Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাইকেল চলার রাস্তা আর পার্কের গাছ নিয়েই প্রচার

ভাষা যতই জটিল হোক, এখানকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কিন্তু কোনও ঝামেলা নেই। আমাদের দেশে যে রকম ভোট নিয়ে সাজো সাজো রব ওঠে, তা এখানে একেবারেই দেখা যায় না।

দেবাঞ্জন দাশ
ভ্রতসোয়াফ শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০৪:৪১
Share: Save:

কোথায় থাকি, কেউ জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেব— ‘ভ্রতসোয়াফ’। কিন্তু আপনি যদি বলেন, শহরের নামটা লিখে দিন, তা হলে আমায় লিখতে হবে ‘Wroclaw’। স্লাভিক উচ্চারণ এমনই গোলমেলে!

ভাষা যতই জটিল হোক, এখানকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কিন্তু কোনও ঝামেলা নেই। আমাদের দেশে যে রকম ভোট নিয়ে সাজো সাজো রব ওঠে, তা এখানে একেবারেই দেখা যায় না। মাসখানেক আগেই আমাদের রাজ্য ‘ডোলনিস্লান্সক’-এর সব শহরে পুরভোট হয়ে গেল। আবার এ বছর নভেম্বরেই সাধারণ নির্বাচন। দিন কয়েক আগেই পার্লামেন্টে সেই ভোটের জন্য অর্থ অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু রাস্তাঘাট, অফিস-কাছারিতে দেখি এই সব ব্যাপারে কারও কোনও হেলদোল নেই। টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়াতেও কোনও হইচই নেই। পুরভোটের প্রার্থীদের দেখেছিলাম, এখানকার প্রধান টাউন স্কোয়ার-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিজেরাই লোকজনের সঙ্গে আলাপ সেরে নিচ্ছেন। ভোট মিটে যাওয়ার পরে প্রাক্তন মেয়র এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতে চলে গেলেন এবং এক পরাজিত প্রার্থী ইউরোপীয় সংসদের পর্যবেক্ষক হলেন। আর মেয়র? প্রথম দিনেই তিনি একটি পরিত্যক্ত বেড়ালকে দত্তক নিয়েছিলেন। এখন খবরের কাগজে মেয়রের থেকে তাঁর বেড়ালের ছবি বেশি ছাপা হয়!

এখানে ভোট নিয়ে কেউ বিশেষ আলোচনা করে না, তর্ক-বিতর্ক তো দূরের কথা! যে-টুকু যুক্তি-তর্ক হয়, তা প্রার্থীদের মধ্যেই সীমিত। কোনও বড় প্রেক্ষাগৃহে, সব পক্ষের উপস্থিতিতে বেশ সুন্দর পরিবেশে এই ধরনের বিতর্কসভার আলোচনা করা হয়। ভোটের আগে মিটিং-মিছিলেরও কোনও বালাই নেই। বিলবোর্ডে বা রাস্তাতে প্রার্থীর ছবি দেখি বটে, এ-টুকুই। এ ছাড়া, ডাকবাক্সে ফেলে যায় ছোট ছোট কাগজে ছাপা প্রার্থী পরিচিতি। ভোট হয় ব্যালটে। ভোটকেন্দ্রের বাইরে কোনও উত্তেজনা বা সামরিক বাহিনী দেখা যায় না। যে যখন পারে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভোট দিয়ে আসে। লম্বা মিছিল, ভিড়ে ঠাসা সভা, নেতাদের বিরাট প্রতিশ্রুতি, সব কিছুই অনুপস্থিত এখানকার ভোটে।

বরং যে বিষয়গুলির উপরে জোর দেওয়া হয় তা হল, পার্কে গাছ লাগানো, নদীর ধারে সাইকেলের রাস্তা পাকা করা ইত্যাদি। এমনকি, স্কুলশিক্ষকদের সমস্যা নিয়েও আলোচনা করা হয়। চিকিৎসার সুবিধা, বার্ধক্যভাতা, বেকার কমানোর পদ্ধতি, এই সব নিয়েও আলোচনা হয়। এই বিষয়গুলিই কয়েক মাস পরের যখন সাধারণ নির্বাচনে গুরুত্ব পাবে। আর খুব জোর দেওয়া হবে পরিবেশের উপর। এখানে পরিবেশ সচেতনাটা এতটাই যে পুরভোটে ট্ট্রামস্টপে লাগানো পোস্টারের সংখ্যা একটু বেড়ে গেলেই লোকজন শহর নোংরা হচ্ছে বলে ফেসবুক আর সংবাদপত্রে চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।

লেখক ব্যাঙ্কিং অ্যানালিস্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Poland Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE