ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এই মন্দিরই।
জমি দখলের লড়াইয়ে সিরিয়ায় ফের জঙ্গি-নিশানায় ইতিহাস। অশীতিপর পুরাতাত্ত্বিকের মুণ্ডচ্ছেদের পর এ বার আইএসের ডিনামাইটে উড়ল পালমাইরার দু’হাজার বছরের পুরনো বালশামিন মন্দির। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গত কাল রাতেই মন্দিরে হামলা চালায় জঙ্গিরা। বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক অবশ্য তার দিন কয়েক আগে থেকেই সেখানে মজুত করছিল আইএস। দেশের একটি মানবাধিকার সংগঠন অবশ্য বলছে, এক মাস আগেই এই মন্দির ভেঙেছে জঙ্গিরা। ঘটনায় হতাহতের খবর না মিললেও, গত চার মাসের জঙ্গি তাণ্ডবে ইউনেস্কোর ‘হেরিটেজ সাইট’ পালমাইরার ভিত যে টালমাটাল, মানছে প্রশাসনও।
বিস্ফোরণের পর দু’হাজার বছরের পুরনো গ্রেকো-রোমান স্থাপত্যের নিদর্শন এই মন্দির যেন আজ ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে। তুরস্কের মানবাধিকার কর্মী ওসামা আল-খাতিব সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘সৌধশহর এই পালমাইরাতেই আমার ছেলেবেলা কেটেছে। আজ আর এই শহরটার দিকে তাকানো যায় না। হাতুড়ি আর বুল়ডোজার চালিয়ে একের পর এর সৌধ ভেঙে ধুলোয় মেশাচ্ছে আইএস। ইতিহাসের বই থেকে পুরো একটা অধ্যায়-ই যেন মুছে ফেলতে চাইছে জঙ্গিরা।’’ মন্দিরে হামলার চূড়ান্ত নিন্দা করে আইএস-কে ফের ‘যুদ্ধ-অপরাধী’-র তকমা দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সৌধশহরের উপর এই সাম্প্রতিক হামলাকে ‘মানবতার উপর আঘাত’ বলেও আজ মন্তব্য করেছেন তারা।
গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই ইরাক ও সিরিয়ায় নিজেদের জেহাদি চৌহদ্দি আরও বাড়াতে তৎপর আইএস। দীর্ঘদিন ধরে তক্কে তক্কে থেকে চলতি বছরের মে মাসে ইরাকি সেনাকে হটিয়ে পালমাইরার দখল নেয় জঙ্গিরা। অভিযোগ, তার পর থেকেই সিরিয়ার এই বহু প্রাচীন সৌধশহরে শুরু হয় তাণ্ডব। আইএসের হামলায় ইরাকের মসুল, নিমরুদ, হাতরা শহর ধুলোয় মিশেছে আগেই। একই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পালমাইরাকে ঘিরেও।
কিন্তু কেন? অভিযোগ, নিজেদের ইসলামি ঐতিহ্যের বাইরে আর সব কিছু নিশ্চিহ্ন করাই আইএসের ঘোষিত নীতি। একই সঙ্গে জুড়েছে চোরাপথে প্রত্নসামগ্রী বেচে বিপুল মুনাফার লোভ। ঠিক সেই কারণেই আইএসের নিশানায় কখনও জাদুঘরের বহুমূল্য প্রত্নসামগ্রী। কখনও গ্রন্থাগারের হাজার হাজার বই। সম্প্রতি পালমাইরার দু’টি মসজিদ এবং একটি মঠে ব্যাপক ভাঙচুরের ভিডিও পোস্ট করেছিল জঙ্গিরা। এ বার সেই তালিকায় জুড়ে গেল মন্দিরও।
শহর দখলের পর অবশ্য জঙ্গিরা দাবি করেছিল, পালমাইরার কোনও ক্ষতি তারা চায় না। কিন্তু সেই দাবি যে ভিত্তিহীন, তার প্রমাণ মেলে গত সপ্তাহেই। পালমাইরার পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন ডিরেক্টর খালিদ আল আসাদকে মাথা কেটে খুন করে জঙ্গিরা। এর পিছনে পালমাইরা লুঠের ছকই দেখছেন স্থানীয়রা। জঙ্গিদের সন্দেহ, ঐতিহাসিক এই শহরে এখনও বিপুল সোনা-জহরত লুকনো আছে। অনুমান করা হচ্ছে, তার হদিস পেতেই আসাদের উপর প্রথমে চাপ তৈরি করা হয়। পরে ব্যর্থ হয়েই তাঁকে খুন করে আইএস।
তাই বালশামিন মন্দির ধ্বংসের পিছনেও তেমনই কোনও সম্পদ লুঠের চক্রান্ত আছে কি না, খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। আবার এই প্রশাসনেরই একাংশের দাবি, পালমাইরায় কোথাও কোনও লুকনো সম্পদ নেই। তবু জঙ্গিদের ধারাবাহিক হামলায় পালমাইরার ইতিহাস যে ধ্বংসের মুখে, মানছেন সবাই। মাস চারেক আগেই অ্যাসিরীয় সভ্যতার বিখ্যাত রাজধানী শহর, ২৭০০ বছরের পুরনো খোরসাবাদ তছনছ হয়ে গিয়েছে। এ বার কি সেই তালিকায় পালমাইরার নাম জুড়তে চলেছে— সিঁদুরে মেঘ সিরিয়ার আকাশে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy