দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৫ বর্যপূর্তিতে রুশ সেনার মহড়া। ছবি: এএফপি।
ঠান্ডা যুদ্ধের স্মৃতি উসকে আমেরিকার সঙ্গে ৩২ বছরের পুরনো ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা জানাল রাশিয়াও। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে একের পর এক পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে মস্কো, এই অভিযোগ তুলে শুক্রবারই এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় আমেরিকা। এর ফলে বিপজ্জনক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণে রাশিয়া আর আমেরিকার মধ্যে আর কোনও চুক্তি থাকল না, যা অনেককেই মনে করাচ্ছে ঠান্ডা যুদ্ধের স্মৃতি। সেই আশঙ্কাকে উসকে দিয়েই দেশের জাতীয় টেলিভিশনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, শব্দের থেকে পাঁচ গুণ দ্রুতগামী হাইপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বানানোর কাজ শুরু হবে খুব শীঘ্রই।
সারা পৃথিবী জুড়ে রুশ-মার্কিন অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং যে কোনও সময় যুদ্ধ লাগার আশঙ্কা থেকে বেরোতে ১৯৮৭ সালে এই চুক্তিতে সই করেছিল রাশিয়া এবং আমেরিকা। আনুষ্ঠানিক ভাবে এই চুক্তিকেই ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান বলে মনে করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন এবং তদানীন্তন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভের উদ্যোগে হওয়া এই চুক্তিতে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি পাল্লার (৫০০কিমি -৫,৫০০ কিমি) সমস্ত পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। চুক্তি সই করার চার বছরের মধ্যেই স্বেচ্ছায় ২,৭০০ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছিল রাশিয়া ও আমেরিকা। শুধু তাই নয়, একে অন্যের অস্ত্রাগার পরিদর্শন করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছিল এই চুক্তিতে। পৃথিবী জুড়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লাগাম টানতে এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও গত কয়েক বছর ধরেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।
আমেরিকার অভিযোগ, চুক্তির শর্ত অমান্য করে একের পর পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়ে ফেলছে রাশিয়া। যদিও বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে আমেরিকা। কিছু দিন আগেই নিজেদের বন্ধু দেশগুলির গোষ্ঠী ন্যাটোকে আমেরিকা কিছু নথি জমা দেয়। আমেরিকার দাবি, এসএসসি-৮ নামের একটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র শুধু বানানোই নয়, নির্দিষ্ট জায়গায় সেটি বসিয়েও দিয়েছে রাশিয়া। গত ডিসেম্বরেই ৬০ দিনের মধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ব্যবস্থা না নিলে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল আমেরিকা। সেই সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় শুক্রবারই এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় আমেরিকা। এর পরই শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানালেন, ‘‘আমেরিকা এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। তাই আমরাও এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি। ওদের শুভবুদ্ধির উদয় হলে আলোচনায় বসতেই পারে। আমরা দরজা খোলা রাখছি।’’
এই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়েই আপত্তি আমেরিকা সহ পশ্চিমী দেশগুলির। ছবি: এপি।
চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আরও বেশ কিছ অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র বানানোর কাজও শুরু করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ক্যালিবার নামে যে অত্যাধুনিক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়, সেই ক্ষেপণাস্ত্রেরই অন্য আর একটি মডেল, যা ভূমি থেকে উৎক্ষেপণ করা যাবে, তার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পুতিন। পাশাপাশি শব্দের থেকে পাঁচ গুন বেশি গতিসম্পন্ন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও তৈরি করবে মস্কো, এমনটাই জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন: চাইছি আমেরিকার বন্ধুত্ব, ট্রাম্পকে চিঠি চিনা প্রেসিডেন্টের
রাশিয়া ফের অত্যাধুনিক অস্ত্র বানাতে শুরু করলে তা ইউরোপের দেশগুলির জন্য বিপজ্জনক, এমনটাই মত পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞদের। ন্যাটো গোষ্ঠীভূক্ত দেশগুলির তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘এই সব নতুন রুশ ক্ষেপণাস্ত্র অত্যন্ত গতিশীল, পরমাণু অস্ত্রবাহী এবং বোঝার আগেই ইউরোপের যে কোনও শহরে আঘাত হানতে পারে। উৎক্ষেপণের পর এক লহমায় তা পৌঁছে যেতে পারে গন্তব্যে। পরমাণু অস্ত্রবাহী হওয়ায় এই যুদ্ধাস্ত্র আরও বিপজ্জনক ইউরোপের দেশগুলির কাছে।’’
আরও পড়ুন: গাইডোকে ট্রাম্পের ফোন, চাপে মাদুরো
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy