E-Paper

শাসকের মুখে উন্নয়ন, বিরোধী প্রশ্নে কর্মসংস্থান

গত বিধানসভা নির্বাচনেই শ্রীরামপুর নিজেদের দখলে নেয় তৃণমূল। ওই নির্বাচনে কবীরশঙ্কর শ্রীরামপুরে ২৩ হাজারের বেশি ভোটে হেরেছিলেন তৃণমূলের সুদীপ্ত রায়ের কাছে।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ০৯:৩৫
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

গত লোকসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুর থেকে প্রায় এক লক্ষ ভোটে জিতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, শ্রীরামপুর আর চাঁপদানি তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। শ্রীরামপুর বিধানসভায় আড়াই হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিল বিজেপি। চাঁপদানি বিধানসভায় দু’হাজারেরও কম ভোটে কল্যাণ এগিয়েছিলেন। পিছিয়ে ছিলেন চাঁপদানি পুরসভাতেও। এ ক্ষেত্রেও গেরুয়া শিবির এগিয়েছিল।

এ বার তরুণ প্রার্থী দীপ্সিতা ধরকে পেয়ে সিপিএম তথা বামেরা উজ্জীবিত। বিজেপির সংগঠন ততটা দড় না-হলেও রিষড়া, চাঁপদানির হিন্দি বলয়ে এবং শ্রীরামপুরের একাংশে গেরুয়া প্রভাব রয়েছে। বিজেপি প্রার্থী কবীরশঙ্কর বসুও খাটছেন। তবে, তৃণমূল আশাবাদী, শ্রীরামপুর ও চাঁপদানি বিধানসভাতেই ভাল ‘লিড’ মিলবে। কোন অঙ্কে?

ঘটনা, গত বিধানসভা নির্বাচনেই শ্রীরামপুর নিজেদের দখলে নেয় তৃণমূল। ওই নির্বাচনে কবীরশঙ্কর শ্রীরামপুরে ২৩ হাজারের বেশি ভোটে হেরেছিলেন তৃণমূলের সুদীপ্ত রায়ের কাছে। কল্যাণ প্রচারে জান লড়িয়েছিলেন। এ বার তৃণমূলের দাবি, বাজিমাত হবে কাজ এবং সাংগঠনিক শক্তিতে। কল্যাণ গলা ফাটাচ্ছেন নাগরিক পরিষেবা নিয়ে। দাবি করছেন, করোনা-পর্বে বিরোধীদের দেখে মেলেনি। তিনি চষে বেরিয়েছেন। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে গ্রাম থেকে শেওড়াফুলির যৌনপল্লিতে খাদ্যসামগ্রী বিলিয়েছেন। কল্যাণ-ঘনিষ্ঠদের কথায়, পুজোআর্চা থেকে পরব, ডেঙ্গি থেকে করোনা— সবেতেই ‘দাদা’ হাজির। বিরোধীরা এসেছেন, ‘ভোটপাখি’ হয়ে! হেরে বিদায় নেবেন।

ঘাসফুল শিবিরের যুক্তি ‘ছেঁদো’ বলে ওড়াচ্ছে বিরোধীরা। দীপ্সিতার পাল্টা বক্তব্য, করোনাকালে দিকে দিকে ‘রেড ভলান্টিয়াররা’ই মানুষের সাহায্যে ছুটে বেরিয়েছেন। তৃণমূলের ‘উন্নয়নের’ দাবি নস্যাৎ করে কবীরশঙ্কর বলছেন, ‘মোদীর গ্যারান্টি’র দিকে তাকিয়ে ভোট হবে। ‘লিড’ পাবে বিজেপিই। আবার সিপিএমের বক্তব্য, কর্মসংস্থানের দশা, দুর্নীতি, ধর্মীয় মেরুকরণের প্রতিবাদে মানুষ দীপ্সিতার পাশেই থাকবেন।

শ্রীরামপুর-চাঁপদানি বিধানসভায় রাস্তাঘাট, আলো, জলের উন্নতি হয়েছে। ওয়ালশ হাসপাতাল এখন সুপার স্পেশ্যালিটি। ডেনিস আমলের ধ্বংসপ্রায় একাধিক ভবন বেঁচে উঠেছে। মাহেশের জগন্নাথ মন্দির সংস্কার হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নও অনেক। বহু কোটি ব্যয়ে শ্রীরামপুরে বাস টার্মিনাস পেলেও বাসশিল্পই ধুঁকছে। প্রতিশ্রুতি থাকলেও টার্মিনাসের ভবনে কিছুই হয়নি। পুরসভা বিজ্ঞাপন দিয়েছে, যদি বাণিজ্যিক সংস্থা ভাড়া নেয়! জিটি রোড সংস্কার হলেও টোটোর দাপটে অন্য যানবাহনের গতি মন্থর হয়েছে। শহর আবাসনে ভরেছে। বন্ধ কারখানার জমিতেও বহুতল। শপিং মল, হোটেল-রেস্তরাঁ, বৈদ্যুতিন সামগ্রীর সংস্থার ছড়াছড়িতে আধুনিকতা এসেছে। তবে, ওয়েলিংটন এবং ইন্ডিয়া জুট মিল দীর্ঘদিন বন্ধ থেকেছে। সিল্ক হাব অধরাই। দিল্লি রোডের ধারে কল-কারখানা চলছে ভাল-মন্দ‌ে। এই সড়কের পাশে বড় বড় গুদাম হচ্ছে। পিয়ারাপুর-সহ নানা এলাকায় নিকাশির দফারফা, সঙ্কটে চাষবাস। এশিয়ায় মেয়েদের অন্যতম পুরনো বিদ্যালয় মিশন গার্লসে হান্না মার্শম্যানের স্মৃতিধন্য মৃতপ্রায় ভবন বাঁচবে কি না, প্রশ্ন।

শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটী, চাঁপদানিতে আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ নেই। বৈদ্যবাটীতে উড়ালপুল হয়নি। অপরূপা মাতৃসদন নতুন করে চালু হয়নি। শ্রীরামপুর স্টেডিয়াম বেঁচেবর্তে ভাঙা গ্যালারি, জীর্ণ ভবন, খটখটে মাঠ নিয়ে। তবে, নতুন কলেবরে চালু হয়েছে রিষড়া রবীন্দ্রভবন। এখানে মাতৃসদনও খুলেছে নতুন চেহারায়। কিন্তু সেবাসদন বন্ধই। যদিও শাসক শিবিরের দাবি, এই হাসপাতালের পুনরুজ্জীবন সময়ের অপেক্ষা। শিলান্যাসের পরে ১৪ বছরেও শ্রীরামপুরে দ্বিতীয় সাবওয়ে তৈরি করেনি রেল। তবে শেওড়াফুলি স্টেশন সাজছে। দাবি রয়েছে গঙ্গার উপরে সেতুর, যাতে ব্যারাকপুর তথা উত্তর ২৪ পরগনার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়।

কল্যাণ বলেন, ‘‘বাস টার্মিনাসের বাকি পরিকল্পনা পূরণে এবং পুরী ও বিহার শরিফ পর্যন্ত বাস চালুর চেষ্টা করব। শ্রীরামপুর-দিঘা বাস চলছে। সর্বত্র প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। করোনা-পর্বে কিছুটা সমস্যা ছিল। পরে ফের জোরকদমে কাজ হয়েছে। আরও হবে। সাংসদ তহবিলের কাজ ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প এনেছি তদ্বির করে। সংসদে বিভিন্ন কাজের জন্য সওয়াল করেছি।’’ দীপ্সিতা-কবীরশঙ্করদের পাল্টা দাবি, কর্মসংস্থান, বন্ধ কল-কারখানা, শ্রমিকের সমস্যা—ইত্যাদির সুরাহা হয়নি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Howrah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy