Advertisement
০২ মে ২০২৪

নামের শুরুতে মহম্মদ! দেখে ঢুকতেই দিল না আমেরিকা

নামটাই যেন খুব সন্দেহজনক! মহম্মদ দিয়ে শুরু। পাসপোর্ট হাতে নিয়েই তাই বাঁকা চোখে তাকিয়েছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক মহিলা অফিসার।

ব্রিটিশ শিক্ষক জুহেল মিয়া।

ব্রিটিশ শিক্ষক জুহেল মিয়া।

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:০৫
Share: Save:

নামটাই যেন খুব সন্দেহজনক!

মহম্মদ দিয়ে শুরু। পাসপোর্ট হাতে নিয়েই তাই বাঁকা চোখে তাকিয়েছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক মহিলা অফিসার। তার পর টুলের উপর দাঁড়ানো অবস্থায় হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট নামিয়ে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালালেন অন্য দু’জন। মিলল না কিছুই। তখনকার মতো বিমানে উঠতে দিলেও একটু ক্ষণ বাদেই নিউ ইয়র্কগামী বিমান থেকেই নামিয়ে দেওয়া হল ব্রিটিশ মুসলিম শিক্ষক মহম্মদ জুহেল মিয়াকে (২৫)।

১৬ ফেব্রুয়ারি, আইসল্যান্ডের রাজধানী রেকিয়াভিকের ঘটনা। তার পরের দিনই ব্রিটেনে ফিরে গিয়েছেন স্কুলশিক্ষক জুহেল মিয়া। কিন্তু অপমানটা ভুলতে পারছেন না আজও। শুধু মুসলিম বলেই কি তাঁকে এ ভাবে হেনস্থা করা হল— কিছুতেই উত্তর পাচ্ছেন না অঙ্কের তরুণ শিক্ষক। তাঁর কথায়, ‘‘চট করে মাথা গরম করাটা আমার স্বভাব নয়। কিন্তু বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে বিমান-ভর্তি লোকের সামনে আমাকে নামিয়ে দেওয়া হলো, মানতে পারছি না। আমি কি অপরাধী! বিমানে আমার স্কুলের বাচ্চারাও ছিল। ভাবতে পারছেন, ওদের চোখেও কতটা ছোট হয়ে গেলাম!’’ তল্লাশির পরে জুহেলকে বিমানে উঠতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিমান ওড়ার কিছু ক্ষণ আগে কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষী গিয়ে তাঁকে সটান নেমে যেতে বলেন। জানানো হয়, আমেরিকায় তাঁর প্রবেশ নিষেধ। কেন? মার্কিন প্রশাসনের কাছে এর জবাবদিহি চেয়েছেন তাঁর স্কুল কর্তৃপক্ষও। উত্তর মেলেনি এখনও।

হোয়াইট হাউসে এসেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান, ইরাক-সহ সাতটি মুসলিম দেশ থেকে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। মার্কিন ফেডেরাল কোর্টের রায়ে আপাতত তা আটকে গিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যে বদলায়নি, জুহেলের ঘটনায় তা ফের স্পষ্ট হয়ে গেল বলেই মনে করছে সোশ্যাল মিডিয়ারও একটা বড় অংশ। ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় প্রথম থেকেই মুসলিম-বিদ্বেষের স্পষ্ট গন্ধ পাচ্ছিলেন অনেকে। এ ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই হয়েছে বলে অভিযোগ জুহেলের। তাঁর কথায়, ‘‘আমার সাত পুরুষের কেউ ওই সাত দেশের নয়। আমি কখনও ওই সাতটি দেশের একটাতেও যায়নি। গত বছরও আমার ভাই ফ্লোরিডা থেকে ঘুরে এসেছে। বুঝতে পারছি না, কেন আমার সঙ্গে এমনটা হল।” জুহেল জন্মসূত্রে বাংলাদেশি। তবে জন্ম বার্মিংহামে। তাঁর পড়াশুনো আগাগোড়া ইংল্যান্ডেই। স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে তিনি শিক্ষামূলক ভ্রমণে আইসল্যান্ড গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁদের নিউ ইয়র্কে যাওয়ার কথা। শেষ পর্যন্ত জুহেলকে ছাড়াই বাকিদের আমেরিকা যেতে হয়। আইসল্যান্ড থেকে তাঁর ব্রিটেনে ফেরার ব্যবস্থা করে জুহেলের স্কুলই।

আরও পড়ুন:

প্রয়াত অর্থনীতিবিদ কেনেথ অ্যারো

সে দিন বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে প্রথমে একটি হোটেলে ওঠেন জুহেল। পরের দিনই জবাবদিহি চাইতে পৌঁছে যান রেকিয়াভিকের মার্কিন দূতাবাসে। অভিযোগ, সেখানেও চরম হেনস্থা করা হয় তাঁকে। পাসপোর্ট দেখার পরে প্রথমটায় তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি অফিসে। বৃষ্টির মধ্যেই টানা ১০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বাইরে। পরে একটা কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হয় জুহেলকে। যাতে তিনটি নম্বর থাকলেও, ফোন করে সাড়া মেলেনি।

অভিবাসী আটকাতে নতুন নকশাতে এখন ব্যস্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর নয়া নির্দেশিকার প্রভাব পড়তে পারে অভিবাসনের সময়ে ঠিকঠাক নথিভুক্ত হননি, এ রকম লাখ তিনেক ভারতীয় বংশোদ্ভূতের উপরেও। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি আজই এ নিয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। যাতে বলা হয়েছে, অভিবাসন আইন লঙ্ঘন হয়েছে, এমন সন্দেহ হলেই যে কাউকে গ্রেফতার, এমনকী তখনই ফেরত পাঠানো হতে পারে।

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতিবাদে বুধবার নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মা চেলসির সঙ্গে সেই সমাবেশে যোগ দিয়েছিল হিলারির নাতনি, দু’বছরের শার্লট ক্লিন্টন মেজভিনস্কিও। হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা— ‘‘হ্যাঁ, আমিও এক জন মুসলিম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Juhel Miah British Muslim schoolteacher US
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE