Advertisement
E-Paper

বিলেতে বন্দি, ব্যাঙ্ক থেকেই পুলিশের জালে নীরব মোদী

নীরবকে আজ ওয়েস্টমিনস্টারের ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলে পুলিশ।

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৪
পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপে অভিযুক্ত নীরবের ঠিকানা আপাতত লন্ডনের জেল।

পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপে অভিযুক্ত নীরবের ঠিকানা আপাতত লন্ডনের জেল।

অ্যাকাউন্ট খুলতে আসা লোকটিকে দেখেই চিনেছিলেন লন্ডনের মেট্রো ব্যাঙ্কের কর্মী।

চেনা অসম্ভব ছিল না। ইদানীং ওই ‘গ্রাহককে’ নিয়েই টিভি-ইন্টারনেট সরগরম। কর্মীটি দ্রুত ফোনে ডায়াল করেছিলেন একটা নম্বর। একটু পরেই স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের অফিসারেরা ঘিরে ফেলেছিলেন অ্যাকাউন্ট খুলতে আসা নীরব দীপক মোদীকে।

গত কাল এ ভাবেই গ্রেফতার হন পলাতক হিরে ব্যবসায়ী। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপে অভিযুক্ত নীরবের ঠিকানা আপাতত লন্ডনের জেল। ২৯ মার্চ পর্যন্ত থাকতে হবে সেখানেই। ওই দিন থেকেই শুরু হবে তাঁর প্রত্যর্পণ মামলার শুনানি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নীরবকে আজ ওয়েস্টমিনস্টারের ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলে পুলিশ। জামিন পেতে ৫ লক্ষ পাউন্ড বন্ড দিতে তৈরি ছিলেন নীরব। আবেদন খারিজ করে বিচারক মারি ম্যালন বলেন, ‘‘তাঁর বিরুদ্ধে তছরুপের যে অঙ্কটা উঠেছে, তা বিরাট। জামিন পেলে নীরব যে আত্মসমর্পণ করবেন না, এমন ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে।’’

জামিন নাকচের পর আদালত চত্বর থেকে বেরোল প্রিজন ভ্যান। তাতেই কি ছিলেন নীরব?

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের বিবৃতি বলছে, ‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হয়ে ১৯ মার্চ লন্ডনের হোবর্ন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৮ বছরের নীরবকে।’ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রের বক্তব্য, গত বছরের জুলাইতেই নীরবের প্রত্যর্পণ চেয়ে ব্রিটেনকে অনুরোধ করেছিল তারা। সেই অনুরোধ ওয়েস্টমিনস্টারের আদালতে পাঠিয়ে দেন স্বরাষ্ট্রসচিব সাজিদ জাভিদ। তার পরেই পরোয়ানা জারি এবং নীরবের গ্রেফতারি। ইডি এবং সিবিআইয়ের যৌথ দল লন্ডনে যাচ্ছে। ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা। কারও কারও যদিও প্রশ্ন, নীরবকে গত কাল গ্রেফতার করা হলে খবরটা ২৪ ঘণ্টা পরে ঘোষণা করা হল কেন?

নীরব-কাহিনি

১ জানুয়ারি, ২০১৮: দেশ ছেড়ে পালান নীরব মোদী। আলাদা ভাবে দেশ ছাড়েন তাঁর ভাই নিশাল।
৪ জানুয়ারি, ২০১৮: দেশ ছাড়েন মোদীর ‘বিজনেস পার্টনার’ মেহুল চোক্সী।
৬ জানুয়ারি, ২০১৮: নীরবের মার্কিন নাগরিক স্ত্রী অ্যামি
দেশ ছাড়েন।
জানুয়ারি, ২০১৮: দাভোস ইকনমিক ফোরামের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গ্রুপ ফোটোয় নীরব।
২৯ জানুয়ারি, ২০১৮: মোদী এবং মেহুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পিএনবি-র
৩১ জানুয়ারি, ২০১৮: মোদীর বিরুদ্ধে লুক-আউট নোটিস জারি সিবিআইয়ের। পরে লুক-আউট নোটিস এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)।
৫ ফেব্রুয়ারি: তদন্ত শুরু সিবিআইয়ের।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: সিবিআই জানায়, প্রতারণার অঙ্ক প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: নীরব ও মেহুলের পাসপোর্ট বাতিল।
২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: আমেরিকায় দেউলিয়া
নীরবের সংস্থা।
১৫ মে, ২০১৮: নীরবের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের চার্জশিট।
২ জুলাই, ২০১৮: নীরবের নামে রেড কর্নার নোটিস জারি।
৯ মার্চ, ২০১৯: লন্ডনের রাস্তায় খোশমেজাজে ঘুরতে দেখা যায় নীরবকে।
১৯ মার্চ, ২০১৯: লন্ডনে গ্রেফতার নীরব।
২০ মার্চ, ২০১৯: পাঁচ লক্ষ পাউন্ডের বন্ড দিতে চাওয়া সত্ত্বেও জামিনের আর্জি খারিজ। ২৯ মার্চ পর্যন্ত জেলে।

কী ভাবে নীরব গ্রেফতার হলেন, আজ কোর্টেই তা উঠে আসে। গত ৯ মার্চ লন্ডনের রাস্তায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিলেন নীরব। উটপাখির চামড়ার জ্যাকেট গায়ে, যাবতীয় প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘নো কমেন্ট’। আজ কোর্টে নীরবের আইনজীবীরা জানান, লন্ডনে ‘ডায়মন্ড হোল্ডিংস লিমিটেড’ নামে এক সংস্থায় ২০ হাজার পাউন্ডের মাসিক বেতনে চাকরি করছেন তিনি। ২০১৮-র জানুয়ারিতে লন্ডনে আসার সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও ছিল না। এই যুক্তিতে অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি।

আদালত প্রত্যর্পণের নির্দেশ দিলে এবং তাতে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সিলমোহর বসলে ২৮ দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন নীরব। অন্যথায় তাঁকে সরাসরি প্রত্যর্পণ করা হবে। অনেকের মতে, এর ফলে দীর্ঘ হতে পারে প্রক্রিয়া। যদিও সিবিআইয়ের একটি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘নীরবের মামলাটি ব্যাঙ্ক প্রতারণার। তথ্যপ্রমাণে তাঁর অপরাধমূলক মনোভাব স্পষ্ট। কাজেই বিজয় মাল্যের মামলার মতো অত সময় লাগবে না।’’

Nirav Modi PNB Scam PNB
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy