Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রশ্নের মুখে তাইল্যান্ডের মঠ

৪০টি বাঘছানার দেহ টাইগার টেম্পলে

বন্ধ হয়ে যেতে পারে তাইল্যান্ডের জনপ্রিয় ‘টাইগার টেম্পল’! বেআইনি ভাবে প্রজনন, পাচার আর পশু নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ আগেই ছিল। এ বার তাইল্যান্ডের কাঞ্চাবুড়ি প্রদেশের ওই বৌদ্ধ মঠে মিলেছে চল্লিশটি বাঘছানার মৃতদেহ। আর তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। যদিও পাচার বা নির্যাতনের যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন মঠ কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের একটি সূত্রে খবর, আইনি পদক্ষেপ মেনে মঠটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সেটি বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে।

মৃত বাঘের ছানাদের উদ্ধার হওয়া দেহ। ছবি: রয়টার্স।

মৃত বাঘের ছানাদের উদ্ধার হওয়া দেহ। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
ব্যাঙ্কক শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০২:৫৮
Share: Save:

বন্ধ হয়ে যেতে পারে তাইল্যান্ডের জনপ্রিয় ‘টাইগার টেম্পল’!

বেআইনি ভাবে প্রজনন, পাচার আর পশু নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ আগেই ছিল। এ বার তাইল্যান্ডের কাঞ্চাবুড়ি প্রদেশের ওই বৌদ্ধ মঠে মিলেছে চল্লিশটি বাঘছানার মৃতদেহ। আর তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। যদিও পাচার বা নির্যাতনের যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন মঠ কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের একটি সূত্রে খবর, আইনি পদক্ষেপ মেনে মঠটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সেটি বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে।

ব্যাঙ্ককের পশ্চিম দিকে অবস্থিত ওয়াট ফা লুয়াং তা বু ইয়ান্নাসাম্পান্ন নামে ওই মঠে মানুষের সঙ্গেই থাকে ১৩৭টি বাঘ। তার মধ্যে রয়েছে কয়েকটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারও। মঠের পোষ্যদের দেখতে বছর ভর সেখানে ভিড় জমান পর্যটকরা। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে সোমবার থেকে তাইল্যান্ডের বন দফতর ‘ডিপার্টমেন্ট অব ন্যাশনাল পার্কে’র (ডিএনপি) উদ্যোগে মঠ থেকে বাঘগুলিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়। অভিযানের শুরুতেই বাঘছানার দেহ উদ্ধার হওয়ায় নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই মঠটি বন্ধ করে দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ডিএনপি-র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল আদিসন নুচদামরং জানিয়েছেন, মঠের রান্নাঘরের একটি ফ্রিজার থেকে দেহগুলো মিলেছে। তাঁর কথায়, ‘‘নিশ্চয়ই কোনও বিশ্বাস থেকে মঠে সন্ন্যাসীদের সঙ্গে বাঘগুলোকে রাখা হতো। কিন্তু সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’’ বনকর্মীরা জানিয়েছেন, তিন দিনে তড়িঘড়ি ৫২টি বাঘকে সেখান থেকে সরিয়ে পশু-আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এখনও মঠেই রয়েছে ৮৫টি বাঘ। চলতি সপ্তাহে তিনশোরও বেশি কর্মীর সাহায্যে বাঘগুলিকে সরানোর আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। তবে মঠ কর্তৃপক্ষ এই অভিযানে কোনও সহযোগিতা না করায় বাঘগুলোকে সরাতে আরও একটু বেশি সময় লাগতে পারে বলেও জানিয়েছেন ডিএনপি-র এক শীর্ষকর্তা।

প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে প্রথম থেকেই বিরোধিতা করছে মঠ। বাঘগুলোকে সরানোর কথা বলতেই পরোয়ানা দেখতে চাওয়া হয়। এই নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে পাল্টা আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার কথাও ভাবছেন মঠ কর্তৃপক্ষ। গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে মঠের তীব্র টানাপড়েন শুরু হয়েছে।

তবে মঠটিতে শুধু বাঘই নয়, আশপাশের জঙ্গলের বহু পশুই সেখানে মানুষের সঙ্গে থাকে। বাঘছানার দেহ উদ্ধারের পরে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সেই পশুগুলির নিরাপত্তা নিয়েও। মঠের বিরুদ্ধে ওঠা পাচার ও নির্যাতনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেই ২০০১ সাল থেকেই তাইল্যান্ড সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল মঠের। মঠ থেকে সরিয়ে বাঘগুলিকে চিড়িয়াখানা বা বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে আগেও বহু বার আদালতে সওয়াল করেছে প্রশাসন। কিন্তু তা করা যায়নি। সম্প্রতি, পশুগুলিকে রেখে দেওয়ার জন্য মঠ ও সংলগ্ন খাঁড়ি-জঙ্গলকে চিড়িয়াখানার তকমা দেওয়ার জন্যও মঠ কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই বাঘগুলিকে সরানোর অভিযান শুরু হয়। নির্যাতনের অভিযোগ ও বাঘের দেহ উদ্ধারের পর মঠটিকে ‘পশু-বিরোধী’ তকমা দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে। পর্যটকদের জন্য আপাতত মঠটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বাঘগুলোকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং মৃতদেহ উদ্ধারের পর ‘টাইগার-টেম্পল’ নামে জনপ্রিয় ওই মঠের শুধু নামই নয়, অস্তিত্বই বিপন্ন! যদিও গত কাল পর্যন্ত প্রশাসনের অভিযানের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মঠটির ফেসবুক পেজে একাধিক ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয়, মঠেই পশুগুলি নিরাপদ। প্রশাসনিক অভিযানে আহত হচ্ছে বাঘগুলো। তবে আজ, বাঘছানার দেহ উদ্ধারের পর কোনও মন্তব্য করেননি মঠ কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

thailand Tiger dead freezer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE