-এর জন্য প্রায় এক লক্ষ আবেদন পায়। কিন্তু শেষমেশ গ্রিন কার্ডের আবেদন মঞ্জুর হয় দশ হাজারেরও কম অনাবাসীর। গ্রিন কার্ড হাতে আসা মানে আমেরিকায় স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার লক্ষ্যের দিকে এক ধাপ এগোনো।
জোটবদ্ধ ভাবে সমস্যাটির মোকাবিলা করতে অনাবাসীরা কয়েক মাস আগে ‘আমেরিকার দক্ষ অভিবাসীবৃন্দ’ নামের একটি সংগঠন গড়েছেন। এঁদের সভ্যসংখ্যা দেড় লক্ষ। আমেরিকার ২৫টি প্রদেশে রয়েছে সংগঠনের শাখা।
এই সংগঠনেরই অন্যতম সদস্য হর্ষিত চতুর। থাকেন হিউস্টনে। গ্রিন কার্ডের আবেদন করেছেন ২০১২-য়। কার্ড হাতে পাওয়া তো দূর অস্ত্, বিস্তর খোঁজখবর নিয়ে শুধু জেনেছেন, ৭০ বছর পর তাঁর কার্ড পাওয়ার পালা আসবে! কারণ, নতুন নিয়মে, প্রতিটি দেশ থেকে আসা কত জন মানুষ প্রতি বছর নাগরিকত্ব পাবেন, তা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দশ বছর ধরে আমেরিকাবাসী হলেও, ভারতে জন্মানোয়, লাইনে এত পিছিয়ে হর্ষিত। তিনি বলছেন, ‘‘আমার মতো অনেকেই এই আজব নিয়মের জাঁতাকলে পড়েছেন।’’
সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দলটির সভাপতি অনির্বাণ ঘোষ। ‘‘আইনত আমরা এ দেশে আছি, ভাল বেতন পাই, অনেক ডলার কর দিই। অন্য দেশে জন্মালে, এত দিনে নাগরিকত্ব পেয়ে যাওয়ারই কথা। শুধু ভারতীয়দের সঙ্গে এই বৈষম্য কেন? অনেক দিয়েছি আমরা এই দেশকে। এ বার মার্কিন কংগ্রেস আমাদের এই সমস্যার সমাধান করুক, এই দাবি নিয়েই এসেছি।’’
দলটির অনেকেই নাবালক সন্তানদের সঙ্গে এনেছেন। কারণ, তাঁরা চান মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা অবস্থাটার গুরুত্ব বুঝুন। হর্ষিত বলছেন, ‘‘আমাদের অনেকেরই ছেলেমেয়ে ভারতে জন্মেছে। নতুন নিয়মে সেই বাচ্চাগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে আন্দাজই করতেও ভয় হয়।’’
যেমন প্রীতি। দশ বছর আগে, ছ’ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে এ দেশে আসে। এখন বয়স ১৬। দলটির সঙ্গে এসেছেন তিনিও। হতাশ গলায় বলছেন, ‘‘২১ বছর হলেই, বাবার ভিসায় আমাকে আর এ দেশে থাকতে দেবে না। আমাকে আন্তর্জাতিক ছাত্র ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। সেই ভিসারও অনেক সীমাবদ্ধতা।
প্রচুর সুযোগ হারাব।’’ হর্ষিতরা চাইছেন, যে ছেলেমেয়েরা এক দশকেরও ওপর আমেরিকাতেই বড় হয়েছে, তাদের অন্তত এই নিয়মের ফাঁস থেকে কিছুটা রেহাই দেওয়া হোক।
হর্ষিতের প্রশ্ন, ‘‘চাকরি দেওয়ার সময় অগ্রাধিকার পেয়েছিল আমাদের দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা। তা হলে, গ্রিন কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কোথায় জন্মেছিলাম, সেই বিষয়টিকে এত গুরুত্ব ও পক্ষপাতিত্ব কেন? এ কেমন অবিচার?’’
অবস্থা কতটা সঙ্গিন, বুঝতে প্রীতির একটি মন্তব্যই যথেষ্ট। ‘‘লোকজন আমাদের দেখলে হাসে আর বলে, ওই যে স্বপ্ন দেখা এইচ ফোর-এর দল!’’ চাকরি করতে আমেরিকায় যাঁরা যান, তাঁদের সঙ্গে গিয়ে থাকতে স্ত্রী ও ২১ বছরের নীচের ছেলেমেয়েদের যে ভিসা দেওয়া হয়, তাই হল এইচ-ফোর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy