বিস্ফোরণে বাবা-মা-বোনকে হারিয়েছে ফায়েদ আলি (১০)। সোমবার লাহৌরে। — এপি
বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। লাহৌরে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭২। এর মধ্যে ২৯ জন শিশু। এই পরিস্থিতিতে সোমবার ঘটনার দায় স্বীকার করে তালিবান জঙ্গিগোষ্ঠী বিবৃতি দিয়েছে, সে দিনের হামলার মূল নিশানা ছিলেন খ্রিস্টানরা। যদিও সরকারি সূত্রের খবর, নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম।
রবিবার সন্ধ্যায় ইস্টার উপলক্ষে লাহৌরের জনপ্রিয় পার্ক গুলশন-ই-ইকবালে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে হাজির ছিলেন অনেকে। আনন্দের সব ছন্দ কেটে দিয়ে সেখানে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটায় এক আত্মঘাতী জঙ্গি। হামলায় আহতের সংখ্যা প্রায় তিনশো, যার বেশির ভাগই শিশু। ২৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এ দিন আহতদের দেখতে জিন্না হাসপাতালে যান। তাঁকে দেখে ক্ষোভ উগরে দেন আক্রান্ত শিশুদের পরিবার।
ঘটনার তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শরিফ। তিনি বাতিল করে দিয়েছেন প্রস্তাবিত আমেরিকা ও ব্রিটেন সফর। আমেরিকায় নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তা স্থগিত হয়ে গেল। শরিফ এ দিন বলেন, ‘‘হামলাকারীরা নৃশংস ভাবে আমার ছেলে-মেয়েদের হত্যা করেছে। হামলাকারীদের কাউকে রেহাই দেব না।’’ নিহতের স্মৃতিতে তিন দিনের শোক ঘোষণার পাশাপাশি আপৎকালীন পরিস্থিতিও জারি করেছে পাক সরকার। সোমবার বন্ধ ছিল বাজার, স্কুল, বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে কাল রাতেই টুইট করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। পরে শরিফকে ফোন করে সমবেদনাও জানান তিনি। এমন পরিস্থিতিতে সব রকম সাহায্য নিয়ে পাকিস্তানের পাশেই থাকবে বলে জানিয়েছে চিন।
পাক সেনা সূত্রের খবর, রবিবারই ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা আত্মঘাতী জঙ্গির অবশিষ্ট দেহাংশ ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই জঙ্গির নাম মহম্মদ ইউসুফ (২০)। ঘটনার সময় তার শরীরে প্রায় ১০-১৫ কিলোগ্রামের বিস্ফোরক বাধা ছিল। রবিবার রাতে দক্ষিণ পঞ্জাবের মুজফ্ফরঘর জেলায় তার বাড়িতে হানা দিয়ে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। গোপন জায়গায় রেখে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইউসুফ তেহরিক-ই-তালিবানের শাখা সংগঠন জামাত-উল-অহররের সদস্য ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। গত ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত মোট পাঁচটি হামলা চালিয়েছে ওই জঙ্গিগোষ্ঠী। পাকিস্তানে যে তারা ভাল মতোই আস্তানা গেড়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে সেই বার্তা দিতেই এই হামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সংগঠনের মুখপাত্র এহসানুল্লাহ এহসান।
তবে ইতিমধ্যেই কড়া হাতে জঙ্গি দমনে নেমে পড়েছে পাকিস্তান। ওই দিন রাতেই লাহৌর, মুলতান ও ফয়সালাবাদে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ২০ জন সন্দেহভাজনকে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রচুর অস্ত্র। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের অধিকাংশের কাছেই সঠিক পরিচয়পত্র ছিল না। নিরাপত্তার খাতিরে রবিবার রাতেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় শহরের পার্ক। সেনার এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জঙ্গিদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy