Advertisement
০৫ মে ২০২৪
International News

’৭১-এ প্রতিশ্রুতি ভেঙে হঠাৎ হামলা পাকিস্তানের: বিস্ফোরক হেনরি কিসিঞ্জার

আবার বড় ধাক্কা খেল পাকিস্তান। আমেরিকার প্রাক্তন বিদেশ সচিবের একটি সাক্ষাৎকার ফের মুখ পোড়ালো পাকিস্তানের।

নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে হেনরি কিসিঞ্জার। এ ছবি অবশ্য ১৯৭৪ সালের, অর্থাৎ ১৯৭১ সালের যুদ্ধের তিন বছর পরের। যুদ্ধের আগের ইন্দিরা-কিসিঞ্জার সাক্ষাৎ কিন্তু খুব মধুর ছিল না। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে হেনরি কিসিঞ্জার। এ ছবি অবশ্য ১৯৭৪ সালের, অর্থাৎ ১৯৭১ সালের যুদ্ধের তিন বছর পরের। যুদ্ধের আগের ইন্দিরা-কিসিঞ্জার সাক্ষাৎ কিন্তু খুব মধুর ছিল না। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ১৮:২৭
Share: Save:

আবার বড় ধাক্কা খেল পাকিস্তান। আমেরিকার প্রাক্তন বিদেশ সচিবের একটি সাক্ষাৎকার ফের মুখ পোড়ালো পাকিস্তানের। ‘দ্য আটলান্টিক’ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমেরিকার প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন বিদেশ সচিব হেনরি কিসিঞ্জার দাবি করেছেন, ১৯৭১ সালে আমেরিকাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটে পাকিস্তান আচমকা ভারতে আক্রমণ করেছিল। আমেরিকা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষেই ছিল, সাক্ষাৎকারে এমনও জানিয়েছেন কিসিঞ্জার।

সাক্ষাৎকারে কিসিঞ্জার জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে কথা দিয়েছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দেওয়া হবে। ১৯৭২ সালের মার্চের মধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীনতা বা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দিয়ে দেওয়া হবে বলে পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, দাবি কিসিঞ্জারের। কিন্তু বাস্তবে যে তা হয়নি, ইতিহাস তার সাক্ষী। ১৯৭১-এর ৩ ডিসেম্বর আচমকা ভারতের বিমানঘাঁটিগুলিতে পাকিস্তান এয়ার ফোর্স বোমাবর্ষণ করতে শুরু করে। সাক্ষাৎকারে কিসিঞ্জারের ইঙ্গিত, পাকিস্তান এই রকম পদক্ষেপ নিতে চলেছে, তা আমেরিকা আগে বুঝতে পারেনি। আগ বাড়িয়ে পাকিস্তান বোমাবর্ষণ শুরু করায় ভারত স্বাভাবিক ভাবেই প্রত্যাঘাত করে এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকে সরাসরি সাহায্য করতে ময়দানে নেমে পড়ে— এই রকম মন্তব্যও করেছেন হেনরি কিসিঞ্জার।

১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের দূত হয়ে আমেরিকার তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ভারতেও এসেছিলেন। তদানীন্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে কিসিঞ্জারের বৈঠকও হয়। বলাই বাহুল্য, সে বৈঠক ভারতের পক্ষে খুব ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ সে সময় আমেরিকা এবং পাকিস্তান পরস্পরের ঘোষিত মিত্র ছিল। ভারত-পাক বিবাদে আমেরিকা সে সময় পাকিস্তানের পক্ষেই দাঁড়িয়েছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশ) সাধারণ মানুষের উপর পাক সেনা যে অত্যাচার চালাচ্ছিল, তার বিরুদ্ধেও আমেরিকা সে সময় কিছুতেই মুখ খোলেনি।

পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের দরজার খোলার পর মাও জে দং এবং চৌ এন লাই-এর সঙ্গে হেনরি কিসিঞ্জার। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

‘দ্য আটলান্টিক’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিসিঞ্জার কিন্তু স্বীকার করে নিয়েছেন, পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন চলছিল এবং আমেরিকা সে প্রসঙ্গে মুখ খুলতে পারেনি। আমেরিকার এই প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন বিদেশ সচিব জানিয়েছেন, পাকিস্তানের মাধ্যমে সে সময় চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছিল আমেরিকা। সেই স্বার্থেই প্রকাশ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা আমেরিকার পক্ষে কঠিন ছিল বলে কিসিঞ্জার জানিয়েছেন। তবে তাঁর দাবি, পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় চিন-আমেরিকা কূটনৈতিক সম্পর্কের দরজা খুলে যেতেই, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে ইসলামাবাদকে চাপ দিতে শুরু করেছিল ওয়াশিংটন। তখনই নাকি পাকিস্তান আমেরিকাকে কথা দেয়, পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দেওয়া হবে। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি রাখেনি। কিসিঞ্জারের দাবি অন্তত সে রকমই।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের পরমাণু বোমা কোন কোন ঘাঁটিতে? মার্কিন রিপোর্টে তথ্য ফাঁস

হেনরি কিসিঞ্জারের এই সাক্ষাৎকার কিন্তু পাকিস্তানের অস্বস্তি নিঃসন্দেহে বাড়িয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘ মিত্রতার ইতিহাস থাকলেও, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ইতিহাসও যে দীর্ঘ, তা কিসিঞ্জার স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Henry Kissinger USA pakistan India 1971 war
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE