দুর্ঘটনার খবর পাওয়ামাত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছন তেহরানের আপৎকালীন পরিষেবা বিভাগের কর্মীরা। প্রকাশিত ভিডিয়োটিতে দেখা গিয়েছে, ধ্বংসাবশেষ থেকে অনেক ক্ষণ ধরে আগুন জ্বলছে। ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে এলাকা। তার মধ্যেই উদ্ধারকর্মীরা মৃতদেহগুলি বার করে আনছেন। চার পাশে ছড়িয়ে রয়েছে সান্তাক্লজ পুতুল, বক্সিং গ্লাভসের মতো যাত্রীদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রগুলি। সূত্রের খবর, মৃতদের মধ্যে ১৫ জন শিশু ও তেহরানের শরিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ জন পড়ুয়াও রয়েছে। ন’জন বিমানকর্মীও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
ইরানে বিমান দুর্ঘটনা
কোন দেশের কত জন
• ইরান ৮২
• কানাডা ৬৩
• ইউক্রেন ১১
• সুইডেন ১০
• আফগানিস্তান ৪
• ব্রিটেন ৩
• জার্মানি ৩
৯ জন বিমানকর্মীও প্রাণ হারিয়েছেন
ইউক্রেনের ওই বিমান সংস্থাটি কিয়েভ থেকে টরন্টো রুটে ভাড়ায় ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছিল। মনে করা হচ্ছে, সম্ভবত সে কারণেই ওই বিমানে ৬৩ জন কানাডার নাগরিক ছিলেন। তা ছাড়া বিমানে ৮২ জন ইরানি এবং ১১ জন ইউক্রেনের বাসিন্দা ছিলেন। কিয়েভ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকিরা সুইডেন, আফগানিস্তান, জার্মানি এবং ব্রিটেনের নাগরিক।
কাল রাতে ইরাকের আল-আসাদ ও ইরবিলে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে এক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। তার পরেই ওই বিমান দুর্ঘটনা। স্বভাবতই নাশকতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না অনেকেই। দুর্ঘটনার পরে তেহরানে ইউক্রেন দূতাবাস জানিয়েছিল, বিমানের ইঞ্জিনে গোলমালের কারণে এই দুর্ঘটনা। তবে কিছুক্ষণ পরেই ওই প্রতিক্রিয়া থেকে সরে আসে কিয়েভ। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ওলেকসি হঞ্চারুক অবশ্য নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি। তাঁর ইঙ্গিত, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বিমানটিকে নামানো হতে পারে। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি অবশ্য এ ব্যাপারে অনেকটাই সতর্ক। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘সকলের কাছে আবেদন, কোনও জল্পনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন না।’’
নাশকতা হয়েছে কি না, সেই চর্চা উস্কে দিয়েছে ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য ও বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত ভিডিয়োর ফারাক। ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, ভেঙে পড়ার পরে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। কিন্তু যে ভিডিয়োটি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, আকাশেই বিমানটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, বিমানটি কি নাশকতার শিকার? বিমান বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ‘‘এমএইচ১৭-কে যে ভাবে গুলি করে নামানো হয়েছিল, এই বিমানটির ক্ষেত্রেও সম্ভবত তেমনই হয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ না স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো উচিত নয়।’’ ‘অ্যাভিয়েশন সিকিয়োরিটি ইন্টারন্যাশনাল’ পত্রিকার সম্পাদক ফিলিপ বাউম মনে করেন, নাশকতার কারণে বিমান ধ্বংস হয়েছে, এত তাড়াতাড়ি এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছনো অনুচিত। তাঁর কথায়, ‘‘যে হেতু ঘটনাটি ইরানে ঘটেছে এবং আমেরিকার সঙ্গে তাদের সংঘাত চলছে, তাই ইউক্রেনের মনে হতেই পারে যে বিমান ধ্বংসের পিছনে নাশকতা রয়েছে।’’
বিমান দুর্ঘটনা নিয়েও আমেরিকার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে ইরান। ইরানের সরকারি বিমান সংস্থার প্রধান আলি আবিদজাদে বলেন, ‘‘বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা (বোয়িং) এবং আমেরিকা কারওকেই ব্ল্যাক বক্স দেব না।’’ বিমান পরিবহণ সংস্থা জানিয়েছে, তারাই এই দুর্ঘটনার তদন্ত করবে। তবে তদন্তের সময় ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকতে পারবেন বলে জানিয়েছে ইরান।