Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

শরণার্থী মার্জারকে ঘরে ফেরাল সোশ্যাল মিডিয়া

পথে কম জায়গায় থামতে হল? ইরাক থেকে গ্রিস। সেখান থেকে জার্মানি, জার্মানি থেকে নরওয়ে। পাক্কা দু’হাজার মাইল। নরওয়ের স্টেইনহের শহরেই কুনকুশ তার পরিবারকে আবার খুঁজে পেয়েছে! তার পাটকিলে রঙের চোখদু’টোতে অনেক দিন পরে আবার নিশ্চিন্দির ঝিলিক!

কুনকুশ। ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে

কুনকুশ। ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে

সংবাদসংস্থা
স্টাইনহের (নরওয়ে) শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৩৭
Share: Save:

স্কাইপ, ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ ছিল ভাগ্যিস! নইলে কি আর কুনকুশ ইরাক থেকে নরওয়ে পৌঁছতে পারত?

পথে কম জায়গায় থামতে হল? ইরাক থেকে গ্রিস। সেখান থেকে জার্মানি, জার্মানি থেকে নরওয়ে। পাক্কা দু’হাজার মাইল। নরওয়ের স্টেইনহের শহরেই কুনকুশ তার পরিবারকে আবার খুঁজে পেয়েছে! তার পাটকিলে রঙের চোখদু’টোতে অনেক দিন পরে আবার নিশ্চিন্দির ঝিলিক!

কুনকুশের বয়স তিন। জন্মের পর থেকে ইরাকের মসুল শহরেই বেড়ে উঠেছে সে। যে বাড়িতে থাকত, সেখানে গিন্নি মা বরাবর নিজের পাঁচ ছেলেমেয়ের সঙ্গে কুনকুশকে সমান আদরযত্ন করেছেন। দুধটা, মাছ-মাংসটা... অভাব হয়নি কোনও দিন। কখনও গিন্নি মা, কখনও অন্য বাচ্চাদের কোলে কোলে ঘুরে চেহারাটাও দিব্যি খোলতাই হয়েছিল। জাতে টার্কিশ ভ্যান কুনকুশকে দেখে সবর্তো ভাবেই হৃষ্টপুষ্ট সুখী বেড়াল বলে চেনা যেত।

কিন্তু এ সুখে বাদ সাধল ইসলামিক স্টেট। আইএস জঙ্গিদের লাগাতার হুমকির মুখে মসুল ছাড়তে বাধ্য হল কুনকুশের পরিবার। কুনকুশও তাদের সঙ্গেই শরণার্থীদের সারিতে দাঁড়িয়েছিল। হাজার হাজার শরণার্থীদের মতোই রবারের নৌকোয় চড়ে গ্রিসের দিকে পাড়ি দিয়েছিল। লেসবস-এ পৌঁছে ঘনিয়ে এল বিপদ। কী ভাবে যেন কুনকুশ তার বাড়ির লোকেদের হারিয়ে ফেলল। ম্যাও ম্যাও করে ঘুরে বেড়ায়, খুঁজে পায় না। কুনকুশের বাড়ির লোকও একে-ওকে জিজ্ঞেস করে হয়রান! কিন্তু শরণার্থী-উদ্বাস্তু পরিবার! তাদের তো থেমে থাকার জো নেই! ঈশ্বরের নাম নিয়ে এগিয়ে পড়লেন মা! তাঁর উপরে পাঁচ-পাঁচটি ছেলেমেয়েকে নিয়ে নিরাপদে নতুন দেশ খুঁজে নেওয়ার দায়িত্ব!

কুনকুশ লেসবসেই থেকে গিয়েছিল। ধুলোবালি মেখে তখন তার দুধসাদা রং গিয়েছে হারিয়ে! লেসবসে কুনকুশের জাতভাইয়েরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশায় মেতে উঠল। বেপাড়ায় এসে একা পড়লে যা হয় আর কী! ভাগ্যক্রমে কয়েকজন মৎস্যজীবী কুনকুশকে দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করেন। কুনকুশের নতুন নাম হয় ডিয়াস। গ্রিক ভাষায় ডিয়াস মানে দেবরাজ জেয়ুস!

উদ্ধার তো পেল কুনকুশ! স্থানীয় দু’একজন এও মনে করতে পারল যে, মসুল থেকে একটি পরিবারের সঙ্গে এসেছিল বেড়ালটা। কিন্তু এখন তারা কোথায়, সেটা কী ভাবে জানা যাবে? অ্যাশলে অ্যান্ডারসন নামে এক জন মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী লেসবসে শরণার্থীদের জন্য কাজ করছিলেন। তিনি তাঁর আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে অনলাইন প্রচারে নামলেন। ফেসবুকে ‘রিইউনাইট ডিয়াস’ নামে একটা কমিউনিটি খোলা হল। হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরতে লাগল ছবি। অনলাইন আবেদন করে কুনকুশের জন্য কিছু টাকাও তোলা হল। কুনকুশকে পাঠিয়ে দেওয়া হল বার্লিনে। জারি রইল খোঁজ-তালাশ। কমিউনিটি পেজ-এ লেখা হল, ‘ডিয়াস আজকাল আগুন পোয়ায় আর প্রচুর ঘুমোয়। যেটুকু সময় জেগে থাকে, একটানা বকবক করে!’ সংবাদমাধ্যমেও লেখাজোখা হল তাকে নিয়ে।

ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডের ওয়েবসাইটে গল্পটা পড়েছিল কুনকুশের পরিবার। তারা তত দিনে পৌঁছেছে নরওয়েতে। সেখান থেকে স্কাইপ মারফত বার্লিনে যোগাযোগ করলেন ওঁরা। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালবাসার দিনটিতেই ঘটনাটা ঘটল। জানা গেল ডিয়াস-এর আসল নাম কুনকুশ। বাকিটা আর না বললেও চলে! ইরাক থেকে বার্লিন আসার পরে নরওয়ে পৌঁছনোটা তো জলভাত, থুড়ি, মাছভাত! দু’পেয়েরা কাঁদছিল সবাই। কুনকুশ ও সব বোকা বোকা ব্যাপারে নেই। চেনা আদরের ছোঁয়া ফিরে পাওয়া গিয়েছে, জীবনে আর চিন্তা কী?!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cat Social Media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE