ভোর তখন হবে হবে। ঘুমে আচ্ছন্ন ডুমা গ্রাম। হঠাৎ দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করল ওই গ্রামেরই দুটো বাড়ি। ‘বাঁচাও, বাঁচাও’, চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসেন আশপাশের লোকজন। কিন্তু তত ক্ষণে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে ওই বাড়িরই ১৮ মাসের এক শিশুর। আর তার মা-বাবা-ভাই গুরুতর জখম। সন্দেহের তির ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ইহুদিদের দিকে। অভিযোগ, আজকের ভোরের এই ঘটনায় ইহুদিদের মদত দিয়েছে ইজরায়েল।
প্যালেস্তাইন-ইজরায়েলের বিবাদ নতুন নয়। গত বছরই জেরুজালেমে এক প্যালেস্তাইনি কিশোরকে খুন করে ইজরায়েলি জঙ্গিরা। আর তার পর পরই জুন মাসে তিন ইজরায়েলি কিশোরকে অপহরণ করে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে খুন করে কিছু প্যালেস্তাইনি দুষ্কৃতী। হামাসই এই ঘটনার জন্য দায়ী বলে তখন অভিযোগ তুলেছিল ইজরায়েল। গত বছরের ৭ জুলাই প্রথম বার হামাস রকেট হামলার দায় স্বীকার করে। তার ঠিক পরের দিনই ইজরায়েল শুরু করে ‘অপারেশন প্রটেকটিভ এজ’। তারা জানায়, আত্মরক্ষার জন্যই এই পদক্ষেপ। শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের খুনোখুনি। যার ফল, মৃতদেহের পাহাড়।
ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের উত্তরে নাবলুস শহর। তার কাছেই ডুমা গ্রাম। এক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান অনুযায়ী, আজ ভোরের দিকে দু’জন মুখোশ পরা জঙ্গি ওই গ্রামেরই দুটি বাড়িতে বোমা ছোড়ে। জ্বলে ওঠে বাড়ি দু’টি। একটি বাড়ি ফাঁকা থাকায় সেখানে হতাহতের খবর নেই। কিন্তু অন্য বাড়ির বাসিন্দা ১৮ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তার চার বছরের দাদা এবং তার মা-বাবা জখম। কপ্টারে করে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গ্রামেরই বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেছেন, ‘‘আমরা দেখলাম মা-বাবা বাড়ির বাইরে। আগুনে ঝলসে গিয়েছেন। দুই শিশু তখনও বাড়ির ভিতরে। এক জনকে বাঁচানো গেলেও, শোয়ার ঘর অবধি আর পৌঁছতে পারলাম না।’’ ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘‘ঘটনাটি ভয়ঙ্কর এবং নিন্দনীয়।’’ যদিও প্যালেস্তাইনি প্রশাসন ইজরায়েলকেই এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছে। বলেছে, ইজরায়েল আসলে দুষ্কৃতীদের আঁতুড়ঘর। তবে, ইজরায়েল যে কোনও মতেই জঙ্গি কার্যকলাপ বরদাস্ত করবে না, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ‘‘নির্দেশ দিয়েছি, যাতে এই ঘটনার পিছনে যাঁদের হাত রয়েছে, তাঁদের যেন যথাযথ শাস্তি হয়।’’
ঘটনায় জেরুজালেমে যাতে হিংসা না ছড়ায়, তা দেখতে ব্যবস্থা নিয়েছিল পুলিশ প্রশাসন। শুক্রবারের প্রার্থনার জন্য আল-আক্সা মসজিদে পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের যাতায়াতে নিষেধা়জ্ঞা জারি হয়েছিল। উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় ছিল অতিরিক্ত পুলিশি প্রহরা।
পোড়া বাড়ি দুটির দেওয়ালে জ্বল জ্বল করছিল, ‘প্রতিশোধ’ শব্দটি। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরাই ভোরে তা স্প্রে করে লিখে রেখে গিয়েছেন। তবে তাঁদের প্রশ্ন, কোনও কিছুর প্রতিশোধের দাম কি কখনও হতে পারে ১৮ মাসের এক শিশুর প্রাণ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy