Advertisement
০৩ মে ২০২৪

আফ্রিকায় দাস বেচাকেনা হয় এখনও! ভয়ঙ্কর গল্প শোনালেন জুড

ফুটেজটা দেখে তিনশো বছরের পুরনো ক্রীতদাস ব্যবসার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল অনেকের। মার্কিন টিভি চ্যানেল আফ্রিকায় খুল্লমখুল্লা চলা এই ব্যবসার এমন ফুটেজ সামনে আনার পরে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টিকে ‘ফেক নিউজ়’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। 

নাইজিরিয়ার বাসিন্দা জুড ইকিউএনোবে। ছবি টুইটার।

নাইজিরিয়ার বাসিন্দা জুড ইকিউএনোবে। ছবি টুইটার।

বেনিন সিটি (নাইজিরিয়া)
সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪৮
Share: Save:

গত বছর নভেম্বরে ভাইরাল হয়েছিল ভিডিয়োটা। সস্তার কোনও মোবাইলে কাঁপা হাতে তোলা। লিবিয়ার ত্রিপোলি শহরের কোনও এক প্রান্তে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গদের। যে লোকটি ওই কৃষ্ণাঙ্গদের দাস হিসেবে বিক্রি করছে, সেই ব্যবসায়ী দর হাঁকছে, ‘‘এ খুব শক্তপোক্ত কাজের মানুষ। খেত-খামারের কাজও খুব ভাল পারে।’’ কুড়ির কোঠার কৃষ্ণাঙ্গ এক যুবক তখন ভয় ভয় চোখে এ-দিক ও-দিক দেখছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক দল লোকের কাছে ৪০০ ডলারে বিক্রিও হয়ে গেলেন তিনি।

ফুটেজটা দেখে তিনশো বছরের পুরনো ক্রীতদাস ব্যবসার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল অনেকের। মার্কিন টিভি চ্যানেল আফ্রিকায় খুল্লমখুল্লা চলা এই ব্যবসার এমন ফুটেজ সামনে আনার পরে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টিকে ‘ফেক নিউজ়’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কিন্তু নাইজিরিয়ার বাসিন্দা জুড ইকিউএনোবের কাহিনি সম্পূর্ণ অন্যকথা বলছে। জুড নিজেই এক সাক্ষাৎকারে শুনিয়েছেন তাঁর জীবনের সেই অধ্যায়, যা তিনি এখন পুরোপুরি ভুলে যেতে চান। যে গল্প বলে, ত্রিপোলির ওই ভিডিয়োয় বিক্রি হওয়া যুবকটি তিনিও হতে পারতেন। কোনও মতে সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজের দেশে ফিরতে পেরেছেন তিনি।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে একটা ছবি কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। তুরস্কের উপকূলে সমুদ্রের ধারে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এক শিশু। ঠিক যেন ঘুমোচ্ছে। শরণার্থী সঙ্কট যে আসলে কী, তা বুঝিয়ে দিয়েছিল আড়াই বছরের আলান কুর্দির সেই নিথর দেহ। তারও ঠিক এক বছর আগে থেকে আসলে শুরু হয়েছিল সঙ্কটটা। ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে ঢোকার ধুম পড়েছিল আফ্রিকার শরণার্থীদের। ছোট ছোট নৌকায় এক গাদামানুষ। মাঝেমধ্যেই যা উল্টে মৃত্যু হতশয়ে শয়ে শরণার্থীর। তাঁদের অনুপ্রবেশ আটকাতে কঠোর থেকে কঠোরতম নিয়মও আনতে শুরু করল ইউরোপের দেশগুলো। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে এত মানুষ আফ্রিকা ছেড়ে ইউরোপে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন, নাইজিরীয় যুবক জুড সে গল্পই বলেছেন।

দারিদ্র আর অনাহারে ধুঁকতে থাকা আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের দাস হিসেবে বিক্রি হওয়া কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। বরং লিবিয়া, নাইজিরিয়ার মতো দেশে ওটাই প্রচলিত। আরবের ধনী ব্যবসায়ীদের কাছে ওই কৃষ্ণাঙ্গদের চাহিদা প্রচুর। আর সেই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতেই নিজের শহর বেনিন সিটি ছেড়ে ইটালি চলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন জুড। চেয়েছিলেন একটু ভাল করে বাঁচতে। রেস্তরাঁর বয় হয়ে কাজ করেও নিজের আর পরিবারের জন্য কিছু সঞ্চয় করতে। কিন্তু দালাল চক্রের জালে জড়িয়ে লিবিয়ায় প্রায় বিক্রি হতে বসেছিলেন জুড। ছোট ছোট ট্রাকে মানুষ ঠেসে নাইজিরিয়া সীমান্ত পেরিয়ে প্রথমে লিবিয়া। সেখান থেকে সমুদ্র পেরিয়ে ইটালিতে পাকাপাকি ভাবে জুডকে পাঠানোর কথা বলেছিলেন সেই দালালরা। কিন্তু ইটালি পৌঁছনো তো দূর, লিবিয়ার সাভা শহরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছিলেন জুড। বন্দুক উঁচিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের তুলে নিয়ে যাওয়ার চলও রয়েছে সেখানে। চোখের সামনে নিজের তিন বন্ধুকে বিক্রি হয়ে যেতে

দেখেছন জুড। দালালদের হাত থেকে বাঁচতে মরুভূমির মধ্যে একটানা হেঁটে কোনও মতে বাঁচেন তিনি। তার পরেও প্রায় দাসবৃত্তি করে আড়াই বছর লিবিয়ায় কাটান জুড। তবে আরবের কোনও শেখের কাছে বিক্রি হতে হয়নি তাঁকে।

পরে সেখান থেকে নাইজিরিয়া ফিরে যাওয়ার সুযোগ আসে এক সময়। গত বছরের শেষে এক দিদির বাড়িতে ফিরে যান জুড। ভাল কোনও চাকরি জোটেনি এখনও। তবু দালালদের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য নিজের প্রতিবেশী আর চেনাজানা মানুষদের সতর্ক করেন জুড। রোজ, নিয়ম করে। তবু তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ও পথে পা বাড়ানো যে কী ভযঙ্কর অভিজ্ঞতা, তা যদি সবাই বুঝত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jude Ikuenobe Benin City Slavery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE