(বাঁ দিকে) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। ছবি: রয়টার্স।
রুশ প্রেসিডেন্ট ও আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বক্তব্য শেষ হতেই তাঁরা সরে আসেন মাইক্রোফোনের কাছ থেকে। হাসি মুখে একে অপরের সঙ্গে হাত মেলান। তার পর দু’জনেই বেরিয়ে যান সাংবাদিকদের সামনে থেকে। সাংবাদিকদের বার বার প্রশ্ন সত্ত্বেও কোনও উত্তর মেলেনি ট্রাম্প বা পুতিনের কাছ থেকে।
শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগোনো হচ্ছে। তিনি জানান, এর পরে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ও ন্যাটো জোট সদস্যদের সঙ্গে এই বিষয়ে তিনি আরও আলোচনা করবেন। সকলকে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। তিনি জানান, এ দিনের বৈঠকে ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হলেও ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে’ পৌঁছনো যায়নি। তবে এই আলোচনার সূত্র ধরেই এগিয়ে যাওয়ার আরও ‘ভাল সুযোগ’ আছে বলেও দাবি করেন ট্রাম্প।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুরু করেছেন সাংবাদিক বৈঠক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁকে (পুতিন) হাসি মুখে প্রথমে বক্তব্য পেশ করতে বলেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমেরিকা ও রাশিয়া সমুদ্র দ্বারা বিভক্ত হলেও প্রতিবেশী।’’ তিনি আরও জানান, আমেরিকার কাছে বিক্রি হওয়ার আগে রাশিয়ারই অংশ ছিল আলাস্কা। যুক্ত রাষ্ট্রে রাশিয়ান অর্থোডক্স গির্জার প্রসঙ্গ তুলনা করে তিনি দাবি করেন, দুই দেশের ঐতিহ্যগত মিল দুটি দেশকে পারস্পরিক সহযোগিতা করবে।
তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘সংঘর্ষ থেকে সংলাপে যাওয়ার সময় এসেছে।’’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ও স্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য সংঘাতের মূল কারণগুলিকে শেষ করতে হবে। তাঁর বার্তা, ‘‘আশা করা যায় ইউক্রেনবাসী ও রাশিয়াবাসী কেউই শান্তি প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করবে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।’’
যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিশেষ ভূমিকা নেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে আরও একবার ধন্যবাদ জানান পুতিন।
সিএনএন ও বিবিসি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বৈঠক শেষ হয়েছে। দীর্ঘ তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে বৈঠক। ক্রেমলিন সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে, মূল বিষয়ের উপরেই গুরুত্বপূর্ণ এই আলোচনা সীমাবদ্ধ ছিল।
বৈঠক শেষের পরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে হাসি মুখে জানিয়েছেন, বৈঠক ‘দুর্দান্ত’ হয়েছে।
এ বারে সাংবাদিক বৈঠক করবেন, দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। তবে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা, পুতিনকে দেখে ট্রাম্পের হাততালি বা দুই রাষ্ট্রপ্রধানের এক গাড়িতে যাওয়া, রেড কার্পেট ব্যবস্থা দেখে ইউক্রেনবাসীদের মধ্যে হতাশা দেখা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প আগেই জানিয়েছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তিচুক্তির পাশাপাশি পারমাবিক চুক্তি নিয়েও আলোচনা হবে। এই দুই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে দুই দেশ তা জানতে অপেক্ষা করছে গোটা বিশ্ব।
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব আকাশে রাশিয়ার ড্রোন দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। ইউক্রেন প্রশাসনের তরফে সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশে সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছিল।
অন্য দিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা দফতরের দাবি, রোস্তভ অঞ্চলে ইউক্রেনের চারটি ড্রোন নামিয়েছে প্রতিরক্ষাবাহিনী।
ইউক্রেনের আইনপ্রণেতা হ্যালিনা ইয়ানচেঙ্কো জানান, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে যুদ্ধবিরতির ‘শর্ত’ হিসাবে ‘ভূমি বিনিময়’ (ল্যান্ড সোয়াপিং)-এর প্রস্তাব এবং তা নিয়ে যে কোনও সিদ্ধান্তে ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
প্রসঙ্গত, বৈঠকে ‘ভূমি বিনিময়’ (ল্যান্ড সোয়াপিং)-এর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল মস্কো। ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার হাতে নিজেদের ভূখণ্ডের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, পুতিনের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে ২০১৪ সালে ছিনিয়ে নেওয়া ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ক্রাইমিয়া এবং ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের অন্যতম ভরকেন্দ্র ডেনেৎস্ক-ওল্ডবাস্ট এবং লুহানস্ক অঞ্চল (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়)। ডনবাসের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা বর্তমানে রাশিয়ার দখলে। গত তিন মাসে ওই এলাকায় নির্ণায়ক অগ্রগতি হয়েছে রুশ বাহিনীর। তাদের হামলায় পতনের মুখে ডনেৎস্কের ডেব্রোপিলিয়া শহর।
ক্রেমলিন মুখপাত্র জানিয়েছেনে, এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যান্ড্রু বেলোসভও। বর্তমানে ত্রি-স্তরীয় বৈঠক চলছে। উপস্থিত আছেন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিদেশমন্ত্রী। আলোচনায় লিপ্ত রাশিয়ার বিদেশ উপদেষ্টা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।
আলাস্কার রাস্তায় দেখা গিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থনে জমায়েত করেছেন জনসাধারণ। উল্লেখ্যে, বৃহস্পতিবার এখানেই ইউক্রেনের সমর্থনেও জমায়েত হয়েছিল। এ দিন দেখা গিয়েছে, মানুষের হাতে আমেরিকার পতাকা এবং ট্রাম্পের ছবি দেওয়া প্লাকার্ড।
দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের দীর্ঘ এক ঘণ্টা অতিক্রান্ত হল। এখনও চলছে বৈঠক। ক্রেমলিন সূত্রে খবর, আনুমানিক ছ’ঘণ্টা ধরে চলতে পারে এই বৈঠক। দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে উপস্থিত আছে দুই দেশেরই প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে দুই প্রেসিডন্টের মন্তব্যের অপেক্ষায় রয়েছেন সাংবাদিকেরাও।
শান্তিচুক্তি বৈঠকে সামিল হতে চাইলেন জ়েলেনস্কি। যখন রাশিয়া এবং আমেরিকা বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সেই বৈঠককে স্বাগত জানিয়ে সমাজমাধ্যমে বলেন, “কার্যকরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কিভকে বৈঠকে সামিল করতে হবে।” রাশিয়াকে নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “যে যুদ্ধ তারা শুরু করেছিল, তা শীঘ্রই শেষ করতে হবে।” তাঁর দাবি, বৈঠকের দিনেও রাশিয়া ‘হত্যা’ চলিয়েছে যা ‘অনেক কিছু’ বলে। তবুও তিনি মনে করেন এই যুদ্ধ শেষ হওয়া প্রয়োজন।
বৈঠকের আগে পুতিনকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। প্রশ্ন আসতে থাকে তিনি যুদ্ধবিরতিতে রাজি কি না? সাধারণ নাগরিকদের হত্যা না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও কীসের ভিত্তিতে ট্রাম্প তাঁর কথা বিশ্বাস করবেন? ইত্যাদি। প্রথম দিকে এই সব প্রশ্নের উত্তর রুশ প্রেসিডেন্ট না দিলেও, বার বার সাংদিকদের প্রশ্নের পরে তাঁকে চিৎকার করে কিছু বলতে দেখা যায়। কিন্তু তিনি ঠিক কী বলেছেন তা স্পষ্ট নয়।
ভারতীয় সময় শুক্রবার রাত ১টা ১০ নাগাদ বৈঠকের জন্য দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান মুখোমুখি বসেছেন। তবে, এখনও প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়নি। সমগ্র বিশ্ব অপেক্ষায় রয়েছে বৈঠকের ফলাফল জানতে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও, এই বৈঠক প্রসঙ্গে আমেরিকার প্রতি আস্থা রেখে তিনি জানিয়েছিলেন, পুরো বিষয়টাই আমেরিকার উপরে নির্ভর করছে। রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
বৈঠকের আগে শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে জ়েলেনস্কিকে সমাজমাধ্যমে লেখেন, “আমাদের দেশ মর্যাদা ও স্বাধীনতার পক্ষে। সেই সঙ্গে লক্ষ্য শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন।” তার পরেই ভারতের প্রতি আস্থা রেখে তিনি আরও বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আক্ষরিক অর্থেই সুরক্ষিত করার জন্য ভারত এই যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য অবদান রাখবে।”
জ়েলেনস্কির দাবি, আমেরিকা-রাশিয়ার বৈঠকের দিনও ইউক্রেনের উপরে রাশিয়া আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার সকালে (ভারতের মধ্যরাতে) আলাস্কায় নামেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর ‘জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন’- এ দেখা করেন তাঁরা। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দুই রাষ্ট্রপ্রধান হাত মেলান।
সাড়ে তিন বছর ধরে চলা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ কি এ বার থামতে চলেছে? আলাস্কায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে এই জল্পনাতেই মশগুল বিশ্ববাসী। ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করার বিনিময়ে পুতিন কী শর্ত আরোপ করবেন, তা নিয়েও চলছে আলোচনা। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকালে আলাস্কার উদ্দেশে রওনা হন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। বৈঠকের আগে ট্রাম্প জানিয়ে দেন, ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে সওয়াল কিংবা দরাদরি করার জন্য তিনি পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন না।
মেরিল্যান্ডের বিমানঘাঁটি থেকে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এর আলাস্কাগামী উড়ানে সওয়ার হওয়ার আগে বিমানবন্দরে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি আশাবাদী, পুতিনের সঙ্গে দারুণ আলোচনা হতে চলেছে।’’ কতক্ষণ ধরে সেই আলোচনা চলতে পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্প কোনও ইঙ্গিত দেননি। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার সরকারি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘আপনি ধরে নিতে পারেন যে বৈঠক ন্যূনতম ছ’-সাত ঘণ্টা চলবে।’’ পুতিনের ঘনিষ্ঠ ওই আধিকারিক জানান, মস্কো আশা করে বৈঠক ‘ফলপ্রসূ’ হবে।
আমেরিকার মূল ভূখণ্ডের বাইরের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আলাস্কার ‘জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন’! ৬৪ হাজার একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ওই ঘাঁটিতেই শুক্রবার মধ্যরাতে (ভারতীয় সময়) মুখোমুখি বসবেন ট্রাম্প-পুতিন। কিন্তু সেই বৈঠকের আগে মাথাচাড়া দিয়েছে এক নতুন বিতর্ক। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ সালের মার্চে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন দাবি তুলেছে, কেন পুতিনকে আমেরিকার মাটিতে পেয়েও ট্রাম্পের সরকার গ্রেফতার করবে না। এ ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের যুক্তি, তারা আইসিসির এ সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy