উশিয়ানে পাহাড়ের ঢালে চাষ চা পাতার।
সব সময়েই সে থাকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। নাগালের বাইরে। দামের নিরিখে, গুণমানের নিরিখে।
সে যে সোনার চেয়েও দামি!
কিন্তু খুব যে ‘কেউকেটা’ কিছু, তা-ও নয়। আদতে সে এক ধরনের চা পাতা।
আজ থেকে বছর চোদ্দ আগে ওই ২০ গ্রাম ওজনের চা পাতা কিনতে পকেট থেকে বের করতে হত এক লক্ষ আশি হাজার ইউয়ান (চিনা মুদ্রা)। বা, ২৮ হাজার মার্কিন ডলার।
চিনের বহু শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী চা পাতা ‘দো হং পাও’-এর কথা বলছি। বিশ্বে যত রকমের দামি চা পাতা রয়েছে, ‘দো হং পাও’ তাদের মধ্যে সব সেরা। তার যে এত দর-দাম, তার জন্য অন্তত দালাল, ফোড়ে বা মুনাফাবাজদের কোনও হাতযশ নেই! সবটুকুই তার নিজের কৃতিত্ব! তার গুণমান। তাকে সর্বত্র পাওয়াও যায় না। এমনকী, তার ‘জন্মভূমি’ চিনেরও সব জায়গায় ওই চা গাছ হয় না। হয় শুধুই দক্ষিণ চিনের ফুজিয়ানে, নদী-লাগোয়া উয়িশান শহরে।
গোটা ফুজিয়ান জুড়েই ছড়ানো ‘দো হং পাও’ চা বাগান।
‘দো হং পাও’-এর কী কী গুণ রয়েছে?
চিনের এক চা বিক্রেতার কথায়, ‘‘গরীব মানুষই চায়ের কদর করে বেশি। সেই গরীব মানুষের কাছে ‘দো হং পাও’-এর স্বাদটা যেন অমৃত। কিন্তু সেটা কেনার রেস্তো তাঁদের পকেটে থাকে না। ‘দো হং পাও’ কিনতে পারেন রাজা, মহারাজারা। কিন্তু এই চা পাতার হৃদয়টা একেবারে ভগবান বুদ্ধের মতো। যে গরীব, বড়লোক- সকলকেই আনন্দ দেয়।’’
আরও পড়ুন- লিফটে অশালীন আচরণ, মোক্ষম জায়গায় লাথি মহিলার
চিনে চা খাওয়ার অভ্যাসটা আজকের নয়। প্রায় হাজার দেড়েক বছরের পুরনো। ‘ফ্রেঞ্চ ওয়াইন’ যেমন ফ্রান্সে বহু শতাব্দীর ঐতিহ্য। ‘দো হং পাও’ নামে নানা রকমের চা এখন চিনের বিভিন্ন প্রান্তে চলে। চলে অন্যান্য দেশেও। কিন্ত আদত ‘দো হং পাও’ প্রজাতির চা গাছ উত্তরোত্তর বিরল হয়ে পড়ছে। এমনকী, ফুজিয়ানের উশিয়ান শহরেও তা এখন আর ততটা সহজলভ্য নয়।
সেই ‘দো হং পাও’-এর জন্মভূমি উশিয়ান শহর।
১৮৪৯ সালে ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ রবার্ট ফরচুন চেষ্টা করেছিলেন, ওই চা পাতা তাঁদের দেশে ফলাতে। ওই চা পাতা নিয়ে যাওয়ার জন্য ফরচুন এসেছিলেন উশিয়ানে। ওই সময় ভারতে তাঁদের বড় উপনিবেশ ছিল বলে তাঁরা চেয়েছিলেন, ভারতে ওই চা পাতা ফলাতে। কিন্তু তাঁরা পারেননি। কারণ, উশিয়ানের মাটি ছাড়া আর কোনও জায়গাতেই ওই চা পাতা ফলানো গিয়েছে বলে এখনও জানা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy