এলাকা হারাচ্ছে আইসিস।
খিলাফত কি অচিরেই দিবাস্বপ্নে পরিণত হবে? আশঙ্কাটা ক্রমেই গেড়ে বসছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নেতাদের মনে। এর জন্য জেহাদিদের প্রস্তুত করতে শুরু করেছে তারা। আর আইএস–এর এই রূপান্তর নিয়ে শঙ্কার ভুগছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। তাঁদের আশঙ্কা, নবরূপে আইএস-এর আবির্ভাব হয়ে গিয়েছে। ইস্তানবুল বিমানবন্দরে হানা, বাগদাদের বাজারে বিস্ফোরণ, ঢাকার গুলশনে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা— আইএস-এর নতুন রূপেরই প্রকাশ।
কিছু দিন আগেই ইরাকের ফালুজা শহরের পতন হয়েছে। এর পরে ইরাকে আইএস-এর একমাত্র ঘাঁটি টিকে আছে শুধুমাত্র মসুল শহরে। মসুল হামলার জন্য ইরাকি সেনা, কুর্দ বাহিনী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তথ্য ও সামরিক সাহায্য দিচ্ছে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী বিশ্ব। সিরিয়ায় আইএস-এর স্বঘোষিত রাজধানী রাকায় লাগাতার বিমান হানা চালাচ্ছে আমেরিকা, রাশিয়া। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, গত ছ’মাসে নিজেদের অধিকারে থাকা ১২ শতাংশ জমি হারিয়েছে আইএস। আইএস-এর ভাঁড়ারেও টান। জেহাদিদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে আইএস। কয়েক মাস আগেই তাই জেহাদিদের বেতন অর্ধেক করতে বাধ্য হয় আইএস কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে সাঁড়াশি চাপের মুখে খিলাফত যে টলমল করছে, তা বকলমে স্বীকার করে নিচ্ছে আইএস নেতারা।
আইএস-এর সাপ্তাহিক নিউজলেটার আল-নাবায় মুখপাত্র আবু মহম্মদ আল-আদনানি পরোক্ষে খিলাফতের সঙ্কটজনক অবস্থাকে স্বীকার করে নিয়েছেন। জেহাদিদের মনোবল অটুট রাখতে আদনানি ২০০৮-এর কথা তুলে ধরেছেন। ২০০৮-এ ইরাকি ও মার্কিন যৌথ আক্রমণে ইরাকে আল-কায়দা প্রায় মুছে যাওয়ার পরেও আইএস যে ভাবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল, সে কথা মনে করে দিয়েছেন তিনি। রাকা না থাকলেও আইএস-এর সংগ্রাম চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু জেহাদিদের মধ্যে আইএস-এর এই বিপুল জনপ্রিয়তার কারণ তো খিলাফতের স্বপ্ন। আবু-বকরের দেখানো খিলাফতের স্বপ্নের টানে তো জেহাদিদের বিপুল স্রোত সিরিয়া ও ইরাকে জমা হয়েছিল। কঠোর ইসলামিক অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করা ছিল মূল লক্ষ্য। পশ্চিমী বিশ্বকে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া, আল-কায়দার এই নীতি থেকে সরে আসে আইএস। এই প্রশ্নে আল-কায়দা থেকে নিজের দলকে বিছিন্ন করে নেন আবু-বকর। ক্রমেই দেখা যায় আবু-বকরের পরিকল্পনা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। ২০১৪-এর মাঝামাঝি থেকে ঝড়ের বেগে সিরিয়া ও ইরাকের বিপুল অংশের দখল নেয় আইএস। তেল, প্রত্নসামগ্রী বেচে বিপুল অর্থের ভাঁড়ার ঘরে তোলে আইএস। এই চোখ ধাঁধানো সাফল্যের টানে শুধু আরব নয়, পশ্চিমী বিশ্ব থেকেও জেহাদিদের ঢল নামে। সেই সময়ে আইএস-কে বিশ্বের এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন সেনাপ্রধান মার্টিন ডেম্পসি।
সেই আইএস-এর জেহাদিরা এখন বেশ কিছু জায়গায় রণে ভঙ্গ দিচ্ছে। বেশ কিছু নেতাকে নিয়ে সাধারণ জেহাদিদের মোহভঙ্গ হয়েছে। একই সঙ্গে একাধিক শত্রুর বিরুদ্ধে আইএস-এর যুদ্ধে নামার নীতিকে অনেক জেহাদি প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। সিরিয়ার বেশ কিছু জায়গায় ইন্টারনেট কাফে, ডিশ টিভি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে আইএস। আদদানিও জানিয়েছে, আইএস-এর রাজধানী রাকা বা উত্তর-আফ্রিকার যে কোনও দেশে থাকতে পারে। তাতে আইএস-এর কিছু আসে যাবে না। তবে রাকা হারালে তার বদলা নেওয়া হবে বলেও আদনানি হুমকি দিয়েছে।
কিন্তু এই অবস্থায় আইএসের নতুন নীতি কি হবে? আদনানির ডাক, এ বার আক্রমণ শক্রর ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে। তুরস্কের ইস্তানবুল থেকে ঢাকার গুলশন তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। যে বিপুল জেহাদির স্রোত সিরিয়া, ইরাকে ভিড় করেছে তাদের এ বার ঘরে ফেরার পালা। পোড় খাওয়া এই জেহাদিদের থেকেই আঘাতের আশঙ্কা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধীরে ধীরে আল-কায়দার মতো শত্রুর ঘরে গিয়ে আক্রমণ চালানোর দিকে ঝুঁকছে আইএস। প্যারিস থেকে তা শুরু হয়ে গিয়েছে। এ যেন আইএস-এর আল-কায়দায় রূপান্তর। কিন্তু তা আল-কায়দার থেকেও অনেক ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে বলে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা। আল-কায়দার মতো হায়ারার্কি নেই আইএস। বিছিন্ন ভাবে নানা সেল কাজ করে। ফলে এদের আক্রমণ ঠেকানো কঠিন। নিজভূম থেকে আইএস-কে মুছে দেওয়া সম্ভব হলেও জেহাদিদের মনভূম থেকে এই মতাদর্শকে সরানো যে কার্যত অসম্ভব তা মেনে নিয়েছেন গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন:
‘জেহাদ অলিম্পিক’ দিয়ে নৃশংসতা ঢাকার চেষ্টায় আইএস জঙ্গিরা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy