Advertisement
২৩ মে ২০২৪
ক্যালিফোর্নিয়া হত্যাকাণ্ড

অধ্যাপকের বুদ্ধিতে বাঁচল অনেক জীবন

ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা। বেশ জোরে একটা শব্দ শুনে চার তলার অফিস থেকে তড়িঘড়ি নীচে নেমে আসেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার(ইউসিএলএ) ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাঙালি অধ্যাপক অজিত মাল ও তাঁর সহকর্মী ক্রিস্টোফার লিঞ্চ। চোখাচোখি হয় দুই অধ্যাপকের।

সংবাদ সংস্থা
লস অ্যাঞ্জেলেস শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৩:৪২
Share: Save:

ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা। বেশ জোরে একটা শব্দ শুনে চার তলার অফিস থেকে তড়িঘড়ি নীচে নেমে আসেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার (ইউসিএলএ) ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাঙালি অধ্যাপক অজিত মাল ও তাঁর সহকর্মী ক্রিস্টোফার লিঞ্চ। চোখাচোখি হয় দুই অধ্যাপকের। এক রাশ আশঙ্কা নিয়ে অধ্যাপক মাল জিজ্ঞেস করেন, ‘‘ওটা কী ছিল?’’ লিঞ্চ জবাব দেন, ‘‘গুলি চলার শব্দ।’’ গুলিতে নিহত হন তাঁদেরই আর এক সহকর্মী অধ্যাপক ক্লুগ। আর খুনি ক্লুগের প্রাক্তন ছাত্র মৈনাক সরকার। তবে কে খুনি, কে-ই বা খুন হলেন— সে বিষয়ে তখন বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না অধ্যাপক মাল ও লিঞ্চের।

গত বুধবার ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাম্পাসে অধ্যাপক ক্লুগের খুন প্রসঙ্গে প্রথম বার সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুললেন অধ্যাপক লিঞ্চ। শোনালেন, সে দিন ঠিক কী দেখেছিলেন?

গুলির আওয়াজ শুনে অধ্যাপক লিঞ্চ এগিয়ে যান ক্লুগের অফিসের দিকে। জানতেন, নিশ্চয়ই ঘরের ভিতরে কোনও বন্দুকবাজ আছে। আশপাশে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিভাগের লোকজন ঘোরাঘুরি করছে। বন্দুকবাজ যদি বাইরে চলে আসে তবে কেলেঙ্কারি হবে। এই ভয়ে প্রথমেই ক্লুগের অফিসের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেন লিঞ্চ। তার পরের মুহূর্তেই আরও এক বার গুলির আওয়াজ। লিঞ্চের মনে হল, বন্দুকবাজ এ বার আত্মঘাতী হয়েছে।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ চলে আসে। পুলিশের হাতে ঘরের চাবি দিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে যান লিঞ্চ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়নি, ক্লুগকে মারার পরে মৈনাক বাইরে আসার চেষ্টা করেছিলেন। তবে পুলিশ ডাকা হচ্ছে, চার দিক ফাঁকা করে দেওয়ার পুলিশের নির্দেশ—এ সব তিনি নিশ্চয়ই শুনেছেন।’’

অধ্যাপক লিঞ্চের বুদ্ধির জোরেই সে দিন বেঁচে গিয়েছিলেন অধ্যাপক মাল। সেই সুবাদে সাংবাদিকদের সামনেই অধ্যাপক লিঞ্চকে ধন্যবাদ জানালেন তিনি। বললেন, তিনি ঠিক সময়ে শুধু ক্লুগের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেননি। চেঁচিয়ে তাঁর অন্য সহকর্মীদেরও সতর্ক করে দেন।

মৈনাক তাঁর পিএইচডি-র গাইডের বিরুদ্ধে ‘কোড চুরির’ যে অভিযোগ এনেছেন, সে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেন দুই অধ্যাপকই। অধ্যাপক লিঞ্চ বলেন, ইউসিএলএর ছাত্র ও অন্য কর্মীদের সঙ্গে হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি অনুযায়ী, যে কোনও গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি। পরে যদি সেই কাজ বাজারে অর্থমূল্যে বিক্রি হয়, তখন সেই লাভের অংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষকের মধ্যে ভাগাভাগির চুক্তি হয়। এটা খুব সাধারণ ব্যাপার। এতে ‘চুরির’ কোনও প্রশ্নই নেই বলে মত দুই অধ্যাপকের।

অন্য দিকে মৈনাকের গবেষণার গুণগত মান যে খুব উন্নত ছিল না, তা স্বীকার করেন অধ্যাপক মাল ও লিঞ্চ দু’জনেই। মৈনাকের ব্যবহারের মধ্যেও অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেছিলেন বলে জানান অধ্যাপক মাল। বঙ্গ ও বাঙালি যোগ থাকা সত্ত্বেও মৈনাক পাশ দিয়ে গেলেও কখনওই ‘হ্যালো’টুকুও বলত না, বলছিলেন অধ্যাপক মাল।

মৈনাক যে অধ্যাপক ক্লুগের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন, সে বিষয়ে এতটুকুও ধারণা ছিল না তাঁর। এমনটাই মনে করেন অধ্যাপক মাল। তাঁর যুক্তি, যদি তিনি জানতেন তবে অবশ্যই তাঁর কাছে সাহায্য চাইতেন ক্লুগ। ২০০৩ সালে যে সার্চ কমিটি ক্লুগকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ করেন, সেই কমিটির প্রধান ছিলেন অধ্যাপক মাল। দু’জনে যথেষ্টই ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানালেন অধ্যাপক মাল।

মৈনাকের কোড চুরির অভিযোগের সত্যতা এখনও প্রমাণ হয়নি। তবে অধ্যাপক মাল ও লিঞ্চ— দু’জনেই মানতে নারাজ যে এমন কিছু হয়ে থাকতে পারে। অধ্যাপক লিঞ্চ বলেন, কোড চুরির ব্যাপারটা মনগড়া। অধ্যাপক মালের কথায়, ‘‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, ক্লুগের সঙ্গে কোনও ছাত্রের ঝামেলা থাকতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Professor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE