Advertisement
০৪ মে ২০২৪

টিভিতে? এ ভাবে কথা বলুন, প্রধানমন্ত্রী

বাঁ কনুইয়ে ভর দিয়ে বসবেন না। কেউ উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করে বিরক্ত করার চেষ্টা করলেও গলা চড়াবেন না। এ ভাবেই ‘প্রশিক্ষণ’ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। টিভি-পর্দায় মুখ দেখানোর আগে।

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৯
Share: Save:

বাঁ কনুইয়ে ভর দিয়ে বসবেন না। কেউ উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করে বিরক্ত করার চেষ্টা করলেও গলা চড়াবেন না। এ ভাবেই ‘প্রশিক্ষণ’ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। টিভি-পর্দায় মুখ দেখানোর আগে।

সেটা ১৯৮৯-এর কথা। নভেম্বর থেকে শুরু হবে হাউস অব কমন্স থেকে পার্লামেন্টের অধিবেশনের সরাসরি টিভি সম্প্রচার। গ্রীষ্মকালে হাউসের অধিবেশন বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেই ছুটিতেই ক্যামেরা বসানোর কাজটা পুরো সেরে ফেলা হবে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল টোরি সাংসদ রজার গেল্-কে। তিনি তো শুধু এক মামুলি সাংসদ নন। হাউস অব কমন্সের সম্প্রচার কমিটির প্রধানও বটে। তাই হাউসে কোথায় কোথায় ক্যামেরা বসবে, মন্ত্রীরা কে কোন ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন, সে সব ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গেল্-কেই। হাউস থেকে সরাসরি সম্প্রচারে অবশ্য রজারের একটুও মত ছিল না। কিন্তু সিদ্ধান্ত তো আগেই নেওয়া হয়ে গিয়েছে। ফলে পুরো কাজটাই দায়িত্ব নিয়ে শেষ করেছিলেন তিনি।

সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল আর্কাইভ’ বেশ কিছু নথি প্রকাশ করেছে। সে সব থেকেই থেকে জানা গিয়েছে, হাউস অব কমন্সে টিভি-ক্যামেরা বসানোর সেই সব দিনের কথা। প্রকাশিত নথির মধ্যে রয়েছে ১৯৮৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে রজারের লেখা একটা চিঠি। সেখানে তিনি পাঁচটি পয়েন্টে ধরে ধরে বুঝিয়েছেন, কোথায় কোথায় ক্যামেরা বসানো হয়েছে, সাংসদদের কী ভাবে কথা বলতে হবে, ইত্যাদি। তা ছাড়া, সাংসদদের আরও ভাল ভাবে বিষয়টি বোঝানোর জন্য জনপ্রিয় ব্রিটিশ টিভি শো ‘ইয়েস মিনিস্টার’-এর লেখক অ্যান্টনি জে-কে রাজনৈতিক দলগুলোর দফতরেও ডেকে আনা হয়েছিল।

সবাইকে তো ‘শিখিয়ে পড়িয়ে’ নেওয়া হলো। কিন্তু তাঁকে বোঝাবে কে? একে তো তিনি প্রধানমন্ত্রী। তার ওপর আবার প্রচণ্ড মেজাজি। সবাই তো তাঁর নাম শুনলেই ঠক ঠক করে কাঁপে। শেষ পর্যন্ত বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার দায়িত্ব মাথা পেতে নিলেন রজারই। প্রধানমন্ত্রীকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বোঝাতে শুরু করলেন, কী ভাবে কথা বললে, কোন ভঙ্গিতে বসলে টিভির ক্যামেরায় ভাল লাগবে। বললেন, লাইভ সম্প্রচারে ‘ভুল’ করার কোনও অবকাশ নেই। তাই সজাগ থাকতে হবে প্রতি মুহূর্ত।

বাধ্য ছাত্রীর মতো তিনি যে রজারের ‘পাঠ’ গ্রহণ করেছিলেন, তা বোঝা গেল সে বছর নভেম্বরের শেষ থেকেই। শুধু ব্রিটেন নয়, সারা দুনিয়া টিভির পর্দায় শুনল তাঁর বাগ্মিতা। দেখল, কথার তোড়ে, অতি অনায়াসে, কী ভাবে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়া যায়।

তিনি ব্রিটিশ রাজনীতির লৌহ-মানবী। মাগার্রেট হিল্ডা থ্যাচার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Margaret Thatcher Television Show
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE