Advertisement
E-Paper

আয়লানকে ভুলতে শেরওয়ানকে কোলে তুলে নিলেন টিমা

সোমবার রাতে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে এসে পৌঁছল কুর্দি পরিবারের একাংশ। মহম্মদ, শার্গো, হাভিন, রেজান আর শেরওয়ানকে নিয়ে কানাডায় এলেন মহম্মদ কুর্দি। সম্পর্কে আয়লানের কাকা। এলেন তাঁর বোন টিমা কুর্দির কাছে।

শর্মিষ্ঠা গোস্বামী

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৭
ভ্যাঙ্কুভার বিমানবন্দরে শেরওয়ানের সঙ্গে টিমা কুর্দি। — রয়টার্স

ভ্যাঙ্কুভার বিমানবন্দরে শেরওয়ানের সঙ্গে টিমা কুর্দি। — রয়টার্স

তিন বছরের আয়লান কুর্দি পারেনি। তার খুড়তুতো ভাই, পাঁচ মাসের শেরওয়ান পেরেছে। শেরওয়ানকে অবশ্য নৌকো চড়ে সমুদ্রে পাড়ি দিতে হয়নি। বাবা-মার সঙ্গে নিরাপদে সে এসে পৌঁছেছে কানাডা।

সোমবার রাতে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে এসে পৌঁছল কুর্দি পরিবারের একাংশ। মহম্মদ, শার্গো, হাভিন, রেজান আর শেরওয়ানকে নিয়ে কানাডায় এলেন মহম্মদ কুর্দি। সম্পর্কে আয়লানের কাকা। এলেন তাঁর বোন টিমা কুর্দির কাছে।

লাল জামা, নীল প্যান্ট পরা ছোট্ট ছেলেটার নিথর দেহ উপুড় হয়ে পড়ে আছে তুরস্কের সমুদ্রের তীরে— সারা বিশ্বের সংবাদ মাধা়মে এই ছবিটা দেখে বুক ভেঙে যায়নি, এমন মানুষ বোধ হয় কমই। গাদাগাদি করে একটা নৌকোয় চড়ে তুরস্ক থেকে গ্রিসে যাওয়ার সময় জলে ডুবে যায় সেই নৌকো। মারা গিয়েছিলেন নৌকোর বেশির ভাগ শরণার্থীই। তাদেরই এক জন ছিল তিন বছরের আয়লান কুর্দি। আয়লান, তার পাঁচ বছরের দাদা গালিব এবং তার মা রেহানা— তিন জনেরই নৌকো উল্টে মৃত্যু হয়। শুধু আয়লানের বাবা আবদুল্লা বেঁচে যান। পশ্চিমি দুনিয়ার সংবাদ মাধ্যমে আয়লানের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পরে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের অনেক দেশই সিরীয় শরণার্থীদের জন্য সাময়িক ভাবে হলেও তাদের দরজা খুলে দেয়।

নির্বাচনের কিছু দিন আগে কানাডার লিবারেল পার্টিও তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে জানিয়েছেল, ক্ষমতায় এলে তারা ২৫ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে কানাডায় প্রবেশাধিকার দেবে। সেই প্রতিশ্রুতি মতো গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় কানাডার বিমানবন্দরগুলোতে নামছেন সিরীয় শরণার্থীরা। বেশির ভাগ শরণার্থীকেই কেউ ব্যক্তিগত ভাবে ‘স্পনসর’ করেছেন। এমনই শরণার্থী আলানের কাকা ও তাঁর পরিবার। আলানের পিসি টিমা কুর্দি বহু বছর ধরেই কানাডার বাসিন্দা। তবে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে হারিয়ে কানাডায় এসে নতুন ভাবে বাঁচার ইচ্ছে নেই আবদুল্লার। তিনি থেকে গিয়েছেন সিরিয়াতেই। টরন্টো, মন্ট্রিয়ল আর ভ্যাঙ্কুভারে এখনও পর্যন্ত যাঁরা এসে পৌছেছেন, তাঁদের জন্য ঢালাও অভ্যথর্নার আয়োজন করেছে কানাডার জাস্টিন ট্রুডোর নতুন সরকার। সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ জামাকাপড়, বিশেষ করে কানাডার হাড়কাঁপানো ঠান্ডার জন্য পোশাক, খাবার, খেলনা— সব কিছু অঢেল ভাবে দিচ্ছেন। অনেকে আবার নিজের বাড়ির দরজা খুলে দিয়েছেন শরণার্থীদের কিছু দিন থাকতে দিতে।

যেমন, টরন্টোর কাছের ছোট্ট শহর ইউনিয়নভিলের কা়লাওয়ে পরিবার। গারেথ ও ডেনা নিজেরা ও বন্ধুবান্ধবের সাহায্য নিয়ে হাজার তিরিশেক ডলার সংগ্রহ করেছেন একটি সিরীয় পরিবারকে স্পনসর করার জন্য। ক’দিন আগে এসে পৌঁছেছেন পাঁচ সন্তান-সহ এক সিরীয় মহিলা। মহিলার স্বামীকে তিন বছর আগে জঙ্গিরা অপহরণ করে খুন করে। কালাওয়েদের নিজেদের ছয় সন্তান, তার সঙ্গে সিরীয় পরিবারটির আরও পাঁচটি ছোট ছেলেমেয়ে। ভাষা কোনও বাধাই হয়নি এই এগারোটি শিশুর। রান্নাঘরে ডেনাকে সাহাযা় করছেন সিরীয় মহিলা। সিরীয় রান্নার পদ শিখে নিচ্ছেন ডেনা। বড়দিনের সকালে গির্জায় প্রার্থনার পরে সবাই মিলে স্থানীয় একটি মসজিদে গিয়েছেন। নতুন পরিবারের যাতে কোনও সময় নিজেদের অবাঞ্ছিত মনে না করে, তার জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না গারেথ ও ডেনা।

ফেব্রুয়ারির মধ্যে ২৫ হাজার শরণার্থীকে কানাডায় আশ্রয় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ট্রুডোর সরকারের। প্রথমে ঠিক ছিল ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ হাজার শরণার্থীকে আনা হবে। কিন্ত বিভিন্ন কারণে সংখ্যাটা এখনও তার চেয়ে বেশ কম। কানাডার অভিবাসন ও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত দফতরের মন্ত্রী জন ম্যাকালাম জানিয়েছেন যে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁরা ১০ হাজার শরণার্থীকে বৈধ ভাবে কানাডায় বসবাস করার জন্য তাঁদের ‘পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি’র আবেদনে চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেবেন। কিন্তু অত জন কানাডায় প্রবেশ করতে হয়তো পারবে না, কারণ জর্ডন, লেবানন আর তুরস্কের শিবিরে ছড়িয়ে থাকা শরণার্থীরা অত তাড়াতাড়ি গুটিয়ে আসতে পারবেন না। তা ছাড়া, অনেক জায়গায় রাষ্ট্রপুঞ্জের কোনও এজেন্সি না থাকায়, শরণার্থীদের সাহাযা় করার কেউ নেই। শরণার্থীদের নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর এই নীতির অবশ্য কঠোর সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। এখন যারা প্রধান বিরোধী দল, সদ্য ক্ষমতা হারানো সেই কনজারভেটিভদের একাংশ মনে করে ট্রুডো কানাডায় আইএসের ঢোকার রাস্তা খুলে দিয়েছেন। কানাডা তো অভিবাসীদেরই দেশ! কিন্তু এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিবাসীদের মুসলিম-বিদ্বেষের মুখে পড়তে হচ্ছে। টরন্টোর রাস্তায় বা সাবওয়েতে হিজাব পরা বেশ কয়েক জন মুসলিম মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোয় বিশেষ বাড়তে পারেনি এই ধরনের ঘটনা।

আয়লান আর গালিবকে পাননি। এখন শেরওয়ানকে পেয়ে সেই যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমেছে টিমা কুর্দির। তাঁর পার্লারে তাঁকে সাহায্য করতে এসে গিয়েছে তাঁর এক ভাই। সঙ্গে পাঁচ ভাইপো-ভাইঝি। তুরস্কের শরণার্থী শিবিরের স্মৃতি মুছিয়ে ওদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাটাই এখন টিমা কুর্দির বড় চ্যালেঞ্জ।

International Refugee Aylan Kurdi Syria
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy