Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Taliban 2.0

Taliban 2.0: বামিয়ান-কাণ্ড আর নয়? কাবুলের জাদুঘর রক্ষায় বাহিনী নিয়োগ করল তালিবান

২০০১ সালের মার্চে আফগানিস্তানের বামিয়ানের দেড় হাজার বছরের পুরনো দু’টি বিশালাকায় বুদ্ধমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল তালিবান জঙ্গিরা।

ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২১ ১৫:১১
Share: Save:

তালিবানের হামলায় গুঁড়িয়ে গিয়েছিল বামিয়ানের জোড়া বুদ্ধ মূর্তি। সেই সঙ্গে ধুলোয় মিশে গিয়েছিল আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক অধ্যায়ের মহামূল্যবান নিদর্শন। তবে ওই ঘটনার বছর কুড়ি পরে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর সে দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিল তালিবান।

আফগানিস্তানের জাতীয় সংগ্রহালয়ের ডিরেক্টর মহম্মদ ফাহিম রহিমি বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, কাবুলে জাতীয় সংগ্রহালয়ের বাইরে সশস্ত্র রক্ষী বসিয়েছে তালিবান। সেই সঙ্গে তাদের প্রতিশ্রুতি— আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নমুনাবহনকারী নিদর্শনগুলি রক্ষা করা হবে। এ নিয়ে বুধবার তালিবান আধিকারিকদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে তাঁর।

রহিমি জানিয়েছেন, কাবুলে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আফগানিস্তান ভবনের দরজায় রক্ষী মোতায়েন করেছে তালিবান। যাতে লুঠপাটের হাত থেকে রক্ষা করা যায় ওই সংগ্রহালয়ে রাখা মহামূল্যবান সামগ্রী। তবে কি বামিয়ানের ধ্বংসকে অতীতে নয়া রূপে তালিবানের ‘দ্বিতীয় সংস্করণ’? প্রশ্নগুলি উঠতে শুরু করলেও উত্তর নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।

তালিবান জঙ্গিদের হামলায় ধুলোয় মিশেছে আফগানিস্তানের ঐতিহ্য।

তালিবান জঙ্গিদের হামলায় ধুলোয় মিশেছে আফগানিস্তানের ঐতিহ্য। ছবি: রয়টার্স।

আশরফ গনি সরকারকে হঠিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই তালিবান রাজত্বে ধ্বংসলীলার আশঙ্কায় সে দেশের আমজনতা থেকে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলি। পাশাপাশি তাম্র যুগের সভ্যতার নিদর্শন-সহ বৌদ্ধ, হিন্দু এবং পুরনো ইসলামিক শাসনকালের আফগানি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংসেরও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শঙ্কার কারণও সঙ্গত। ২০০১ সালের মার্চে আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশের পার্বত্য গুহায় দেড় হাজার বছরের পুরনো দু’টি বিশালাকায় বুদ্ধমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল তালিবান জঙ্গিরা। তার আগে গত শতকের নয়ের দশকে গৃহযুদ্ধেও কম ক্ষয়ক্ষতি করেনি তারা।

ছবি: পিটিআই।

এ বার তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে ধ্বংসলীলার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন সাংস্কৃতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে ক্ষমতা দখলের পথে যুদ্ধের প্রতিরোধ সে ভাবে না হওয়ায় এ বার রক্তক্ষয় তুলনামূলক ভাবে কম হয়েছে। রহিমি বলেন, ‘‘(ক্ষমতা দখলের জন্য) লড়াই হলে হয়তো কাবুল-সহ দেশ জুড়ে বহু সৌধ ধূলিসাৎ হয়ে যেত। আমরা ভাগ্যবান যে দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও সে ভাবে প্রাণহানি বা ধ্বংসলীলা দেখতে হয়নি।’’ রক্তক্ষয় ছাড়াও দেশের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলিও যে রক্ষা পেত না, তা ভালই জানেন রহিমি। তা সত্ত্বেও আশঙ্কা যাচ্ছে না তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের (সংগ্রহালয়ের) কর্মী এবং নিদর্শনগুলির সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা কমেনি।’’

প্রাণ হাতে করে দেশ ছাড়ার ভিড়ে ধরা পড়েছে তালিবানের বিরুদ্ধে আতঙ্কের ছবি।

প্রাণ হাতে করে দেশ ছাড়ার ভিড়ে ধরা পড়েছে তালিবানের বিরুদ্ধে আতঙ্কের ছবি। ছবি: রয়টার্স।

তবে আফগানিস্তানের জাতীয় সংগ্রহালয়ের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও তালিবানি রাজত্বে চিন্তিত হওয়ার কারণ কম নয়। নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কাবুলের একাধিক খণ্ডচিত্রে শিউরে উঠেছে বিশ্ব। প্রাণ হাতে করে দেশ ছাড়ার ভিড়ে ধরা পড়েছে তালিবানি শাসকের বিপরীতে আতঙ্কের ছবি। আমজনতা ছাড়াও ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে দেশের বহুমূল্য নিদর্শনগুলিও। শুধুমাত্র কাবুলের জাতীয় সংগ্রহালয়েই রয়েছে ৫০ হাজারের বেশি প্রত্নসামগ্রী। সংগ্রহালয়ের আধিকারিকদের দাবি, ২০০১ সালে এই সংগ্রহালয় থেকে বহু মূল্যবান সামগ্রী লুঠপাট করেছিল তালিবান জঙ্গিরা।

প্রশ্ন উঠেছে, ইসলামের দোহাই দিয়ে বামিয়ানের মূর্তি ধ্বংসকারী তালিবানের কোপ থেকে বাঁচানো যাবে কি বৌদ্ধযুগের প্রাচীন মূর্তি, সৌধগুলি? তবে গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমে তালিবান মুখপাত্র সুহেল শাহিনের আশ্বাস, ‘‘আফগানিস্তানের বৌদ্ধদের স্থানগুলির (ধ্বংস হওয়ার) কোনও ঝুঁকি নেই।’’ যদিও সেই আশ্বাস সত্ত্বেও আফগানিস্তানের জৌজান প্রদেশের শেবেরগানের বেগা এলাকায় একটি পার্কে একটি মূর্তি থাকার জন্য তা জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তালিবানের বিরুদ্ধে।

সাংস্কৃতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে আঘাত হানলে বিশ্বের দরবারে তাদের ভাবমূর্তি যে উজ্জ্বল হবে না, তা বেশ বুঝতে পারছে তালিবান। যদিও শঙ্কা কাটেনি। অ্যালায়েন্স ফর দ্য রেস্টোরেশন অব কালচারাল হেরিটেজ (এআরসিএইচ)-এর ডিরেক্টর শেরিল বেনার্ডের মতো বিশেষজ্ঞের মতে, ‘‘সকলেই এখন পরিস্থতির উপর নজর রাখছেন। তবে সবচেয়ে বড় আশঙ্কার কথা, তালিবানের মধ্যে এখনও কয়েক জন ধ্বংসলীলা শুরু করে দিতে পারে। যদিও আশ্চর্যজনক ভাবে এখনও পর্যন্ত ওরা (তালিবান) শৃঙ্খলাবদ্ধ রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE