দু’বছর আগে মে মাসে এক তরুণ মার্কিন যুবক ট্রাক ভর্তি বিস্ফোরক নিয়ে সিরিয়ায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। তার অনলাইন পোস্ট ঘেঁটে এবং ঘনিষ্ঠদের জেরা করে এফবিআই জানার চেষ্টা করেছিল, আমেরিকায় এমন হামলা চালানোর মতো তার কোনও সঙ্গী রয়েছে কি না। এই জেরার তালিকাতেই ছিল ওমর মতিনের নাম। তখন সে নিরাপত্তা রক্ষীর চাকরি করে। সিরিয়ায় হামলা চালানো যুবকের সঙ্গে এক মসজিদে যাতায়াত ছিল মতিনের। তাই গোয়েন্দাদের নজর পড়ে তার উপরে। সন্দেহজনক কিছু চোখে না পড়ায় সেই নজর সরেও যায়। দু’বছর পরে সেই মতিনই ঘাতক হিসেবে ফিরল ফ্লোরিডার নাইটক্লাবে।
তার সঙ্গে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর যোগাযোগ আছে কি নেই, চূড়ান্ত কিছু বলেননি তদন্তকারীরা। কিন্তু মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দাবি, মতিন ৯১১-এ ফোন করে নিজেকে আইএসের ভাবাদর্শে দীক্ষিত বলেই দাবি করেছিল। যদিও মতিনের সঙ্গে আইএস যোগের প্রমাণ নেই বলেই গত কাল জানান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু সে একা যে ভয়াল হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তাতে আইএস-যোগ নস্যাৎও করতে পারছেন না মার্কিন গোয়েন্দারা। তাঁরা বলছেন, সরাসরি আইএসের নেতার নির্দেশে মতিন এই কাজ করেছে, এমনটা হয়তো নয়। তবে সে আইএসের মতাদর্শে আংশিক হলেও প্রভাবিত। কারণ এই ধরনের ‘একলা জঙ্গি’ (লোন উল্ফ) হিসেবে হানা দেওয়াকে উৎসাহ দেয় আইএস। কারও যদি ধর্মীয় মৌলবাদে এতটুকু আগ্রহ রয়েছে বলে তাদের মনে হয়, তাকে ভবিষ্যতে একাই হামলা চালাতে উদ্বুদ্ধ করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। মতিনের ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছে বলে সন্দেহ এফবিআইয়ের।
এখানেই আইএস আলাদা। আল কায়দা যেমন সংগঠিত গোষ্ঠী। বড়সড় পরিকল্পনা গড়েই তারা মাঠে নেমেছে বরাবর। কিন্তু আইএস সে পথে না হেঁটে লাগাতার হামলা চালানোর পক্ষপাতী। তা সে এক জন মাত্র জঙ্গি হলেও কুছ পরোয়া নেই। তাই মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে, আইএসের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ভেবে যাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে, তাদের অনেকেই হয়তো সেই অর্থে জঙ্গি হামলা সম্পর্কে তেমন অভিজ্ঞ নয়। কিন্তু লাভটা আইএসের। একক হামলাতেও তাদেরই নাম ছড়াচ্ছে বিশ্বে। দেশ বা সংগঠনের গণ্ডি পেরিয়ে একটাই ‘আদর্শ’ ঐক্যবদ্ধ করছে তাদের— ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
গোয়েন্দাদের একাংশ বলছেন, সব সময় যে অনলাইনেই মতাদর্শ ছড়াচ্ছে, তা নয়। নিউ ইয়র্কের ফর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় নিরাপত্তা কেন্দ্রের ক্যারেন গ্রিনবার্গ বলছেন, ‘‘আমরা অনলাইনে কী হচ্ছে তা নিয়ে ভাবিত। কিন্তু বাস্তব দুনিয়ায় দু’টো লোক কথা বলেও যে হামলা চালাতে পারে, সেটা ভুলে যাচ্ছি।’’ এফবিআই অধিকর্তা জেমস কমি বলছেন, ‘‘ছোট ছোট গোষ্ঠীতে মিশে ওরা যদি ভাবাদর্শ প্রচারের কাজ চালায়, কে জানবে?’’ গত ডিসেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নাদিনোয় হত্যাকাণ্ডে দেখা যায় এক দম্পতিকে। গত কাল রাতে দক্ষিণ প্যারিসে এক আইএস হামলাকারী খুন করেছে পুলিশ কম্যান্ডার ও তাঁর স্ত্রীকে। সন্দেহ তাই পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়াও অসম্ভব।