Advertisement
০১ মে ২০২৪
Elizabeth Parish

দুই গবেষকের দাবিদাওয়ায় অমরত্ব প্রত্যাশা 

বিশ্ব জুড়ে গবেষণাক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষণার ঝোঁক বিচার করে কর্দেরো এবং উডের পর্যবেক্ষণ, জরাকে রোগ হিসাবে বিবেচনা করা শুরু হয়েছে। তবে সেই বালাই কাটিয়ে ফেলা সময়ের অপেক্ষা।

An image of Paris

৫২ বছরের প্যারিশ। ছবি: টুইটার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৩ ০৯:৩৭
Share: Save:

সেই দিন অচিরেই আসতে চলেছে, যখন মৃত্যুর জন্য সব থেকে জরুরি হয়ে উঠবে আকুতি। তবে, অপঘাত ঘটলে অন্য কথা!

স্প্যানিশ ভবিষ্যচিন্তক হোসে লুইস কর্দেরো এবং ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ ডেভিড উড বছর পাঁচেক আগে ‘দ্য ডেথ অব ডেথ’ বা মরণের মৃত্যু নামে একটি বই লিখেছিলেন। অতিমারি পার করে এসে, গত মাসেই প্রকাশিত হয়েছে সেটির আন্তর্জাতিক সংস্করণ। আর নতুন করে শুরু হয়েছে চর্চা।

বিশ্ব জুড়ে গবেষণাক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষণার ঝোঁক বিচার করে কর্দেরো এবং উডের পর্যবেক্ষণ, জরাকে রোগ হিসাবে বিবেচনা করা শুরু হয়েছে। তবে সেই বালাই কাটিয়ে ফেলা সময়ের অপেক্ষা। তাঁদের মতে, ন্যানো টেকনোলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, নতুন করে কলা-কোষ তৈরির পদ্ধতি, স্টেম সেল চিকিৎসা, অর্গ্যান প্রিন্টিং, ঠান্ডায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষণের প্রযুক্তি আর জেনেটিক থেরাপির অগ্রগতি ২০৪৫ সালের মধ্যেই সভ্যতাকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।

দুই গবেষকের বক্তব্য, জরা কেবল জীর্ণ করে। ক্রোমোজমের টেলোমিয়ার বলে একটি অংশ হ্রাস পেতে থাকে। সেটিকে দীর্ঘায়িত করে বয়সকে উল্টো পথে হাঁটানোও সম্ভব। বার্সেলোনায় বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-র প্রৌঢ় গবেষক কর্দেরোর দাবি ছিল, তিরিশ বছর পরে চাইলে তিনি তরতাজা যুবক হয়ে উঠতে পারেন।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে আমেরিকার একটি জৈবপ্রযুক্তি সংস্থার কর্ণধার, ৪৪ বছর বয়সি এলিজ়াবেথ প্যারিশ নিজে দু’টি জেনেটিক ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর সংস্থার তৈরি দু’টি ওষুধ তিনি নিজেই নেন। সংস্থাটির দাবি, তার মধ্যে ‘মায়োস্ট্যাটিন ইনহিবিটর’ পেশির বয়সজনিত দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে পারে আর ‘টেলোমারেস জিন থেরাপি’র সাহায্যে কোষের বয়স কমিয়ে দেওয়া সম্ভব। ২০১৫ সালের পরে ২০২২ সালে ফের এই চিকিৎসা করান তিনি। প্যারিশের দাবি, প্রতি বছর গড়ে পাঁচ বছর করে বয়স কমছে তাঁর। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, জন্মসূত্রে ৫২ বছর বয়সি প্যারিশের এখন শারীরিক বয়স মাত্র ২৫।

কর্দেরোরা স্মরণ করিয়েছেন, ১৯৫১ সালে মৃত্যু হয়েছিল ক্যানসারে আক্রান্ত হেনরিয়েটা ল্যাকসের। অস্ত্রোপচারে বার করে আনা তাঁর টিউমারটি গবেষণাগারে এখনও সজীব। তাঁদের মতে, ক্যানসারের মতো ব্যাধি সারিয়ে দেওয়া এক দশকের মধ্যেই সম্ভবপর হতে পারে। গুগলের মতো তাবড় আন্তর্জাতিক সংস্থা অদূর ভবিষ্যতে চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁদের মতে, প্রাথমিক ভাবে এমন চিকিৎসা খরচবহুল হলেও বাজারের প্রবণতা অনুযায়ী তা ক্রমে নাগালে আসতে শুরু করবে। একটা পর্যায়ে পৌঁছে নতুন স্মার্টফোন ও নতুন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দরে বিশেষ ফারাক না-ও থাকতে পারে।

মানুষ অজর হতে শুরু করলেও জায়গার সঙ্কুলানে সমস্যা হবে না বলে মনে করেন কর্দেরোরা। জাপান বা কোরিয়ার মতো দেশে জন্মহার কমার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার পাশাপাশি তাঁরা দাবি করেছেন, তত দিনে মহাকাশে বসত গড়ে তোলাও শুরু হয়ে যাবে।

এত কিছুর পরেও ভবিষ্যতের পৃথিবীতে গৃহস্থের সংসারে এসে পড়তে পারে পড়শি দেশের ক্ষেপণাস্ত্র, হিংসার কোপ পড়তে পারে নিরীহের শরীরে অথবা ফুটফুটে শিশুকে পিষে দিতে পারে বেপরোয়া গাড়ির চাকা। অনেক পথ পার করেও অযাচিত এমন সমস্ত মৃত্যুর প্রতিকারের কোনও আলো চরাচরে এখনও পর্যন্ত নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Book Research
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE