#মিটু আন্দোলন তালিকায় নতুন সংযোজন আর এক মার্কিন সংস্থা— নাইকি।
বাথরুমে একা পেয়ে জোরজবরদস্তি চুমু খাচ্ছেন বস। কোনও পুরুষ সহকর্মী ই-মেল পাঠাচ্ছেন— ‘হাল্কা রঙের টি-শার্টে তোমার #**#গুলো খুব ভাল লাগছিল’। কোনও ছেলে আবার মহিলা সহকর্মীকে ইঙ্গিত ছুঁড়ে দিচ্ছেন, ‘আমার ব্যাগে কিন্তু সব সময়েই কন্ডোম থাকে’।
কাজের জায়গায় যৌন হেনস্থার এই ছবিগুলো চেনা। কিন্তু একদম অচেনা হয়ে গেল প্রতিবাদের ভাষা। ফলও মিলল হাতেনাতে।
গত বছর শুরু হয়েছিল হলিউডে। তার পর বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পরে #মিটু আন্দোলন। যৌন হেনস্থা ও লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হন মেয়েরা। বেশ কিছু পুরুষও। সম্প্রতি মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা গুগ্লের মহিলা কর্মীরা মুখ খুলেছিলেন। এ বার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন আর এক মার্কিন সংস্থা— নাইকি।
আমেরিকার বৃহত্তম এই জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থার সদর দফতর বিভারটনে। সেখানেই লাগাতার যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটছিল। একাধিক পুরুষ বস ও সহকর্মীদের হাতে মহিলা সহকর্মীদের নানাবিধ লাঞ্ছনার শেষ ছিল না। ঠিক সময়ে পদোন্নতি না হওয়া, গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া, এই সব লিঙ্গবৈষম্যমূলক ঘটনাও ঘটত হামেশাই। সংস্থার মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। যৌন হেনস্থার কোনও অভিযোগেরই ‘উপযুক্ত প্রমাণ’ পাওয়া যেত না। বৈষম্যের অভিযোগ যাঁরা আনতেন, তাঁদের বলা হত, ‘‘আপনারা ঠিক মতো কাজ করছেন না, তাই আপনাদের উন্নতি আটকে যাচ্ছে।’’
তবু হাল ছাড়েননি সংস্থার মেয়েরা। সম্প্রতি সংস্থার কয়েক জন মহিলা কর্মী অফিস জুড়ে একটি সমীক্ষা চালান। মহিলা কর্মীদের বলা হয়, নিজেদের নাম বলার দরকার নেই, শুধু জানান, এই দফতরে একবারও যৌন হেনস্থা বা বৈষম্যের মুখোমুখি হয়েছেন কি না। হলে কার হাতে হয়েছেন, সেটাও উল্লেখ করতে অনুরোধ করা হয়। উত্তর দিয়েছেন দফতরের প্রতিটি মহিলা কর্মী। ৫ মার্চ সেই সমীক্ষার পুরোটা পাঠিয়ে দেওয়া হয় ‘নাইকি’র চেয়ারম্যান, প্রেসিডেন্ট তথা চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার মার্ক পার্কারের কাছে।
সংস্থাপ্রধানের হাতে সেই সমীক্ষা পৌছনোর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইস্তফার হিড়িক পড়ে যায়। ট্রেভর এওয়ার্ডস, ড্যানিয়েল তাউইয়া এবং জেম মার্টিন-সহ বিভারটন দফতরের ছ’জন উচ্চপদস্থ পুরুষ কর্মী সংস্থা ছেড়ে দেন। নাইকি ব্র্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ট্রেভরকে এত দিন অনেকেই পার্কারের উত্তরসূরি ভেবে এসেছিলেন। অন্য আর এক কর্তা জেম মার্টিন ছিলেন পার্কারের ডান হাত। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নাইকি সাম্রাজ্যের দেখভাল করতেন তিনিই। আর সংস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ বাস্কেটবলের সিনিয়র ডিরেক্টর ছিলেন ড্যানিয়েল।
জানা গিয়েছে, সমীক্ষাটি হাতে পেয়ে বিভারটন দফতরের মহিলাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে শুরু করেন খোদ পার্কার। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় কয়েক জন প্রাক্তন মহিলা কর্মীরও। তার পরেই শুরু হয় ঝাড়পোঁছ। যার পরিণতি— ছয় শীর্ষ কর্তার ইস্তফা। পরে এক বিবৃতি দিয়ে পার্কার বলেন, ‘‘আমাদের সংস্থার যে মূল্যবোধ, বেশ কয়েক জন উচ্চপদস্থ কর্মী তা মেনে চলেননি। এর ফলে অন্য অনেক কর্মীর সম্মানে আঘাত লেগেছে। কর্মক্ষেত্রে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা।’’ সংস্থাপ্রধানের কথায়, ‘‘এটা খুবই বেদনার। এবং কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’
পাঁচ বছর কাজ করার পরে গত সেপ্টেম্বরে নাইকি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন আমান্ডা শিবেল। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘পদক্ষেপটা জরুরি, কিন্তু এত দিন দেরি হল কেন? কেনই বা উপরমহলের টনক নড়াতে একটা নামহীন সমীক্ষার প্রয়োজন হল?’’ তবে তাঁর বিশ্বাস, ‘‘আমরা তো শুধু অভিযোগ জানাতে যায়নি। পরিস্থিতি পাল্টে দিতে চেয়েছিলাম। আশা করি, এ বার আবার এই সংস্থার উপরে আমাদের বিশ্বাস ফিরে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy