প্রায় তিন মাস হল আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে তালিবান। সময় যত এগোচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি তত জটিল হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে আফগানিস্তানের জাতীয় অর্থনীতি। মানুষের হাতে অর্থ নেই, কাজ নেই, ব্যাঙ্কগুলি দেউলিয়া প্রায়। আন্তর্জাতিক বাজারে আফগানি মুদ্রার দর তলানিতে ঠেকেছে। বিদেশ থেকে সাহায্য আসাও প্রায় বন্ধ। আসন্ন শীতে অর্ধেকের বেশি দেশবাসীকে অনাহারে কাটাতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এই অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বের অন্য দেশগুলিকে পাশে থাকার বার্তা দিলেন বর্তমান তালিবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দ।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে শনিবার প্রথম জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন আখুন্দ। দেশের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়েছে সেই অডিয়ো বার্তা। তাতে আখুন্দ বলেছেন, ‘‘আমরা আশ্বাস দিচ্ছি, অন্য কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তালিবান সরকার হস্তক্ষেপ করবে না।’’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিকে যুদ্ধদীর্ণ আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়াতে এবং অর্থনৈতিক অনুদানগুলি ফের চালু করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। আখুন্দ বলেছেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা নিজস্ব নানা সঙ্কটে জর্জরিত। দেশের মানুষকে দুর্দশা আর দারিদ্র থেকে টেনে বার করার চেষ্টা করছি।’’
আন্তর্জাতিক প্রস্তাব মেনে সর্বগ্রহণযোগ্য কোনও সরকার গড়ে তুলতে পারেনি তালিবান জোট। বর্তমান সরকারে পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন সম্প্রদায় বা মহিলাদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে এই তালিবান সরকারকে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি আমেরিকা, ভারত-সহ ইউরোপ, এশিয়ার বহু দেশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনগুলির অনেকেই আফগানিস্তানে অনুদান পাঠানো বন্ধ রেখেছে। প্রসঙ্গত, আগের জমানায় দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ খরচ আসত বিদেশি সাহায্যগুলি থেকে। তার উপরে আমেরিকায় জমা রাখা আফগানিস্তানের প্রায় এক হাজার কোটি ডলার সম্পত্তি ‘ফ্রিজ’ করে রেখেছে জো বাইডেন সরকার। পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের মতো সংগঠনগুলিও আর্থিক অনুদান বন্ধ রাখায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ পরেই দোহায় আমেরিকার সঙ্গে তালিবান প্রতিনিধিদের বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে আখুন্দের এই বার্তা বিশেষ অর্থবহ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাদের মতে, চাপের মুখে বিশেষ করে অর্থনৈতিক সঙ্কটের ঠেলায় বিশ্বের দরবারে সুর নরম করছে তালিবান।