রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। ফাইল চিত্র রয়টার্স।
পুলওয়ামা হামলার কড়া নিন্দা করল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। ১৪ ফেব্রুয়ারির হামলার পর থেকে আন্তর্জাতিক মহল থেকে এমনিতেই চাপ বাড়ছিল পাকিস্তানের উপর। পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী জইশের নাম উল্লেখ করে পুলওয়ামা হামলার নিন্দা করায় ইমরান খানের দেশ আরও বিপাকে পড়ল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, “জম্মু-কাশ্মীরে এই আত্মঘাতী হামলা কাপুরুষোচিত ও ঘৃণ্য কাজ। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।” পাশাপাশি তারা এটাও জানিয়েছে, “আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সন্ত্রাসবাদ। এর বিরুদ্ধে সকলকেই এক সঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে।”
যারা সন্ত্রাসবাদে মদত জোগাচ্ছে এবং সন্ত্রাসকে জিইয়ে রাখতে দিনের পর দিন অর্থ সহযোগিতা করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক আইন মেনে সব দেশ যেন এ ব্যাপারে ভারত সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে, বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত কোনও কার্যকলাপকে বরদাস্ত করবে না নিরাপত্তা পরিষদ।
আরও পড়ুন: পুলওয়ামা হামলার খবর পেয়েও মোদী ব্যস্ত ছিলেন তথ্যচিত্রে! অভিযোগ কংগ্রেসের
পুলওয়ামার হামলার পরই দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনার আবহ তৈরি হয়েছে। ভারত যে কোনও মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে এই আশঙ্কা প্রকাশ করে আগেই রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারস্থ হয়েছিল পাকিস্তান। রাষ্ট্রপুঞ্জে পাক প্রতিনিধি মালিহা লোধী রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট অ্যান্তোনিও ডং এমবা-র সঙ্গে দেখা করে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনার আবহ নিয়ে জানান। তার পরই রাষ্ট্রপুঞ্জ পুলওয়ামা হামলার নিন্দা করে এই বিবৃতি জারি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মহলে যতই নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা করুক না কেন, যতই সাফাই দিক না কেন যে এই ঘটনায় পাকিস্তান কোনও ভাবেই জড়িত নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের বিবৃতিতে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, পাকিস্তানকে তারা খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না।
সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপুঞ্জের এই বিবৃতি জারিতেও বাধ সাধার চেষ্টা করেছিল চিন। রাষ্ট্রপুঞ্জ বিবৃতিতে জইশ জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করেছে। সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রেও চিন চাইছিল না যে জইশের নাম উল্লেখ করা হোক। পাল্টা ভারতকেই কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা চালায় বলে ওই সূত্রের দাবি। শুধু তাই নয়, সব দেশ ভারত সরকারকে সহযোগিতা করুক, রাষ্ট্রপুঞ্জের এই প্রস্তাবেও নাকি আপত্তি তুলেছিল চিন। পুলওয়ামা হামলার পর চিন শোক প্রকাশ করেছিল ঠিকই, কিন্তু তাদের বিবৃতিতে পাকিস্তানের কোনও উল্লেখই ছিল না।
ভারতের অস্ত্রভাণ্ডার সম্পর্কে কতটা জানেন, পরখ করে নিন জ্ঞানভাণ্ডার
আরও পড়ুন: পাক শুটারদের ভিসা না দেওয়ার জের, অলিম্পিক কমিটির কড়া নিষেধাজ্ঞার মুখে ভারত
পুলওয়ামা হামলায় যে পাকিস্তান জড়িত সে অভিযোগ যত বার তুলেছে ভারত, তত বারই অস্বীকার করেছে তারা। পাক প্রধানমন্ত্রী পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগে ভারত প্রমাণ করুক যে এই ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত। পাকিস্তান যে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে হামলার দায় ঝেড়ে ফেলবে সেটাই স্বাভাবিক, ইমরানের প্রতিক্রিয়ার পর এমনটাই জানিয়েছিল দিল্লি। তাই হাতে মারার আগে পাকিস্তানকে ভাতে মারার কাজও শুরু করে দিয়েছে ভারত। প্রথমে মোস্ট ফেভারড নেশন-এর তকমা কেড়ে নিয়েছ, তার পর পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত দ্রব্যের উপর ২০০ শতাংশ কর চাপিয়েছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানকে এক ঘরে করার কাজ কূটনৈতিক স্তরেও শুরু করে দিয়েছে ভারত।
আগেই রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস পুলওয়ামা হামলার কড়া নিন্দা করেছিলেন। পাশাপাশি হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের শাস্তি হবেই। এ বার নিরাপত্তা পরিষদেও সেই একই সুর শোনা গিয়েছে। হামলার কড়া নিন্দা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হামলার পর আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তান যে ধীরে ধীরে কোণঠাসা হতে চলেছে, রাষ্ট্রপুঞ্জ, নিরাপত্তা পরিষদের এই বিবৃতিতেই তা স্পষ্ট।
(সারাবিশ্বের সেরা সব খবরবাংলায় পড়তে চোখ রাখতে পড়ুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy